Alapon

ধর্ষকের পাইপলাইনটাও বন্ধ করতে হবে নইলে প্রতিবাদ বৃথা



এক নবদম্পতি গাড়ীতে করে যাচ্ছিল গাজিপুর থেকে ঢাকার দিকে। স্বভাবতই চাঁদা কিংবা কে যায় দেখার জন্য গাড়ি থামায় মোজাম্মেল। এই থামানোর অধিকার মোজাম্মেলের আছে। কারণ তিনি শেখ মুজিবের লোক। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ বানিয়েছেন। গাড়ি থামিয়ে তিনি দেখতে পান সেখানে নতুন বউ। মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হয় স্বয়ং মোজাম্মেলের!

তারপরের কাহিনী নিয়মিত ঘটনার মতোই।
টঙ্গীর আওয়ামীলীগ নেতা ও দেশপ্রেমিক মোজাম্মেল দলবলসহ গাড়িটি আটক করে। ড্রাইভার আর নববধূর স্বামীকে হত্যা করে। মেয়েটিকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে, অতঃপর তিনদিন পর তাঁর লাশ পাওয়া যায় টঙ্গী ব্রিজের নিচে।

পৈশাচিক এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র। এখন যেরকম এমসি কলেজের ঘটনা আলোড়ন তুলছে। বিশেষ অভিযানে দায়িত্বরত মেজর নাসেরের হাতে তদন্তের ভার আসে। মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার করেন মেজর নাসের। ধরা পড়ে তার সাঙ্গপাঙ্গরাও। আশ্চর্য বিষয়! একজন মুক্তিযোদ্ধা এরেস্ট হয়েছেন জনগণ প্রতিবাদ করার কথা। কিন্তু প্রতিবাদ না করে আনন্দ মিছিল করেছিল।

মোজাম্মেল মেজরকে বলে, ঝামেলা না করে আমাকে ছেড়ে দিন, আপনাকে তিন লাখ টাকা দেবো। বিষয়টা সরকারি পর্যায়ে নেবেন না। জেনে রাখুন! স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি ছাড়া পাবো। তখন আপনি পড়বেন বিপদে। আমি তুচ্ছ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না। মেজর নাসের হুঙ্কার ছাড়লেন, এটা তুচ্ছ বিষয়? আমি অবশ্যই তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবার ব্যবস্থা করবো। তোমার তিন লাখ টাকা তুমি তোমার গুহ্যদ্বারে ঢুকিয়ে রাখো!

তারপর?
তারপরের কাহিনী আরো সরল, আরো স্বাভাবিক। এতে কোনো টুইস্ট ছিল না।

স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেলের বাবা ও দুই ভাই গেল বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবের কাছে। তিনি ঢোকা মাত্র মোজাম্মেল এর বাবা ও দুই ভাই কেঁদে মুজিবের পায়ে পড়লো। টঙ্গি আওয়ামীলীগের সভাপতিও পায়ে ধরার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পা খুঁজে পেলেন না। পা মোজাম্মেলের আত্মীয় স্বজনের দখলে!

বঙ্গবন্ধু বললেন, ঘটনা কি বল?

টঙ্গি আওয়ামী লীগের সভাপতি বললেন, আমাদের মোজাম্মেলকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। মেজর নাসের তাকে ধরেছে। নাসের বলেছে ৩ লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দিবে।

মিথ্যা মামলাটা কি?
মোজাম্মেল এর বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, খুনের মামলা লাগায়া দিছে।

মুজিব জিজ্ঞাসিলেন, ঘটনা কি ?
টঙ্গি আ’লীগের সভাপতি বললেন, আমাদের সোনার ছেলে মোজাম্মেল মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। মেজর নাসির তাকে ধরে নিয়ে গেছে। বলেছে তিন লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দিবে। কাঁদতে কাঁদতে আরো বললো, এই মেজর আ’লীগের নাম শুনলেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। সে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, টঙ্গিতে আমি আ’লীগের কোন শূয়োর রাখবো না। বঙ্গবন্ধু, আমি নিজেও এখন ভয়ে অস্থির! টঙ্গিতে থাকি না। ঢাকায় চলে আসছি। (ক্রন্দন)

