Alapon

ইসলামপূর্ব পারস্য সাম্রাজ্য কেমন ছিল...?



তাদের নৈতিক অধঃপতনের এই অবস্থা ছিলো যে নিকট আত্মীয়র সাথে যেমন পিতার সাথে কন্যা, পুত্রের সাথে মাতার দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপনকে ঘৃণ্য ও অবৈধ বলে স্বীকার করত না। সম্রাট ২য় ইয়াযদাগির্দ, যিনি ৫ম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রাজত্ব করেছেন, তার আপন কন্যাকে বিবাহ করেন অতঃপর তাকে হত্যা করেন। খ্রি. ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শাসক বাহরাম আপন বোনকে বিবাহ করেন বরং একে ইবাদত ও পুণ্য কর্ম মনে করা হতো।

বিখ্যাত চীন পর্যটক হিউয়েন সাঙ বর্ণনা করেন যে, ইরানী আইনে ও সমাজে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কোন প্রকার সম্পর্কেও বাছ-বিচার ছিলো না।

এর মাঝে খ্রি.৩য় শতাব্দীতে একটি দর্শন গড়ে উঠে মানী’র দর্শন। তার আন্দোলন ছিলো বস্তুতপক্ষে দেশের ক্রমবর্ধমান তীব্র যৌনপ্রবণতার বিরুদ্ধে এক অস্বাভাবিক প্রচন্ড প্রতিক্রিয়া এবং আলো ও আঁধারের মনগড়া দ্বন্দ্বের ফলশ্রুতিস্বরুপ। তার দর্শন ছিলো চিরকুমার থাকার মাধ্যমে দুনিয়া থেকে যাবতীয় মন্দ ও অন্যায়-অনাচারের জীবানু নিশ্চিহ্ন করা। আর এর ভিত্তিতে তিনি বিয়েকে হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন যাতে মানুষের বংশবিস্তার না ঘটতে পারে এবং এর মাধ্যমে মানব জাতির অবলুপ্তি ঘটানো। তৎকালীন সম্রাট বাহরাম মানীকে হত্যা করেন যদিও তার প্রচারিত শিক্ষা বহু দিন যাবত বেঁচে ছিলো।

মানীর পর ঠিক তার বিপরীত আরেকটি দর্শন সেসমাজে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।
তিনি ছিলেন মাযদাক।

তিনি প্রচার করতে থাকেন, তামাম মানবগোষ্ঠী অভিন্নভাবে জন্মগ্রহণ করেছে কাজেই তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অতএব প্রত্যেকেরই অপরের মালিকানায় সমঅধিকার রয়েছে। আর যেহেতু সম্পদ ও নারীই এমন দুটো উপাদান যার নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ মানুষ যতেœর সাথে করে থাকে তাই এই দুটো ক্ষেত্রে সাম্য ও সমশরীকানা সর্বাধিক প্রয়োজন।

মাযদাক মহিলাদেরকে সকলের জন্য বৈধ সাব্যস্ত করেন এবং বিত্ত-সম্পদ ও নারী আগুন, পানি ও ঘাসের মত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ও ব্যবহারযোগ্য ঘোষণা দেন।

এর ফলাফল হলো এই যে যুবক ও ভোগলিপ্সু বিলাসপ্রিয় লোকেদের পোয়াবারো অবস্থা, তারা এই আন্দোলনকে সোৎসাহে অভিনন্দন জানাল। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যপার হলো ইরান সম্রাট কুবায স্বয়ং এর নেতৃত্ব গ্রহন করেন যার ফলে সমগ্র ইরান এই যৌন অনাচার ও অরাজকতার প্লাবনে নিমজ্জিত হয়েছিলো। এই আন্দোলন এতটা শক্তি সঞ্চয় করে যে, যে চাইত, যার ঘওে চাইত ঘরের মাল-মাত্তা ও মাহিলাদেরকে ভোগ-দখল করত। বাড়ির মালিক কিছুই করতে পারত না। ফল দাঁড়ালো এই যে, দেখতে না দেখতেই এমন অবস্থা হলো যে, বাপ তার সন্তানকে যেমন চিনতে পারত না, তেমনি সন্তান চিনতে পারত না তার বাপকে। কারোরই কারোর মালিকানাধীণ জিনিসের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিলো না, দখল ছিলো না।

একটু ভেবে দেখুন তো, আপনি আপনার প্রানপ্রিয় স্ত্রীকে রাত্রীযাপন করছেন হঠাৎ একদল বখাটে যুবক আপনার ঘরে ঢুকে আপনার সামনে আপনার স্ত্রীকে ভোগ করা শুরু করলো কিন্তু আপনার বাধা দেওয়ার কোন অধিকার নেই। তখনকার অবস্থা ছিলো ঠিক এরকম। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে এরুপ কিছু অদ্ভুদ কিসিমের বুদ্ধিজীবীর দেখা মেলে যারা মনে করে “আমার শরীর আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো !

আর সরকারের প্রভাবশালীমহলের কিছু অংশ তাদের সাথে তাল মিলাতে চাচ্ছে। এরকম অবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয় তাই সকলকে সচেতন থাকা দরকার এবং প্রতিরোধের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত।

পারস্য সমাজের শ্রেণী বিভাজন:
তখনকার পারস্য সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে ব্যবধান ও দূরত্ব ছিলো আমাদের ভাবনারও বাইরে। হুকুমতের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণের প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা ছিলো যে;
১. তারা কোন আমীর-উমারার স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবে না;
২. কোন লোক জন্মসূত্রেপ্রাপ্ত মান-সন্মানের চাইতে বড় কোন কিছুর প্রতাশী হবে না;
৩. কোন লোকের পক্ষে তার জন্মগত পেশা পরিত্যাগ কওে অন্য কোন পেশা গ্রহণ করা বৈধ ছিলো না;
৪. পারস্য সম্রাটগণ হুকুমতের কোন কাজ কিংবা দায়িত্ব কোন নীচ শ্রেণী কিংবা বংশের লোকদের সোপর্দ করতেন না;
৫. সাধারণ গণমানুষের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সুস্পষ্ট বৈষম্য ও ভেদ-রেখা ছিল;
৬. সমাজে সকলের জন্য ছিলো সুনির্ধারিত স্থান যার বাহিরে কেউ যেতে পারতো না।

–(তথ্যসূত্র: মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কি হারালো – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী)

-রবিন

পঠিত : ৪৪৯ বার

মন্তব্য: ০