Alapon

চীনের কল্যাণে তিস্তা নদী কি নাব্যতা ফিরে পেতে যাচ্ছে...?


তিস্তা, রংপুর অঞ্চলের প্রাণ! এই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা। আমার বাড়ি যেহেতু রংপুর, তাই প্রায়শ তিস্তা নদী পাড়ি দিতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে যখন সেতু দিয়ে তিস্তা নদী পার হই, তখন একরাশ আফসোস বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে যায়! এতোবড় নদী, অথচ পানি নেই। যতোদূর চোখ যায়, শুধু বালু আর বালু! এ যেন একটা ছোট্ট খাল।

তিস্তা নদী হিমালয়ে জন্ম নিয়ে ভারতের সিকিম রাজ্য হয়ে পশ্চিম বঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে প্রবেশের মুখে ভারত ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর থেকেই চঞ্চল খরস্রোতা তিস্তা নদী যেন মৃতপ্রায় হয়ে গেছে। বাঁধ দেওয়ার সময় ভারত যদিও বলেছিল, বাংলাদেশকে ন্যায্য পরিমাণ দেওয়া হবে! কিন্তু তা কেবল মুখের কথার মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে ভারতের সাথে তিস্তার পানি নিয়ে আলোচনা করেছিল। সেই কিন্তু সেই আলোচনা আলোর মুখ দেখতে পারেনি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের বিরোধীতার কারণে। এরপর থেকে বাংলাদেশ সরকার তিস্তা নদী নিয়ে আর কোনো আলোচনায় যায়নি।

অতি সম্প্রতি তিস্তা নদী আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তিস্তা নদী প্রসঙ্গ এখন যতোটা না বাংলাদেশের মাথাব্যাথার কারণ, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভারতের মাথাব্যাথার কারণ। কারণ, তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে চীন সরকার বাংলাদেশকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করতে যাচ্ছে। আর এই সংবাদ চাউর হওয়ার সাথে সাথে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধণ সিংহ বাংলাদেশে আকর্ষিক সফরে আসেন। যদিও সেই সফরে তিনি কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, তা ভারত বা বাংলাদেশ কোনো সরকারই প্রকাশ করেনি। তবে এতোটুকু ধারণা করা যায়, হর্ষ বর্ধণের আগমনের কারণ তিস্তা নদীতে চীনের অর্থায়ন।

মূলত তিস্তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১১০ কিলোমিটার বিস্তৃতি নিয়ে অবস্থান করছে। দির্ঘদিন থেকে পলি জমে থাকার কারণে বর্ষামৌসুমে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেয় এবং আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীণ হয়ে যায়। এভাবে প্রতিবছর তিস্তা নদীর আশেপাশের এলাকাগুলোতে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। চীনের অর্থায়ন যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে ১১০ কিলোমিটার বিস্তৃতি জুড়ে পলি মাটি অপসারণ করা হবে এবং নদীর প্রস্থ ৫-৬ কিলোমিটার কমিয়ে তা ১ কিলোমিটারে পরিণত করা হবে। এতে করে নদী গর্ভে বিলীণ হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার করা যাবে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে এসব এলাকায় পানির অভাবে চাষাবাদ প্রায় হয় না বললেই চলে। বছরে প্রায় দুই মাস এসব এলাকায় কোনো চাষাবাদ হয় না। তাই উক্ত প্রকল্পনুসারে তিস্তার পানি সংরক্ষণে খাল, ক্যানেল ও পুকুর বানানো হবে। আর সেসবে পানি সংরক্ষণ করা হবে। একই সাথে ১১০ কিলোমিটার জুড়ে পাড় নির্মাণ করা হবে, যেন বর্ষা মৌসুমে আবার ভাঙ্গন না দেখা দেয়।

যদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়, তবে আশা রাখা যায় তিস্তা নদী তার হারানো নাব্যতা ফিরে পাবে। একই সাথে তিস্তা পাড়ের মানুষদের যে অর্থনৈতিক দৈন্য অবস্থা তা অনেকটাই লাঘব হবে বলে আশা করা যায়। একই সাথে বর্ষা মৌসুমে ভারত যখন ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি করে, তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। আর এ কারণে ভারতও আর অতিরিক্ত পানি জমিয়ে রাখার সাহস করবে না। কারণ, অতিরিক্ত পানি জমিয়ে রাখলে বর্ষাকালে যে প্লাবনের সৃষ্টি হয়, তা ছেড়ে দেওয়ার আর কোনো পথ থাকবে না। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গই ডুবে যাবে। ফলে তারা বাংলাদেশকে ন্যায্য পরিমাণ পানি নিজের গরজেই প্রদান করবে।

একইসাথে বাংলাদেশ সরকারকে তিস্তার পানির জন্য ভারত সরকারের দিকে চাতক পাখির মত চেয়ে থাকতে হবে না। কবে মমতা ব্যাণার্জির মন গলবে সেই আশায় প্রহর গুনতে হবে না। আশা করছি, সরকার খুব দ্রতই এ বিষয়ে একটি কার্যকরি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে এবং উত্তরবঙ্গের মানুষের দির্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব করবে।

পঠিত : ৬৬২ বার

মন্তব্য: ০