Alapon

সফল আন্দোলনের মাধ্যমে কওমি অঙ্গনে এক নতুন ধারার সূচনা হল...


আল্লামা শফী সাহেবের মৃত্যুর সংবাদে চাপা পড়ে গেল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েই কিছু কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি।

স্বাধীন বাংলাদেশে কওমি ইতিহাসে এমন সফল বিদ্রোহের ঘটনা আর একটিও নেই। অতীতেও কোনো বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল কিনা তা আমার জানা নেই। কওমিদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা অনেক বেশি আকাবির (উস্তাদ) নির্ভর। আকাবির যা-ই বলেন, শিক্ষার্থীরা তা-ই মান্য করেন। সেই আকাবির ভক্ত শিক্ষার্থীরা আকাবিরের বিরুদ্ধে গিয়ে এমন একটা বিদ্রোহি আন্দোলন করতে পারবে, তা আমি কেন, হয়ত বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন কোনো মানুষই কল্পনাও করেনি।

অন্যদিকে কওমি মাদ্রাসার নিয়মনুসারে একটা সময় শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা শিক্ষার বাইরে পত্রিকা পড়ারও অনুমতি পেতো না। আর গল্প, উপন্যাস, ইতিহাসের বই পড়া তো আর পরের কথা। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে হাতে। কিন্তু কওমি শিক্ষার্থীরা মোবাইল ব্যবহার করার অনুমতি পেতো না। এই নিয়ম আকাবিররাই করেছিলেন।
তবে ইদানিংকালে তারা যেন তেন উপায়ে ঠিকই মোবাইল ব্যবহার করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটিভ। যে শিক্ষার্থীরা আকাবিরের কথানুসারে পত্রিকা পড়ত না, বাহিরের বই পড়তো না, এমনকি স্বাভাবিক উপায়ে মোবাইলও ব্যবহার করে না, সেই শিক্ষার্থীরা এমন একটি আন্দোলন করবে এবং সেই আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারবে, এমনটা কল্পনা করাও কঠিন।

কিন্তু দিনশেষে এটাই সত্য যে, কওমি শিক্ষার্থীরা একটি যৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে দির্ঘদিন ধরে চলে আসা যাবতীয় অনিয়মের অবসান ঘটিয়েছে।

আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আন্দোলন সফল হয়েছে এখন সব আগের মত স্বাভাবিক নিয়মে চলতে থাকবে। শিক্ষার্থীরা পূর্বের ন্যায় আকাবিরদের অন্ধ অনুসরণ করে যাবে। আকাবির যা বলবে তা-ই ঠিক, এমনটা আর চলবে বলে মনে হয় না। এই আন্দোলনের মাধ্যমে কওমি অঙ্গনে এক নতুন ধারার সূচনা হল। খুব সম্ভবত আকাবিরকে অন্ধ অনুসরণ করার যে রেওয়াজ কওমি অঙ্গনে দির্ঘদিন ধরে চলে আসছিল, তার অবসান হল। এমনকি আগে আকাবিররা অন্যায় বা জুলুমমূলক কোনো সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীরা চুপচাপ তা মেনে নিতো। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখন আর সব চুপচাপ মেনে নিবে না। কারণ, তারা আন্দোলন করতে শিখেছে। আন্দোলন করে ফসল ঘরে তুলতে শিখেছে। কওমি অঙ্গন এক নতুন ধারায় প্রবেশ করল।

এই ধারায় কওমি অঙ্গন সামনের দিকে এগিয়ে যাবে নাকি থমকে যাবে, তা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু এতোটুকু বলা যায়, কওমি শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠবে। আর এই অধিকার সচেতন হয়ে ওঠাকে যদি আকাবিররা নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে, তবে এই অঙ্গনে যে শান্তি ও আনুগত্য বিরাজ করছিল, তা ভুলন্ডিত হয়ে যাবে।

পঠিত : ৩৯২ বার

মন্তব্য: ০