Alapon

আল্লামা শাহ আহমদ শফি: একটি নাম, একটি ইতিহাস...


গতকাল সন্ধ্যায় মাত্র ফেসবুকে লগইন করেছি, নিউজ ফিডে চোখ রাখতেই চমকে উঠলাম। আল্লামা আহমদ শফি ইন্তেকাল করেছেন।

জানতে পারলাম, তিনি আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাসা থেকে কাছেই। দ্রুত বাই-সাইকেলটা নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলাম।

আল্লামা শফি, এই নামটা প্রথম পারি শাহবাগের নাস্তিকদের কল্যাণে! শাহবাগে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে কতিপয় নাস্তিক একত্রিত হয়ে একটি আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। সেই আন্দোলনে পিছন থেকে শক্তি যোগায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রত্যক্ষ মদদ দেয় ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগ। পরে এই আন্দোলন শাহবাগ আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়।

আমার এখনো মনে আছে, তখন দেশ দুভাবে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। একদল নাস্তিকদের পক্ষে, আর এক দল ইসলামের পক্ষে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছিল, দেশটা যেন নাস্তিকদের দখলেই চলে যাচ্ছে। আর ইসলাম বাংলার জমিন থেকে ভুলন্ডিত হতে যাচ্ছে। ঠিক এমন একটা সময়ে ইসলামকে হেফাজত করতে এবং বাংলার জমিনকে নাস্তিকদের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন আল্লামা আহমদ শফি এবং তাঁর কওমি সন্তানরা। আর আহমদ শফি সাহেবের এই আন্দোলনের পেছনে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করেন, তাঁরই সুযোগ্য সহকারী আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। যেহেতু তাদের আন্দোলন ছিল, ইসলামকে হেফাজত করার। তাই দলের নাম দেওয়া হয় হেফাজতে ইসলাম।

বাংলাদেশের ইতিহাস সেই দিনটার কথা কোনোদিনও ভুলবে না, যেদিন আল্লামা শফি সারাদেশের তৌহিদি জনতাকে লং মার্চে উপস্থিত হওয়ার জন্য আহব্বান জানালেন। বিশ্বাস করুন, এমন দৃশ্য আমি আমার ২৭ বছরের জীবনে আর একবারও দেখিনি। সরকার এই লং মার্চ ঢেকানোর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন সব করল। ট্রান্সপোর্ট বন্ধ করে দিল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পেটুয়া ছাত্রলীগকে লগি-বৈঠা নিয়ে বসিয়ে দিল। তাদের একমাত্র কাজ দাড়ি-টুপিওয়ালাদের দেখলেই তাড়া করবে। আর রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী তো রয়েছেই।

কিন্তু এতোসব প্রতিবন্ধকতা স্বত্বেও বাংলার মানুষ সেদিন আল্লামা আহমদ শফির আহব্বানে পায়ে হেটে, নিজস্ব পরিবহনে কিংবা যে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই ঢাকার শাপলা চত্বরে উপস্থিত হয়েছিল। আমার সেদিন হেমিলিওয়নের বাঁশিয়ালার কথা মনে হয়েছিল। যার আহব্বানে সবাই পাগলপারা হয়ে ছুটে গিয়েছিল। ঠিক তেমনই আল্লামা আহমদ শফির আহব্বানে বাংলার মানুষ পাগলপারা হয়ে শাপলা চত্বরে ছুটে গিয়েছিল।

অনেকেই বলেন, শাপলা চত্বরের আন্দোলন সফল হয়নি। কিন্তু আমি বলব, শাপলা চত্বরের সেই আন্দোলন ১০০ ভাগ সফল হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম যে উদ্দেশ্য নিয়ে জন্ম নিয়েছিল, যে নাস্তিকদের আগ্রাসন রুখে দেওয়ার জন্য জন্ম হয়েছিল, তা সফল হয়েছে। বাংলাদেশে এখন নাস্তিকদের সেই আগ্রাসন নেই। এমনকি নাস্তিকরা মুক্তমত চর্চার নামে যে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়াতো, তাও প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর একমাত্র কারণ হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন এবং আল্লামা শাহ আহমদ শফির ভূমিকা। আল্লামা আহমদ শফি, একটি নাম একটি ইতিহাস। তাঁর নাম বাংলাদেশের ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

ইসলাম রক্ষার এই হেমিলিয়নের বাঁশিয়ালা আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি তাঁর মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। আল্লাহ তার ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।

পঠিত : ১০৪৫ বার

মন্তব্য: ০