Alapon

ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের বর্তমান হালচাল...


ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান। ইন্দোনেশিয়ার পর সবচেয়ে বেশী মুসলিম এখানে বসবাস করে। পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর একমাত্র মুসলিম দেশ। পাকিস্তানের কাছে রয়েছে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী। এত সবকিছুর পরও পাকিস্তান কাশ্মীরের স্বাধীনতা দিতে পারে নি। পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হয় নি। এমনকি পাকিস্তানের গণতন্ত্র চর্চাও সঠিকভাবে হয় নি। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের অবস্থা হয়ে আছে খুবই নাজুক।

২০১৮ সালে ইমরান খান নয়া পাকিস্তান তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সত্যি সত্যিই পরিবর্তন ঘটেছিলো। কারণ এর আগে পাকিস্তানে বেশ কয়েকবার সেনাশাসক ক্ষমতায় ছিলো। পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৩ বার ক্ষমতায় ছিলো। পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ ৩ বার ক্ষমতায় ছিলো। তখন এই প্রথমবার পাকিস্তান পেতে যাচ্ছিলো এক নতুন প্রধানমন্ত্রী এক নতুন সরকার। পাকিস্তান এমন এক প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছিলো যিনি ছিলেন পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক, অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট এবং যাকে প্রত্যেক পাকিস্তানি খুব ভালো করে চিনতো। সব মিলিয়ে নয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাকিস্তানের জনগণের প্রচুর চাওয়া ছিলো। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কী জনগণের সব চাওয়া পূরণ করতে পারবেন? তিনি এই মুহূর্তে কতটুকু সফল? সর্বোপরি পাকিস্তানের অবস্থাই বা এখন কেমন?

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শুরু করা যাক। বাংলাদেশীদের কাছে রিসেপ তাইফ এরদোয়ান পর সবচেয়ে জনপ্রিয় মুসলিম নেতা হচ্ছেন ইমরান খান। ইমরান খান তার বক্তব্য ও অবস্থানের কারণে মুসলিম বিশ্বে ও বর্হিঃবিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের সরকার প্রায় ৮০ হাজার কোটি পাকিস্তানি রুপির সরকারি অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়। ইমরান খানের সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি অনেক পরিষেবা সহজলভ্য হয়েছে। ইমরান খান সরকার পাকিস্তানের কিছু পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ৩ বার প্রস্তাব পাস হয়েছে। ইরানের সাথে সম্পর্ক কিছুটা ভালো হয়েছে। তুরস্কের সাথে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তালেবানের আফগান শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণ। এগুলো ইমরান খান ও তার সরকারের অর্জন। কিন্তু এতো সব অর্জনের পর ব্যর্থতাও আছে।

ইমরান খান যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন ১ ডলারের দাম ছিলো ১৩৩ পাকিস্তানি রুপি। আজ দু বছর পর ১ ডলারের দাম হয়েছে ১৬৭ পাকিস্তানি রুপি। পাকিস্তানি রুপির ক্রমাগত দরপতনের কারণ কিছুটা ইমরান খানের পূর্বসূরি সরকারের আমলে সৃষ্ট আর বেশ খানিকটা ইমরান খান সরকারের অযোগ্যতার কারণে সৃষ্ট। ইমরান খান যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব নেন তখন চিনির দাম ছিলো ৭০ রুপি। এখন তা ১১০ রুপি। ইমরান খান যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন আটার দাম ছিলো ৪০ রুপি এখন তা আরও কয়েকগুণ বেড়ে কখনো ২০০ রুপি কখনো বা ১১০ রুপি।

পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচির অধিকাংশ বাসিন্দা বিশুদ্ধ খাবার পানি পায় না (উল্লেখ্য করাচি পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের রাজধানী এবং সিন্ধে এখন পাকিস্তান পিপলস পার্টির সরকার)। সিন্ধে পাকিস্তান পিপলস পার্টির সরকার থাকলেও জনগণ ও সিন্ধ সরকারের অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকার তার দ্বায়িত্ব পালন করে নি আর কেন্দ্রীয় সরকার বলছে সিন্ধ সরকার আমাদের কাজ করতে দেয় নি এবং আমাদের সহায়তা করে নি। কিছু দিন আগে সামান্য বৃষ্টিতে করাচির সব রাস্তাঘাট ডুবে যায়, লোকজন গাড়ি, আসবাবপত্র সব ভেসে যায়। যার জন্য দ্বায়ী সিন্ধের সরকার ও ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়াও আরও অনেক কারণে ইমরান খান সরকার ব্যর্থ। সব মিলিয়ে ইমরান কিছুটা সফল এবং বেশ খানিকটা ব্যর্থ।

