Alapon

আসুন, ইতিবাচক মানুষ হই...


সে অনেক দিন আগের কথা! একদিন দুই বন্ধু মিলে ঘুরতে বেরিয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে তারা দেখে, এক কৃষক গায়ের জামা আর জুতা রাস্তার উপরে রেখে জমিতে কাজ করছিল। এক বন্ধু বলল, চল আমরা একটু মজা করি! আমরা কৃষকের জামা আর জুতা লুকিয়ে রাখব! তারপর দেখি কৃষক কী করে! বিশেষ মজা পাওয়া যাবে।

অপর বন্ধু এই পরিকল্পনার কথা শুনে বলল, না! এভাবে মজা পাওয়ার কোনো ইতিবাচক দিক নেই। তার চেয়ে আমরা ভিন্নভাবেও মজা পেতে পারি। চল আমরা ওই কৃষকের জামার উপরে কিছু টাকা রেখে দেই। তারপর লুকিয়ে দেখি, ওই টাকা পাওয়ার পর কৃষকের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়!

তারা দুই বন্ধু কৃষকের জামার উপর কিছু টাকা রেখে অদূরে গাছের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর কাজ শেষে কৃষক যখন জামা আর জুতা নিতে আসল, তখন দেখল তার জামার উপরে কিছু টাকা! টাকা গুলো পাওয়ার সাথে সাথে সে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। তারপর সে আসমানের পানে চেয়ে বলল, ‘হে পরম দয়ালু আল্লাহ! তুমি নিশ্চয়ই জানো আমার ঘরে কোনো খাবার নেই। আমার সন্তানরা সকাল থেকে না খেয়ে আছে। এই টাকা দিয়ে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারব। তোমার দয়ার কোনো শেষ নেই! আমি তোমার ভরসায় ঘর থেকে বেরিয়েছি। আর তুমিই যে কোনো উপায়ে আমাদের রিজকের ব্যবস্থা করলে! আলহামদুলিল্লাহ।’

আড়াল থেকে দুই বন্ধু পুরো দৃশ্যটা আনন্দে কেঁদে ফেলল এবং ভীষণ মজা পেল।
আর একটা ঘটনা বলি। ঘটনাটা ভারতের বিখ্যাত নেতা মহত্মা গান্ধীর। কথিত আছে, মহত্মা গান্ধী নাকি ট্রেনের পিছে ছুটতে ছুটতে ট্রেনে উঠতেন। একবার তিনি এভাবে ছুটতে ছুটতে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে যান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রেনে উঠতে পারেন। পিছলে যাওয়ার কারণে তার একটা জুতা পড়ে যায়। তৎক্ষনাত তিনি অপর জুতাটাও ফেলে দিলেন। এই ঘটনা দেখে উপস্থিত একজন জিজ্ঞেস করলেন, অপর জুতাটাও ফেলে দিলেন কেন?
তখন গান্ধীজি বললেন, প্রথম জুতাটা যদি অসহায় কোনো গরিব মানুষ পায় তাহলে সে যেন কাজে লাগাতে পারে, সেই আশায় দ্বিতীয় জুতাটা ফেলে দিয়েছি।

শেষ ঘটনাটা আল্লাহর রাসূলের বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাজিয়াল্লাহুআনহুর। একবার আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তাঁর জুতা হারিয়ে ফেললেন। জুতা হারিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমার জুতা যে নিয়েছে, তার যদি প্রকৃত অর্থেই জুতার প্রয়োজন থাকে তবে তা বারাকাহ দান করুন। আর যদি প্রয়োজন না থাকে, তবে এটাই যেন হয় তার জীবনের শেষ হারাম কাজ।’

সুবহানআল্লাহ! ইতিবাচক চিন্তার মহত্ম সত্যিই বিষ্ময়কর। জীবনের প্রতিটি বিষয়ে ইতিবাচক থাকুন, জীবন সুন্দর হবে। নেতিবাচকতা জীবনকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আর ইতিবাচক চিন্তা সংকীর্ণতা দূর করে উদার মনের মানুষ হতে সাহায্য করে। চলুন ইতিবাচক মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ কবুল করুন। আমিন।

পঠিত : ৩৯৭ বার

মন্তব্য: ০