এবার হুঙ্কার ছাড়লেন মুজিব, কান্দিস না। কান্দার মত কিছু ঘটে নাই। আমি এখনো বাইচ্যা আছি তো, মইরা তো যাই নাই। এখনি ব্যবস্থা নিতাছি। অতঃপর মোজাম্মেলকে তাৎক্ষণিক ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন এবং মেজর নাসেরকে টঙ্গি থেকে সরিয়ে দেবার জরুরী আদেশ দেওয়া হলো। মোজাম্মেল ছাড়া পেয়ে মেজর নাসেরকে তার বাসায় পাকা কাঁঠাল খাওয়ার নিমন্ত্রন করেছিল।

'এখনো বাইচ্যা আছি তো, মইরা তো যাই নাই' এই ঘোষণা শেখ মুজিব একবার দেননি। বারংবার দিয়েছেন। আর প্রতি ঘোষণার সাথে জন্ম নিয়েছে এক পাল কোয়ালিটি ধর্ষক। ৭২- ৭৫ এ সারা বাংলায় পরতে পরতে জন্ম নিয়েছে ধর্ষক। আর সেই ধর্ষকগুলো জন্ম দিয়েছে পাতি ধর্ষক। অনেকে বলে সেই মোজাম্মেল নাকি আজকে মন্ত্রী হয়েছে! জানিনা।

আজকে পুরান কথা টানলাম এই কারণে কিছু মুরুক্ষ লোক অথচ সমাজে জ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃত তারা লিখেছে ছাত্রলীগের বর্তমান প্রজন্ম নাকি তাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের অপমান করছে। এসব মুরুক্ষ লোক না জানে ছাত্রলীগ! না জানে ছাত্রলীগের ঐতিহ্য! ঐতিহ্যবাহী ধর্ষক সংগঠন ধর্ষণ করেছে এতে অবাক হইয়েন না।

আরো কিছু নালায়েক রে দেখছি সিলেটের ঘটনায় এতো বেশি অবাক হইসে যে মনে হয় যেন সে এতোদিন পৃথিবীতে ছিল না। আজকে হুট করে জান্নাত থেকে নেমে আসছে। ওরে নালায়েক! এই সংগঠনের নেতারা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে উদযাপন করে। এখন সে উদযাপন করা সোনার ছেলে স্যার মানিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা।

ধর্ষনের প্রতিবাদ করছেন ঠিক আছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে ছাত্রলীগকে 'ঐতিহ্যবাহী সংগঠন' বলে ধর্ষকদের পিতা শেখ মুজিবকে দায়মুক্তি দিতে যাবেন না। তাহলে আসল সমস্যার সমাধান হবে না। হচ্ছেও না।

এমসি কলেজসহ সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনাগুলোর জন্য মূলত দায়ি শেখ হাসিনার দেওয়া লাগামহীন ক্ষমতা এবং ধর্ষকদের সুষ্ঠু বিচার না করা। ধর্ষন করবে একজনে আর হাসিনার পেয়াদারা গ্রেপ্তার করবে সাধারণ মানুষদের। যদি কোনোভাবে সত্যিকারের ধর্ষকদের গ্রেপ্তারও করে তবে তাকে কয়েকমাস পরই ছেড়ে দেওয়া হয়।

আরেকটি আলোচিত ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেই। লাস্ট সংসদ নির্বাচনের সময় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে আওয়ামী নেতা একরামুল হক চৌধুরির শিষ্য রুহুল আমিন ও তার দলবল এক মহিলাকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে গণধর্ষণ করে।

এই ঘটনা একেবারে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রচার করে। দেশের সব রাজনৈতিক নেতা ঐ মহিলাকে দেখতে যান। ধর্ষক রুহুল আমিন এরেস্ট হয়। মাত্র চার মাস পর তাকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তার মা শেখ হাসিনার নির্দেশে।

ধর্ষকের শাস্তি চাইছেন ভালো কথা তবে ধর্ষকের পিতা শেখ মুজিব আর আশ্রয়দাতা মা শেখ হাসিনার দিকে আপনাদের নেক নজর দিতে ভুলবেন না। ধর্ষকের পাইপলাইন বন্ধ না করতে পারলে এসব প্রতিবাদে কোনো ফায়দা নেই, পটেনশিয়াল ধর্ষকের যে কারখানা মুজিব চালু করেছে এবং শেখ হাসিনা টেক কেয়ার করছে তা থেকে প্রোডাক্ট তৈরি হবেই।

পঠিত : ৪৩২ বার

মন্তব্য: ০