Alapon

||ভন্ড-০২||

১.

চয়ন। দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী এক ছাত্র নেতা। সবাই তাকে ভয়ংকর রকমের ভয় পায়। উপরে উপরে সমীহ করে চলে। তার ভয়ে ক্যাম্পাসের প্রতিটি ইট-বালুও থরথর করে কাঁপতে থাকে। তাকে দেখলেই সবাই সালামের ঝড় তোলে। "জি ভাই জি ভাই" সুরে-স্বরে কম্পমান আর মুখরিত থাকে আশপাশের সবটাজুড়ে। সে যেখানটায় দাঁড়ায় বা বসে সেইখানেও গিয়ে জমা হয়ে যায় শতো শতো ছাত্র-ছাত্রী। যে দোকানে চা পান করতে বসে সে দোকানের মালিক তার থেকে চা-সিগারেটসহ কোনো কিছুর দরদামই রাখে না। তার পরিচয় দিয়ে কেউ আসলে তাদের কাছ থেকেও নেয় না কোনো রকমের দরদাম। এটার কারণও আছে অবশ্য, একবার হয়েছে কী, তার সাঙ-পাঙ নিয়ে পাশেই এক দোকানে চা-সিগারেট খেয়েছে। সেই দোকানের সামনে বসেই দীর্ঘক্ষণ আড্ডায় কাটিয়ে দিয়েছে। উঠে আসবার সময় দোকানের জীর্ণ-শীর্ণ দেহওয়ালা মালিকটা যখনই মূল্য চাইলো তখনই চয়ন তার দলীয় ক্যাডার রিজভী আর হাসানুজ্জামান আজাদকে ডেকে বললো, ''ওই, কই তোরা! ব্যাটাকে মূল্য দিয়া দে তো!" সাথে সাথেই রিজভী দোকানদারকে শার্টের কলার চেপে ধরে দ্রিমদ্রিম করে কয়েকটা কিল-ঘুষি বসিয়ে দিলো গালে-গলে-বুকে। ওদিকে হাসানুজ্জামান আজাদ বলতে লাগলো --কত্তোবড়ো কলিজা তোর, তুই চয়ন ভাইয়ের কাছে টাকা চাইছিস, বলতে বলতে দোকানে আগুন ধরিয়ে দিতে যাবে তখনই লোকটা তার পূত্রসম বয়সী চয়নের দু'খানা পায়ে লুটিয়ে পড়ে মাফ চাইতে লাগলো।

এরপর চয়ন আজাদকে থেমে যেতে বললো। থেমে গেলো আজাদ। থেমে গেলো রিজভীও। সেদিনের পর থেকে বড়ো-ছোটো কোনো দোকানী-ই তাদের থেকে কোনো দরদাম চায় না। রাখেও না।

২.

জেবতিক কথিত প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী। সকলকেই সে এই চিন্তাধারার সবক দিয়ে বেড়ায়। চয়নের সামনে জীবন-আদর্শের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে-ও জেবতিক ছেলেটার সামনে রয়েছে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য হলো সমাজ থেকে মানুষের মন-মনন হতে ধর্মের প্রভাব মুছে ফেলা। সেজন্যে সে কিছু কৌশলগত শব্দ ব্যবহার করে থাকে -- প্রগতিশীলতা, সমতা, উদারতা ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবের পালে হাওয়া দেয়ার জন্য তারা তৈরি করেছে একপাল সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যম। সে সব সংবাদমাধ্যম আবার তাদের দুষ্টু চিন্তার পালে হাওয়া দেয়ার পাশাপাশি এসবের বিরোধী, এবং ইসলামি আদর্শের নেতৃবৃন্দ'র বিরুদ্ধে চালায় তথ্য সন্ত্রাসও। তো আজ জেবতিক আর তার বন্ধু জাফরসহ টিএসসিতে কথিত মানবিকতার বিশুদ্ধ বয়ান ঝাড়তে এসেছে, ঝাড়ছে। তার সঙে হাতেগোনা কিছু মানুষও আছে, মোটের ওপর দশ-বারো জন হবে। সঙ্গে সঙ্গ দিতে শ্রীলেখা প্রাচীও আছে।

