Alapon

মিশরে চলমান সিসি বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে কে বা কারা?



স্পেনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা মোহাম্মদ আলি একই সঙ্গে একজন ইজিপশিয়ান ধণাঢ্য ব্যবসায়ী, অভিনেতা, চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী, যিনি দেশ ছেড়ে পালানোর আগে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মিশরের সেনাবাহিনীর ঠিকাদার হিসাবে কাজ করেছেন। এরপর তিনি স্পেনে পালিয়ে যান।

দেশে থাকতে মোহাম্মদ আলি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেননি, এমনকি কোনো সংগঠনের কর্মী হিসাবেও কাজ করেননি। জীবনে একবারই মিছিলে গেছেন ২০১২ সালের নভেম্বরে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুরসির বিরুদ্ধে। সেই তিনিই কিনা মিশরে গতবছর সরকার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আলোড়ন তৈরি করেছেন। শুধুমাত্র সোশ্যাল মাধ্যমে স্বৈরাচার সিসি এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক ভিডিও বের করেই তিনি গতবছর মিশরের জনগণের নায়ক বনে গিয়েছিলেন।

২০১৩ সালে আরব-ইজরায়েলের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে সামরিক অভ্যুত্থানে মুরসির পতনের পর গতবছর মিশরের সরকার বিরোধী যে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল তার নেতৃত্বও দিয়েছিলেন আলী। যদিও সিসি বিরোধী বেশ কিছু নির্বাসিত অনলাইন এক্টিভিস্ট আলীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু জনপ্রিয় গণমাধ্যমও সার্বক্ষণিক এই আন্দোলনকে ফুয়েল জুগিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তার ডাকে মিসরজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। রাজধানী কায়রোর ঐতিহ্যবাহী তাহরির স্কয়ারেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে এই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলি ফের সরকার বিরোধী বিক্ষোভের ডাক দেয়। সিসির অপশাসন ও নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে আলীর ডাকা এই বিক্ষোভের ফলে “go out on 20 September” এই হ্যাশট্যাগটা মিশরে শীর্ষ ট্রেন্ডে ছিল।

দেশ জুড়ে ব্যাপক সতর্কতা জারি করে সিসি প্রশাসন। তবুও মিসরের বেশ কিছু শহরে আচমকা সিসি বিরোধী স্লোগান নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে মানুষ। মিশরের তৃতীয় বৃহত্তম শহর গিজা'র কাদিয়া নামক গ্রামে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের বেশ কিছু ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ব্যানার প্রদর্শন করে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে। এসময় তারা বেশ কিছু মজাদার শ্লোগান দিচ্ছে। আরেকটি ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো চলমান এই আন্দোলনের একটা বৃহৎ অংশ অল্পবয়সী শিশু-কিশোরেরা। বেশ কিছু জায়গায় নারীরাও রাস্তায় নেমে এসেছে।

মিশরের বর্তমান স্বৈরশাসক হলো পৃথিবীর সর্বনিকৃষ্ট খুনী। সিসি তার শাসনামলে বিরোধী মত দমনে এমন সব পদ্ধতি বেছে নিছে যে ঘটনা গুলো জানলে শিহরণ জাগায়। নির্বিচারে গণহত্যা, গুম, ক্রসফায়ার, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, বছরের পর বছর কুখ্যাত জেল গুলোতে আটকে রেখে জামিন দেওয়ার পরেও সেই মুক্ত অনেককেই এখনো দিনের অর্ধেক সময় থানায় কাটাতে হয়। বিরোধী মতের মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে এই স্বৈরাচার।

এমনিতেই করোনায় মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। তারউপর 'দ্য গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসান্স ড্যাম (জিইআরডি)' নিয়ে ইথিওপিয়ার সাথে লেজেগোবরে অবস্থা অনেকটায় সঙ্কটে ফেলে সিসি রেজিমকে। অন্যদিকে সিসি 'সামরিক স্বৈরাচার' হওয়ার ফলে তার রাজনৈতিক প্রভাব নেই বললেই চলে। যার ফলে তার বিরুদ্ধে তৃণমূলে সংঘঠিত হওয়া অনেকখানি সহজ। এর বিপরীতে আবার তাকে এইমুহুর্তে ক্ষমতাচ্যুত করাও সবচেয়ে কঠিন কাজ। তার ক্ষমতায় ঠিকে থাকার পেছনে জায়নবাদীদের সরাসরি স্বার্থ রয়েছে। তারা যেহেতু তাকে যেকোন উপায়ে ঠিকিয়ে রাখতে চায় সর্বোচ্চটুকু দিয়ে হলেও গণ অভ্যুত্থানের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে হস্তক্ষেপ করবে।

সুতরাং এমন বিচ্ছিন্ন কিছু বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে কোন পরিবর্তন আশা না করাই ভালো। তবে এই বিক্ষোভ যদি আগামী দিনগুলোতে আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে তবে গণবিষ্পোরণের ফলে যদি পাল্টা সেনা ক্যু হয় তবে সেটাই ক্ষমতার পরিবর্তনের একমাত্র পথ হতে পারে। অর্থাৎ, সেনাবাহিনীর ভেতর থেকেই কেউ এগিয়ে না আসলে ক্ষমতার পালাবদল একপ্রকার অসম্ভবই বলা চলে। এদিকে চলমান এই আন্দোলনে অবশ্যই সিসির প্রধানতম শত্রু তুরষ্ক ও তাদের এই অঞ্চলের এলাই মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ আছে সেটা বলাই বাহুল্য।

সিসিও অবশ্য চলমান আন্দোলনকে বেশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। মিশর জুড়েই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বেশ কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। পুলিশের সাথে কিছু জায়গায় সংঘর্ষে অনেকেই আহত হয়েছে। ইতিমধ্যেই সিসি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। এছাড়াও গতবছর বিক্ষোভের পর সারাদেশে যে ক্র্যাকডাউন হয়েছে তার ফলে এইবছর আন্দোলনের মাত্রা এখনপর্যন্ত অনেক কম দেখা যাচ্ছে। তবে অপরদিকে বিগত আন্দোলন দমনে যে শক্তিমত্তা প্রয়োগ করা হয়েছিল তার তুলনায় এইবার অনেকটায় সহনশীল দেখা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। মোহাম্মদ আলী ইতিমধ্যেই আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রোজ জুমাবার সারাদেশে ব্যাপক আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছে দেশবাসীকে। দেখা যাক ফলাফল কি হয়।

চলমান আন্দোলনের সার্বক্ষণিক আপডেট পেতে নজর রাখতে পারেন :

ফেইসবুক -
ajmubasher
mekameeleen.tvElsharqTV.org
MontadaAlmasrien

টুইটার-
Moaliofficial_
moatazmatar
AbdullahElshrif
ajmubasher
amrwaked

এখানে সবার জ্ঞাতার্থে বলে রাখা ভালো মধ্যপ্রাচ্যের যেকোন ইস্যুতে প্রতিমুহুর্তের আপডেট পেতে টুইটার ছাড়া বিকল্প নেই।

পঠিত : ৭২৭ বার

মন্তব্য: ০