Alapon

বাংলাদেশ কি ধর্ষণের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে...?



ধর্ষণ! ধর্ষণ শব্দটা দিন দিন বাংলাদেশের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে। একটা সময় আমাদের পাশ্ববর্তি দেশ ভারতে আশঙ্কাজনকহারে ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন আমরা ভারতকে ট্রল করে বলতাম, রেপের দেশ রেন্ডিয়া। আজ আমার সোনার দেশ বাংলাদেশ দিন দিন রেপের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর তথ্যমতে গত ৮ মাসে বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮৮৯ টি। এই ৮৮৯ টি ধর্ষণের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে। এই হিসাব মতে গত ৮ মাসের গড় হিসাব করলে প্রতিমাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১১ টি। আর এর গড় হিসাব করলে বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩.৭ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। আর গতবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, ১৪১৩ টি।

দিন দিন ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। সবচেয়ে অশনি সংকেত হল, একটা সময় ধর্ষণ করতো যারা চিহ্নিত বখাটে বা সন্ত্রাসী, তারা। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী।

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বৈশাখী মেলায় প্রকাশ্য দিবালোকে বেশ কয়েকজন নারীকে শ্লীতাহানি করা হয়েছিল। প্রাথমিভাবে মনে করা হয়েছিল, এমন নেক্কারজনক কাজ হয়তো দাগী সন্ত্রাসীরা ঘটিয়েছে। কিন্তু পরবর্তি অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্ষকরা প্রায় প্রত্যেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, সেই ধর্ষকদের কাউকেই কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। কারণ, তারা ছিল সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মী।

সিলেটের ঘটনাও নতুন কিছু নয়। সিলেটে যে ফিল্মি স্টাইলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তার সাথে জড়িত সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হল, তারা সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা।

সিলেটের ঘটনার দিকে একটু গভীর দৃষ্টি দিলেই পুরো বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠবে। সিলেটের ঘটনার সাথে যে ছয়জন ছাত্রলীগ নেতা জড়িত, তারা যে আজই প্রথম এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তা কিন্তু নয়। বরঞ্জ তারা নিয়মিতই এমন কাজ করে যাচ্ছিল বিধায় এভাবে ফিল্মি স্টাইলে ধর্ষণ করার সাহস করেছে।

পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, এর আগে বিভিন্ন সময় গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড সিলেট এমসি কলেজে বেড়াতে গেলে, অভিযুক্তরা তাদের জিম্মি করতো। জিম্মি করে তাদের ছবি তুলত এবং পরিবারের কাছে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিত। তারপর তাদের কাছে টাকা দাবি করতো। এরপর ছেলেকে আলাদা একটি রুমে বন্দি করে মেয়েকে ধর্ষণ করা হতো। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে বলে পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম। সেগুলো প্রকাশ পায়নি কারণ, তারা স্বামী-স্ত্রী ছিল না তাই! কিন্তু এবারের ঘটনাটা ছিল ব্যতিক্রম। এবার তারা স্বামীকে বন্দি করে রেখে স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালায়। অভিযুক্তরা ভেবেছিল, অন্যান্য সকল ঘটনার মত ভিক্টিম হয়তো লজ্জা থেকে কিছুই বলবে না। কিন্তু এবার আর তা হয়নি! কথায় আছে, চোরের দশদিন গেরোস্তের এক দিন। আজ সেইদিন। আজ তাদের সকল অপকর্ম ফাঁস হয়ে গেছে।

কিন্তু এটাই কি শেষ ধর্ষণ?

প্রতিটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর চারদিক থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বড় বড় সভা সমাবেশ হয়, ধর্ষকদের বিচার দাবি করা হয়। আর এসবের কারণে চাপে পড়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। তারপর? তারপর জাতির সামনে নতুন একটি ঘটনা আসে, সবাই নতুন ঘটনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পুরনো ঘটনার কথা সবাই ভুলে যায়। যেমন করে সবাই ভুলে গেছে কুমিল্লার তনুর কথা।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী তনুকে আজ থেকে চার বছর আগে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছিল। তখনও সবাই বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ অবধি তনু হত্যার সাথে জড়িত এমন একজনকেও গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পারেনি।

এই বিচারহীণতা বা বিচার করতে না পারার দরুন দিন দিন বাংলাদেশে ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে ধর্ষণ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি দায়িত্বজ্ঞানহীণতার পরিচয় দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এটি একটি জাতীয় সমস্যা। আর এই জাতীয় সমস্যাকে মোকাবেলায় সকল রাজনৈতিক দলের একসাথে কাজ করা উচিত ছিল। কিন্তু প্রত্যেকেই প্রত্যেকের এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত! মাঝখানে ইজ্জত হারা হচ্ছে সাধারণ মানুষ! জীবনহানি হচ্ছে আমপাবলিকের! বিচারহীণতার এই চর্চা চলতে থাকলে বাংলাদেশের অপর নাম ধর্ষণের দেশে পরিণত হতে খুব বেশিদিন সময় লাগবে না।

পঠিত : ৪১৫ বার

মন্তব্য: ০