শ্রীলেখা পেছনে বসে বসে ঢকঢক করে মদ খাচ্ছে। মূলত জেবতিক ছেলেটারও মদ-গাঞ্জা সিগারেট ছাড়া চলেই না, তার অনেকগুলো মেয়ে ফ্রেন্ড আছে। তাদেরও সেইম কন্ডিশন। তাদের নিয়ে বউয়ের মতোই তার চলাচল। আচার-আচরণ। মেয়েগুলোর অনেকেই আবার তার কথিত সমতা নারী-অধিকারের বুলি আওড়ানো দেখে তার দলে ভিড়েছে। কিন্তু ধীরেধীরে পরে সে সবাইকেই নিজ বিছানার পার্টনারও করে ফেলেছে। ধীরে ধীরে তারাও কিন্তু এখন আর একপুরুষে সন্তোষ থাকতে পারে না, এবং থাকেও না। থাকতে চায়ও না। মাতৃত্ব, বিয়ে এসবকে শেঁকেলে ঠাওরিয়ে বেড়ায়। তারাও টকশোতে বসে বসে ব্লগে ঢুকে ঢুকে দেহ আমার সীদ্ধান্ত আমার , আমার দেহ আমি দিবো যাকে খুশি তাকে দিবো ইত্যাদি বলে দাপিয়ে বেড়ায়। কারণ উপোয় তো নেই, লেজকাটা শেয়াল হলে যারহয় আরকি। তাদেরকে তো নাশ করে ব্রেইনওয়াশ করে দিয়ে একাকার ম্যাসাকার করে ফেলছে সেক্যুলার পোলাপান। তারাও এখন জিন্স পরে গিটার হাতে নিয়া হেরোইন-কোকেইনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এখন এইপথ থেকে উত্তরণ ঘটানো সহসা সম্ভবপর নয়। তবে সবাই যে বানের জলে ভেসে একাকার হয়ে যায় তাও কিন্তু নয়! সে যাই হোক, এখন সভামঞ্চে বক্তৃতায় কিছু বিপ্লবী বয়ান ঝেড়ে সরকারেরও সমালোচনা করেছে। চয়ন তো সুনির্দিষ্ট কোনো আদর্শ-লক্ষ্য নেই, সে বা তারা শুধু ক্ষমতায়-ই চায়। সেজন্য যা ইচ্ছে তা-ই করে, এবং করতে পারেও। মানে তাদের মতো দলগুলো এমনিই। তাই সরকারের বিরোধিতা করায় চয়নরা তাদের ওপর হামলে পড়েছে।

৩.

চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা জেবতিকের উপর সরকার দলীয় ছাত্র নেতা চয়নের বর্বর হামলা। জেবতিকরা এবং তাদের এমন প্রচার-প্রফাগান্ডার ফলে সরকার এবং দলীয় প্রধান বাধ্য হয়ে চয়নের দলীয় পদস্থগিত করে দিছে।

এখন প্রতিদিন টকশোতে একটাই টপিক- "জেবতিকের উপর হামলা।" চয়নের অবস্থা তো বারোটা বেজে এখন তেরোটা। দলীয় পদ হারাতে হলো, এখন মনে হয় লাল দালানের ভাতও খেতে হবে। তবে তার এবার বোধদয় হলো যে, ওরা উপরে উপরেই সাম্য মানবতার কথা বললেও তারা প্রতিপক্ষকে বা তাদের স্বার্থে সামান্যতম আঘাত পেলেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। তিলকে তাল করতেও তাদের জুড়ি নাই। ঢাহা মিথ্যেকে সত্য এবং টাটকা সত্যকে সহীহ মিথ্যে বানাতেও তারা কসুর করে না! তারা প্রয়োজনে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডাও চালাবে। এবং চালায়ও। একেবারে নিয়মিতই!

৪.

তনিমা তিন্নি। নতুন ঢাকায় আসছে। ঢাবির প্রাণ রসায়ন বিভাগের ছাত্রী। প্রাচী, জেবতিকদের চটকদার চমকপ্রদ বুলিতে চমকিত হয়ে এবার তাদের দলে ভিড়ছে। সমতা, মানবিকতা এবং উদারতার সবকগুলি তার হৃদয়ের বন্দরে দারুণভাবে রেখাপাত করছে। তাই সে তাদের সংস্পর্শে আসছে।

একদিনের কথা, তনিমা ক্লাস করে আসছে হলে তার হলের এক বড়ো বোন শ্রীলেখা। সে তাকে আজকে একটা পার্টিতে যাবার তাগাদা করছে। সে-ও গিয়েছে। তবে সে গ্রামের মেয়ে এবং নিজে ধার্মিক না হলেও পূর্বপুরুষের মাঝে কিছুটা ধর্মীয় আচার-আচরণের ছোঁয়া রয়েছে। সে কারণে তনিমা চেয়েছে একটা শালীন পোষাক পরে পার্টির উদ্দেশে বাহির হবে। কিন্তু শ্রীলেখা প্রাচী তাকে টিটকিরির সুরে বললো তুই কি মাদ্রাসায় যাইতেছিস নাকি! এইভাবে বস্তাবন্দি হুজুর হইয়া কেউ পার্টিতে যায় নাকি?