প্রথম প্রশ্নের উত্তরে দেওয়া যাক। ইমরান খান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মদিনার মানবকল্যাণ রাষ্ট্রের মতো পাকিস্তান তৈরি করবেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তিনি এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে অনেকাংশে ব্যর্থ। তবে তিনি অনেক নতুন পরিকল্পনা করেছেন। তিনি যদি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেন তাহলে হয়তো দৃশ্যমান কিছু উন্নতি হবে। ইমরান খান তার পূর্বসূরি সরকারের ঋণের বোঝা আরও বহুগুণ ভারী করে বয়ে চলেছেন। যার ফলে বর্তমানে পাকিস্তানের বাজেটের ৪১ শতাংশ ঋণের কিস্তি হিসেবে চলে যায়। তবে ইমরান খান অনেক সম্ভাবনাময় ও বাস্তবায়ন যোগ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন। এর ফলে আশা করা যায় যে, পাকিস্তানের দৃশ্যত কিছু উন্নতি হতে পারে আগামী ৩ বছরে। ফলে আশা করা যায় ইমরান খান তার প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুই হয়তো পূরণ করতে পারবেন।

তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক। পাকিস্তানের অর্থনীতির হাল আগের মতোই। কিছু ক্ষেত্রে ভালো আর কিছু ক্ষেত্রে খারাপ। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খানের সরকার বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। প্রত্যেক বিরোধী দলীয় নেতা যেমন - নওয়াজ শরীফ, মরিয়ম নওয়াজ শরীফ, শাহবাজ শরীফ, আসিফ আলী জরদারি, বিলওয়াল ভুট্টো জরদারি, মাওলানা ফজলুর রহমানের ভাই সহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে প্রমাণিত দুর্নীতির মামলা চলছে। ফলে বিরোধী দলগুলোর অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল তাই তারা সরকারের পতন ঘটানোর মতো শক্তিশালী নয়। তাই বিরোধী দলগুলো তাকিয়ে আছে NRO এর দিকে। NRO মানে হলো (National Reconciliation Ordinance) জাতীয় রাজনৈতিক সমঝোতা।
এনআরও এর মাধ্যমে বিরোধী দল গুলো ইমরান খান সরকারকে বলেছে যে, আপনি (NAB- National Accountability Bureau) এর আইনে সংশোধন করে আমাদের দুর্নীতি মামলার হাত থেকে বাঁচান। আর বিনিময়ে আমরা আপনাকে দেশ চালাতে সাহায্য করবো। তো ইমরান খান এতে রাজি হন নি। ফলে বিরোধী দল সেনাপ্রধানের সাহায্য কামনা করে। তখন সেনাপ্রধান বলেন আদালতের বিষয় আদালতে আলোচনা করুন। আমি এই বিষয়ে কিছুই করতে পারবো না। কার্যত বিরোধী দল যত কিছুই করুক তার পাকিস্তানের সরকারের সামনে অসহায়। এই হলো পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা।

সর্বোপরি ইমরান খান যদি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন তাহলে পাকিস্তান বেশ ভালো অবস্থানে পৌঁছাবে। ইমরান খান পাকিস্তানের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যার পরিচ্ছন ভাবমূর্তি আছে। ইমরান খান হয়তো হতে চলেছেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পুরো ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করবেন। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। পাকিস্তান যুদ্ধ ছাড়া হয়তো কাশ্মীর সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান করতে পারবে না। সব মিলিয়ে এখন পাকিস্তানের অবস্থা ভালো নয়। তবে ভবিষৎে ভালো হতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ DAWN
GNN NEWS
BBC WORLD NEWS
Aljazeera
- জান্নাত

পঠিত : ৫৯৫ বার

মন্তব্য: ০