Alapon

বাঙালি নারীরা কখনোই পুরো শরীর না ঢেকে চলাফেরা করতেন না



বাঙালিদের ইতিহাসে দেখা যায় এখানের নারীরা কখনোই পুরো শরীর ঢাকা ছাড়া বা বোরখা ছাড়া চলাফেরা করতেন না। আর্যরা এসে আমাদের বাধ্য করেছে অনার্য মেয়েদের ওড়না ছাড়া থাকতে। সেসময় যাদের সামর্থ ছিল তারা খাজনা দিয়ে কাপড় পড়তেন। যাদের সামর্থ ছিল না তারা বাধ্য হয়ে উন্মুক্ত থাকতেন। এই খাজনার নাম ছিলো মুলাক্করম।

মুলাক্করম আইনে বলা হয়েছিল- ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কোনো হিন্দু নারী তাদের শরীরকে কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখতে পারবে না। যদি কোনো অব্রাহ্মণ নারী তার শরীরকে কাপড় দ্বারা আবৃত করতে চায়, তাহলে তাকে শরীরের মাপের উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করতে হবে।

গুপ্ত ও সেন আমলে আর্য তথা ব্রাহ্মণ্যবাদীরা নারীদের প্রতি এই ভয়ংকর নির্যাতন চালায়। পাল আমলে ও সুলতানী আমলে এসব বর্বর প্রথার বিনাশ হয়। আবার খ্রিস্টানরা ব্রাহ্মণ্যবাদীদের সহায়তায় এই অঞ্চলের ক্ষমতা দখল করার পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু জমিদাররা আবারো একই নির্যাতন শুরু করে।

তখন কেরালায় এক নির্যাতিত নারী এর প্রতিবাদ করেন। ওনার নাম নাঙ্গেলি। তিনি মুলাক্করম ট্যাক্স দিতে অস্বীকৃতি জানান। ১৮০৩ সালে তার ওপর যখন করের বোঝা চাপিয়ে বারংবার চাপ প্রয়োগ করছিলো, তার স্বামীকে নির্যাতন করছিলো হিন্দু জমিদারের পাইক পেয়েদারা তখন প্রতিবাদস্বরূপ তিনি নিজের স্তন কেটে ঐ ট্যাক্স কালেক্টরকে দিয়ে দেন।

এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নাঙ্গেলির আত্মহননের সূত্র ধরে এই প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় সকল অনার্য লোকেরা। এর মধ্যে ছিল বাঙালিরাও। অবশেষে ইংরেজদের হস্তক্ষেপে এই প্রথা বাতিল হয়। আর কোনো হিন্দু জমিদার ভারতবর্ষে এই ধরণের কর কালেকশন করতে পারেনি।

এরপর নারীদের উন্মুক্ত করতে নতুন পলিসি এপ্লাই করে আর্য তথা ব্রাহ্মণরা। এই বিষয় নিয়ে তারা এবার সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালায়। এক্ষেত্রে তারা আগে ব্রাহ্মণ নারীদের রাস্তায় আবৃতহীন করে নামায়। এটাকে প্রগতি ও আধুনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এতে তারা সফল হয়। এরপর অনার্যরাও গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসায়।

তবে এখনো যেসব নারী আত্মসম্মান নিয়ে সমাজে চলাফেরা করেন তারা অবশ্যই নিজেকে আবৃত করে চলেন। বাংলাদেশ যখন পাকিস্তান থেকে আলাদা হয় তখন বিষয়টি এমন হয়েছিল যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন নারীকেও পাওয়া যেত না যারা পুরোপুরি নিজেদের আবৃত করে সম্মানের সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারতেন। ভারতীয় ব্রাহ্মণ মুশরিকদের সহায়তায় তৈরি এই দেশ মুসলিম নারীদের জন্য এই ভয়াবহ স্থানে পরিণত হয়।

এই সমস্যা হয়েছিল মুশরিক ব্রাহ্মণ্যবাদীদের সাথে বাঙালিদের সখ্যতা এবং কম্যুনিস্টদের প্রভাবের কারণে। ইসলামপন্থী মানুষগুলোর ঐকান্তিক চেষ্টায় ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনেকেই ডিগনিটির সাথে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন, ঘর থেকে বের হয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারেন। কিন্তু এখনো ব্রাহ্মণদের প্রভাব নষ্ট হয়নি। তাই এখনো প্রায়ই খবর পাওয়া যায় ডিগনিটি রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের নারীদের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে সেন ও গুপ্ত আমলের বর্বরোচিত প্রথার মতো। এখনো অনেক স্থানে হিজাব পরতে দেওয়া হয় না। কাপড় দিয়ে নিজেকে ইচ্ছেমতো ঢাকতে পারে না।

পঠিত : ৪৪১ বার

মন্তব্য: ০