কী আর করার, শ্রীলেখার চাপাচাপিতে একটা জিন্স টি-শার্ট পরেই আজ পার্টিতে যেতে হলো। তবে একটা ওড়না বুকের ওপর বিছিয়ে দিয়েছে। এটাও রাখলে নাকি পরিপূর্ণ স্মার্টনেস প্রকাশিত হয় না, তবুও জোর করেই তা পরলো সে।

৫.

ঝকমকে রঙিন আলোর হলরুমে ঢুকতেই তনিমা ক্যামন ভয় ভয় অনুভব করতে শুরু করছে। অস্থির তোলপাড় করা গান-বাজনা চলছে। সকলের হাতে লালপানি। চুমুকে চুমুকে মাতাল করা ড্যান্স দিচ্ছে সকলেই। ইতোমধ্যে শ্রীলেখা গিয়ে জেবতিকের সাথে উন্মাদ আনন্দের ডোপামিন নিঃসরণ ঘটানো শুরু করছে।

জেবতিকের কাছে হাস্যরসের সাথে যেনো কী একটা বলছে শ্রীলেখা প্রাচী। আর দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে।

ক্ষণিক পরেই জেবতিক গোল গোল দুটো রক্তলাল চোখে তাকিয়ে আছে তনিমার দিকে। তনিমা খেয়াল করছে যে জেবতিকের নেশাময় রক্তলাল চোখের পাতা তার বুকের ওপর তিরের মতো এসে বিদ্ধ হচ্ছে। ওড়না-শার্ট ভেদ করে কী এক ভয়ংকর চাহনিতে তাকে নিঃশব্দে নিঃশেষ করে ফেলছে মনে হয়!

একদিকে গানবাজনা আর মদগাঁজায় গা গুলিয়ে ফেলার মতো অবস্থা! আবার এদিকে নেশাখোর সব ছেলেদের সাথে জেবতিকেরও চোখের বিষদৃষ্টি! ভয়ে জুবুথুবু অবস্থা তার! মনে মনে ভাবে ;হায়, এই কোন প্রগতিশীলতার হাতে পড়লাম! এটাই বুঝি প্রগতিশীলতার স্বরূপ! কোনো ভাবনায়-ই আর আসছে না মনে। কিছু ভাবতেও পারছে না সে! গাল খিটমিট করছে। হাত-পা অসাড় হয়ে যায় মনে হয়....

হঠাৎ করেই শ্রীলেখা এক গ্লাস লাল পানি এনে দিয়ে বললো, " এই নে মাম্মা! মন খারাপ কইরা চুপসে আছিস ক্যান! এনজয় ইউর লাইফ! দুইন্নাইটা উপভোগ করতে শিক্ষা নে! ফূর্তি কর! দুইন্নার মজাটা লুইট্টা নে! আইছিসই তো ফূর্তি করতে! এভাবে মিনমিনে থাইক্কা কী লাভ! যদ্দিন বাঁচবি মজা নিয়া বাঁচবি! "

তনিমা গ্লাসটা রেখে দিয়ে বললো আমারে যেতে দ্যান! আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। কোথায় আসলাম এই আমি, কই নিয়া আইলা! আমি তো এমন পরিবেশে কখনো আসি নাই! হো হো করে হেসে ওঠলো শ্রীলেখা ওদিকে জেবতিকও হাসছে! চোখের মাঝে তার ভয়ংকর হিংস্রতা! ওর চোখের দুষ্ট চাহনিতে নারী মাংস্পিন্ডের উন্মাদ হিংস্রতা তনিমা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে! এদের এই হাসিটাও ক্যামন ভয়াল আর ভুতুড়ে লাগছে তার কাছে!

শ্রীলেখা জেবতিককে দেখিয়ে বলে যা ভাই'র কাছে যা, আমগো প্রগতীপাড়ার আইডল! সে তোরে পারসোনাল টাইম দিবো। তোর মনটা ভালো হইয়া যাইবো। ভাই'র নাকি তোরে মনে ধরছে, আমারে টাইম দেওনের কালে কইলো এইটা!
তার কথাগুলো শুনে তনিমার হাত-পা যেনো পুরোপুরিই অসাড় হয়ে গেছে! জোরেশোরে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু করছে না। তবে এইটুকু বললো, ''তুমি না ভাইর লগে ছিলা একান্তে এতোক্ষণ!? তিনি না তোমারে টাইম দিছে?!

