Alapon

একবার ভেবে দেখুন, সন্তান হিসেবে বাবা-মায়ের জন্য কী করেছেন?


আপনার বাবা যদি বেঁচে থাকেন এবং তিনি যদি বয়স্ক হোন কিংবা চাকরি বা ব্যবসা থেকে রিটায়ার্ড করে থাকেন, তবে আপনার উচিত হবে অত্যন্ত সম্মানজনকভাবে প্রতিমাসে আপনার বাবাকে কিছু টাকা তার হাত-খরচ এর জন্য দেয়া। এই টাকা দিয়ে তিনি হয়তো চায়ের দোকানে বসে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে চা খাবেন কিংবা তার নাতি-নাতনীদের নিয়ে যখন হাটতে বের হবেন, তখন তাদের চকোলেট, চিপস ইত্যাদি কিনে দিবেন।

এই যে সামান্য কিছু টাকা, আপনার বাবার হাতে দিলেন, এতে দেখবেন তার মনটা অনেক বড় থাকবে। টাকা-পয়সা হচ্ছে এমন জিনিস, যা হাতে না থাকলে মন অনেক ছোট হয়ে যায়। আর, যিনি চাকরি-ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করেছেন, তাকে যদি বার্ধক্যে পৌছানোর পর হাত খালি হয়ে থাকতে হয়, সেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

যাদের মা-বাবা সরকারি চাকরি করেন, সরকারি চাকরি শেষে তারা পেনশন ও অন্যান্য কিছু খাতের টাকা পান। আপনি যতই মা কিংবা বাবা ভক্ত হোন না কেন, আপনার উচিত হবেনা এই টাকাটা চাকরি, ব্যবসা, কিংবা বিদেশ যাবার নাম করে নিয়ে নেওয়া। এই টাকা ভবিষ্যতে আপনার মা-বাবার ব্যক্তিগত চিকিৎসা ও অন্যান্য খাতে খরচ হবে।

এটাও অনেকের ক্ষেত্রে সত্য যে আপনার মা-বাবা হয়তো একজন ভালো মা-বাবা না। মা-বাবা হিসাবে তাদের যেই দায়িত্ব পালন করার কথা, যতটুকু আদর-স্নেহ আপনার পাবার কথা, সেটুকু আপনি পাননি। তারপরও, আপনি যেহেতু একজন শিক্ষিত, সভ্য, এবং দায়িত্বশীল মানুষ, আপনার উচিত হবে মা-বাবার প্রতি আপনার দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো পালন করা। আপনি শৈশবে, কৈশোরে যতটুকু অসহায় ছিলেন, বার্ধক্যে আপনার মা-বাবাও ততটুকু অসহায় হয়ে গেছেন। আপনার উচিত হবেনা, একজন অসহায় মানুষের অসহায়ত্ব এর সুযোগ নেওয়া।

আমাদের দেশে একটা ব্যাপার দিনদিন বাড়ছে। সেটা হচ্ছে, ইউরোপীয় সংস্কৃতির খারাপ দিকটা দিনদিন আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ ঘটছে। এটাকে আটকানোর উপায় নেই। প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, "ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়"। এরই ফলশ্রুতিতে বয়স্ক মানুষটির প্রতি সন্তানদের দায়িত্বশীল ভূমিকা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। আবার, আগেরকার সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ের অনেক কর্মজীবিদের 'প্রকৃত আয় (Real Income)' কমে যাচ্ছে।

এখনকার সময়ের মানুষের আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাদের চাহিদা, সেই চাহিদা মেটানোর জন্য বেড়েছে ব্যয়। ফলে অনেক মানুষই মাসের শেষে টাকার একটা সংকট অনুভব করে। ফলে, ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেক সন্তানের পক্ষে সম্ভব হয়না, তাদের বৃদ্ধ মা-বাবার হাতখরচ এর জন্য আলাদা কিছু টাকা বরাদ্দ রাখার। এই অবস্থায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের বৃদ্ধ মা-বাবার মনো-দৈহিক সুরক্ষার জন্য।

প্রথমত, বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা চাকরি শেষে যে পেনসন পান, বেসরকারি খাতেও এই ব্যবস্থা চালু করা উচিত। সেইসাথে বেসরকারি খাতের চাকরি গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, সরকার যে বয়স্ক ভাতা চালু করেছে, সেখানে সুবিধাভোগীর পরিমাণ এবং একইসাথে টাকার পরিমাণ বাড়ানো উচিত।

তৃতীয়ত, সরকারি ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত বৃদ্ধনিবাস তৈরি করা উচিত এবং সেগুলোতে খাদ্য, চিকিৎসা, এবং বিনোদন এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা উচিত।
চতুর্থত, প্রত্যেকটা সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা ইউনিট গঠন করা উচিত।

পঞ্চমত, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিটা মহল্লায় বয়স্কদের জন্য ক্লাবঘর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে বয়স্করা পত্রিকা পড়বে, ইনডোর গেমস খেলবে, আড্ডা দিবে, চায়ের কাপে ঝড় তুলবে । এতে তাদের মন যথেষ্ট প্রাণচঞ্চল থাকবে।

পরিশেষে আপনাকে উদ্দেশ্য করে একটা কথা বলি, সরকার আমাদের বৃদ্ধ মা-বাবাদের সুরক্ষা দেবার জন্য অনেক কিছুই করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু, আপনার মা-বাবার সুরক্ষা এবং মনো-দৈহিক সুস্থতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি সন্তান হিসাবে তার জন্য কি করছেন, সেটা।

- সংগৃহিত

পঠিত : ৩৯৩ বার

মন্তব্য: ০