Alapon

নারীর পর্দা ও ভন্ড সেক্যুলারদের দ্বিচারিতা...



[১]
আমি ছোটকালে বাড়ির বাইরে খেলাধুলা করতাম। বাড়ির ফরমায়েশি কাজ করার জন্য আম্মা আমাকে ডাকতেন। আমার নাম ধরে উচ্চ শব্দে ডাকতেন না। বলতেন না, “খালিদ! বাড়িতে আসো!!” তিনি হাত দ্বারা শব্দ করতেন (হাত তালি দিয়ে)। আর হাতের শব্দেই বুঝে যেতাম আম্মা আমাকে ডাকছেন। আমি একদম ছোটকাল হতেই, মানে ৪-৫ বছর বয়স থেকেই উনার এই ডাক বুঝতাম। এবং সাথে সাথেই দৌড়ে বাড়িতে চলে যেতাম। এমন একটা দিনও যায় নি, যেদিন আমার মায়ের হাত তালি শুনেছি আর উপেক্ষা করে খেলা ধুলায় মত্ত থেকেছি। যদিও আমি তখন একদম ছোট ছিলাম। আমার আম্মা আমাকে, আমার বড় ভাইকে এভাবেই গড়ে তুলেছিলেন, একদম ছোট থেকেই।

আমার আম্মা খুব আস্তে, ধীরে সুস্থে কথা বলতেন। আমার আব্বার ফোন কখনো রিসিভ করতেন না। কোনো গায়রে মাহরাম আত্মীয় বাড়িতে আসলে তিনি খাবার পরিবেশন করতেন না। আমি, ভাই ও আব্বা তাদের দেখাশুনা করতাম, খাবার পরিবেশন করতাম।

আমার চাচা!জেঠারা কেউই আম্মাকে দেখেন নি। আমার চাচাত ভাইয়েরাও না। আম্মার এই পর্দা নিয়ে তারা কখনো অভিযোগ তুলেন নি। তারা আম্মার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ লালন করতেন। আর আম্মাও নিজের এ জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ...

মূলতঃ যে পরিবারে ইসলাম মানা হয়, সে পরিবারের নারীরা হয় সম্মানিতা, তাদের খেদমতে বাড়ির সবাই নিয়োজিত থাকে। পুরুষরা মনে করে, নারীর পর্দা রক্ষার বিষয়টি আমার সম্মানের সাথে সম্পর্কিত। আমার অধিনস্ত নারী পর্দা না করা মানে আমার সম্মান, ইজ্জত ধ্বংস হওয়া। আর জীবনের চেয়ে ইজ্জতের মূল্য বেশি।
[২]
সম্প্রতি একটি ছোট্ট ছেলে ও তার বোরকা পরিহিতা মায়ের ক্রিকেট খেলার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। ভন্ড, রেসিইস্ট, দুমুখো সেক্যুলার সম্প্রদায়ের কতিপয় সেলিব্রেটি এই নারী ও তার সন্তানকে তুলনা করেছে আফগানিস্তানের নারী ও সন্তানের সাথে। ওই মায়ের বোরকা নাকি বাঙ্গালী সংস্কৃতি নয়, আফগান সংস্কৃতি। ওদের অনেকে এভাবেই চিত্রায়িত করেছে বিষয়টি।

ওরা বাঙ্গালী সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের উপর কি চাপিয়ে দিতে চায়, সচেতন মহল খুব সহজেই বুঝেছেন। বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও সংস্কৃতিবান মানুষের অবস্থানকে ওরা ইসলামী পোশাক, ইসলামী তাহযীব-তমদ্দুনের বিপরীত হিসেবে চিত্রায়িত করে। ওদের বাঙ্গালিয়ানা হল সত্যিকার বাঙ্গালিয়ানা, আর বোরকা পরিহিতা মায়ের বাঙ্গালিয়ানা হল আফগান। সেক্যুলাররা নিজেদের যতই উদার, পরমতসহিষ্ণু হিসেবে উপস্থাপন করুক, আসলে তারা নিজেদের সেক্যুলার ও হিন্দুয়ানী আদর্শে অনড়। এজন্য তারা অন্যকে কথা ও কলমে আক্রমণ করতে দ্বিধাবোধ করে না। এমনকি ওরা অনেককে শারীরিকভাবেও আক্রমণ করে। এই আক্রমণের ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। এসবে আগ্রহী ব্যক্তিমাত্রই তা জানতে পারবেন।
[৩]
আমার অবস্থান সুস্পষ্ট। আমার মায়ের বোরকা পরিধান যদি কোন সংস্কৃতি, আদর্শের বিপরীত হয় তবে আমার কাছে সে আদর্শের পাঁচ পয়সার মূল্য নেই। ইসলামের আদর্শ একজন মুসলিমের কাছে সবথেকে বেশি মূল্যবান, অনুসরণীয়। এজন্য নিজের দেশীয় সংস্কৃতিও যদি ইসলামের বিপরীত হয়, সাচ্চা মুসলিম মাত্রই তা প্রত্যাখ্যান করবে, গ্রহণ করবে ইসলামী সংস্কৃতি। সে সর্বাগ্রে নিজেকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করবে, অতঃপর নিজের পরিবার ও সমাজকে।

আরেকটা মেজর কুশ্চেন হল, বাঙ্গালী নারীর ঐতিহ্যগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়বাহী আসলে কারা? মিডিয়া, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে উপস্থাপিত শহুরে নারীরাই কি বাঙ্গালিয়ানার পরিচয়বাহী? গ্রাম বাংলার পর্দানশীন নারীকুলের জীবনাচার, সংস্কৃতি কেন বাঙ্গালিয়ানা নয়? এই প্রশ্নগুলোর জবাব খুজতে হবে। কেন আজ তাদেরকে বাঙ্গালী সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে বিবেচনা করা হচ্ছে, যেখানে তাদের জন্ম ও বেড়ে উঠা এ দেশেই!

আসলে ওরা আমাদের পশ্চিমা সংস্কৃতির দাস বানাতে চায়। আমরা যেন বাঙ্গালিয়ানা বলতে পশ্চিম ও হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি মিশ্রিত এক সংকর জাতের সংস্কৃতি লালন করি, ইসলাম থেকে দূরে সরে যাই-এটাই তাদের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যেই তারা মিডিয়া, পত্র-পত্রিকা, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে। একজন মুসলিমের উচিত হবে না এসব দ্বারা প্রভাবিত হওয়া। এমনকি যদি ইসলাম অনুসরণ করা আর বাঙ্গালী হওয়া দুইটা দুই মেরুতেও অবস্থান করে, সেক্ষেত্রে তাকে ইসলামকেই গ্রহণ করতে হবে, বাঙ্গালিয়ানা নয়। এটাই উসুল, এটাই মূলনীতি। কারণ, ইসলাম মহান আল্লাহর মনোনিত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। যারা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু তালাশ করে, সেটা আল্লাহর দরবারে প্রত্যাখ্যাত।

- খালিদ সাইফুল্লাহ

পঠিত : ৯০০ বার

মন্তব্য: ০