শ্রীলেখা দাঁত কেলিয়ে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বললো তো কী হইছে, আমরা কি ধর্মান্ধদের মতো সংকীর্ণ নাকি! আমরা জীবনটাকে, জীবনের যৌবনটাকে নদীর মতো চিন্তা করি। যেখানে যার যার ইচ্ছে মতো গোসল করতে পারবে, সাঁতার কেটে পানি নিয়ে উপভোগ করতে পারবে। তুই তো এতোদিন একটা কলসের মতো জীবন আর জীবনের মধুর যৌবনকে দেখেছিস!

জেবতিক মুচকি হাসি দিয়ে বললো থাক রাখো শ্রীলেখা! ও ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। সব বুঝবে। মাত্রই তো গ্রাম থেকে আইলো। মনে হয় ধর্মের ধারা তার মাঝে এখনো আছে। এই বলে সে তনিমার কোমরে হাত দিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে বললো ''আসো তনিমা, তোমাকে জীবনের স্বাদ ছোঁয়া দিই আজকে। জীবনটা উপভোগ করতে শেখো। এতো দামি দামি সব মদ এক ঢোকও তো খাইলা না! আসো, আমিই তোমাকে খাইয়ে দেই!

তনিমার দেহে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো। আর তা হচ্ছে ভয়ানক এক ক্রুদ্ধতার শিহরণ! তনিমার শরীরে কখনো কোনো পরপুরুষ হাত দেয় নি! বাপ চাচা ভাইয়ের স্নেহ আর শ্রদ্ধা আর পবিত্র ভালোবাসার ছোঁয়া ছাড়া কোনো পরপুরুষের ছোঁয়া লাগে নি! অথচ আজ এই লোকটা হাত না তারচে বেশি কিছু করতে চাইছে, প্রগতিশীলতার দোহাই দিয়ে! তাকেব্যাকডেটেইড তকমা দিয়ে, সাথে সাথেই ভয়টা রূপান্তরিত হলো রাগে৷

রাগে তনিমার গরগর করে কাঁপছে সারা দেহ! সেই রাগের মাথায় শরীরের যতো শক্তি আছে তার সবটুকু ঢেলে দিয়ে কষে একটা চড় দিয়ে ধাক্কা মেরে দৌড়ে বেরিয়ে আসে তাদের সেই পার্টি থেকে...

৬.

সারারাত কেঁদে কেঁদে নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে তনিমা। সকাল গড়িয়ে দুপুর এলো। তবুও কিছুই খেলো না সে। মারিয়া ডাকছে। জোরাজোরিও করছে খুব। তবুও সে আসছে না খেতে। পৃথিবীর মানুষের এতো রূপ এতো রঙের মহড়ায় সে আসোল মানুষদেরই চিনতে পারলো না। নিজের বোকামির জন্য, শেকড় ভুলে বিপথে যাওয়ার যন্ত্রণাটা আজ তার বুকের ভেতরটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে শেষ করছে।

নিজের কাছে নিজেকে এক ভুতুড়ে মানবি মনে হচ্ছে তনিমার। দগ্ধ হৃদয়ে প্রশান্তির প্রলেপ বুলিয়ে দিতে সর্বোচ্ছ প্রচেষ্টা করছে মারিয়া। আসোলে মারিয়া শুরুর সময় থেকেই তাকে এতোসব কুৎসিত বিকৃত দুনিয়ার কথা বলে সচেতন করে আসছে। সাময়িক চটকদার ফাঁকা ফাঁকা বুলির চোরাবালিতে আটকে পড়তে নিষেধ করছে। সচেতন করছে। কিন্তু সে কতো ভাবেই না অপমান আর অবজ্ঞা করছে মারিয়াকে!

ভার্সিটিতে এসে ডিজিটাল দেশ গড়ার উচ্চারিত মন্ত্র শুনে প্রথমে ভিড়লো চয়নদের দলে। কিন্তু তাদেরকেও দেখলো সামন্য রিক্সাওয়ালা চা-ওয়ালার বিলও পরিশোধ না করা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড়ো বড়ো কোম্পানি -- সকলের থেকে চাঁদাবাজি ট্যান্ডারবাজি করে, সন্ত্রাসী- মাস্তানী করে ক্যাম্পাসে এক ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে। সেজন্য তাদের থেকে সরে গিয়ে তাই এবার জেবতিকদের নারী অধিকার, সমান অধিকার, মানবিকতা প্রগতিশীলতা -ইত্যাদি বাণীতে প্রভাবিত হয়ে ঢুকলো তাদের দলে। কিন্তু এবার বুঝতে পারলো আসোলে এসব এদের কিছু ফাঁকা বুলি আর মানুষকে শুদ্ধ সমাজ কাঠামোর বিরুদ্ধে উস্কে দেয়া,ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ আর অবাধ যৌনাচার অশ্লীলতা আর বেলেল্লাপনাকে প্রতিষ্ঠা করা, নিজের নফসের উদগ্র খায়েস মেটানোর ধান্ধা ছাড়া আর কিছুই না! এরা নারীকে শ্রদ্ধা, নারী অধিকারের কথা বললেও নারীকে স্রেফ পণ্য ছাড়া কিছুই মনে করে না এরা!

এদের এসব আগে না বুঝার দায়ে নিজেকে বিরাট অপরাধী মনে করে মারিয়াকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে সে!

মারিয়া তাকে বললো শুন তনিমা আল্লাহর বিধান ছাড়া কোনো বিধানই মানুষের জন্য সত্যিকারের কল্যাণ বয়ে আনে না। তার বিধান ছাড়া অন্যকোনো বিধানের মাঝে কল্যাণ আর পূর্ণতা নেই! পাওয়া যায় না। আমরা আমাদের ক্ষুদ্র মগজে তা হয়তো উপলব্ধি করতে পারি না!

সজল নয়নে তনিমা মাথাটা তুলে বললো, আসোলেই মারিয়া ঠিকই বলছিস রে, আমরা নিজের সীমাবদ্ধ মগজ দিয়ে স্রষ্টার বিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই, করিও।

৭.

সারাদিন আজ একফোঁটা অন্ন-পানিও মুখে দেয় নি তনিমা। ফ্রেশ হয়ে মারিয়া নিজেই খেতে বসালো, সাথে সেও বসলো। একসাথে খাওয়া দাওয়া করার ফাঁকে টিভিটা চালু করে দিলো। চালু করতেই চুয়াত্তর টিভিতে জেবতিককে দেখেই চক্ষু ছানাবড়া হয়ে উঠেছে তনিমার। রাগে ঘৃণায় গরগর করে কাঁপতে লাগলো সে। সাথে সরকারি দলের হাসানুজ্জামান আজাদও আছে। মারিয়া তাকে শান্ত মনে খাওয়া দাওয়া করতে বললো। দুজনেই ক্ষুধায় ছোঁ ছোঁ করা পেটে ভাতের লোকমা চালান করছে। মারিয়া কখনো জোরে হাসে না। হঠাৎ আজ একটুখানি অট্টহাসি দিয়েছে জেবতিকের কথা শুনে। জেবতিক চয়নের বিষয় নিয়ে চুয়াত্তর টিভির সাংবাদিক ফারজানা টিনার একটা প্রশ্নের জবাবে বললো নারী মুক্তিই মানবতার মুক্তির প্রথম শর্ত! নারীর সম্মান-অধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অথচ চয়ন হাজারো জনতার সামনে কীভাবে শ্রীলেখা প্রাচীকেও আঘাত করেছে আমার দলের হওয়ায়!

অপরদিকে হাসানুজ্জামান আজাদ বললো, আমরা দ্যাশকে ডিজিটাল, সমাজকে উন্নত আর মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র দূরীভূত করতে বিরামহীন কর্মযজ্ঞে দিনাতিপাত করছি, অথচ আপনারা মৌলবাদীদের মতো জঙ্গিদের মতো রাজাকারদের মতো তাদের সুরে সুর মিলিয়ে সরকারের বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে উস্কে দিচ্ছেন। আর আমাদের মানব দরদী সংগ্রামী ছাত্রনেতা চয়ন ভাই সে অমূলক কাজে বাঁধা প্রধান করছে বলে তার বিরুদ্ধে নারীর গায়ে হাত তোলার মতো মিথ্যে অভিযোগও করছেন। আসোলে আপনারা অন্তরালে জঙ্গিবাদের সহযোগিতাই করছেন!
তুমুলঝগড়া চুয়াত্তর টিভির স্টুডিওতে....

এদের এমন ঝগড়াঝাটি দেখে যেমন কিছুটা বিনোদনও পাইছে মারিয়া আর তনিমা তেমনি এদের ফাঁকা বুলি মিথ্যেবাদিতা ভন্ডামি দেইখা আফসোসও হচ্ছে তাদের। এরকম জঘন্য হিপোক্রেটি কথাবার্তা আর বিষয় শুনে গতো কাল রাতের বিষয় স্মরণ করে মনভরা দুঃখ আর একরাশ ঘৃণা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠলো; হায়রে ভন্ড!!!

||ভন্ড-০২||
~রেদওয়ান রাওয়াহা
-০৫.০৯.২০

পঠিত : ৮৯১ বার

মন্তব্য: ০