Alapon

ক্রাইসিস মানুষকে বড়ো করে...


আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন বাইক চালানো শিখি। আব্বার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছোট চাচ্চু আমাকে বাইক চালানো শেখাতো।

চাচ্চু আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে বলল, আমি পিছনে বসতেছি তুমি চালাও! প্রথম ১০ মিনিট চালানোর পর আমার সাহস বেড়ে গেল! সবগুলো গিয়ার দিয়ে ইচ্ছে মত পিকআপ টানতে শুরু করলাম। চাচ্চু পিছন থেকে আমার হাত চেপে ধরে বাইক থামাতে বলল।

বাইক থামানোর পর বিরক্ত ভরা দৃষ্টি নিয়ে বলল, এভাবে বাইক স্পিডে চালালে জীবনেও চালানো শিখতে পারবে না৷ প্রথমে স্লো চালাও। বাইক স্লো চালালে কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো খেয়াল করতে পারবে। আর সমস্যা ধরতে পারলে দক্ষ চালক হতে পারবে।

তারপর চাচ্চু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, বাইক চালানো শেখা হয়ে গেলেই ঘন্টায় ১১০ কি.মি বেগে চালাতে যেও না। আগে বাইকের উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে শেখো, তারপর ইচ্ছেমত গতি বাড়াও। নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই যদি ইচ্ছেমত গতি বাড়িয়ে ঘন্টায় ১১০ কি.মি বাইক চালাতে যাও, আর তারপর যদি পড়ে যাও, তাহলে আর কখনো উঠে দাঁড়াতে পারবে না। তোমার ভবলিলা সেখানেই সাঙ্গ হয়ে যাবে।

আর তুমি যদি ঘন্টায় ৪০-৪৫ কি.মি বেগে বাইক চালাতে গিয়ে পড়ে যাও, তাহলে হয়তো তোমার হাত অথবা পা ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু সুস্থ হবার পর আবার বাইক চালাতে পারবে। ফলে, গতবার যে ভুলের কারণে তুমি এক্সিডেন্ট করেছো দ্বিতীয়বার আর সেই ভুল হবে না। আর এভাবেই একসময় তুমি দক্ষ চালক হতে পারবে।

জীবনের ক্ষেত্রেও তা-ই! আমার দেখা এমন অনেকেই আছে যারা জীবনের রেসে প্রথমবারই ১১০ কি.মি বেগে বাইক চালাতে চায়। বাইকের নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলে নতুন চালকের যেমন এক্সিডেন্ট করার সম্ভাবনাই বেশি, তেমনি জীবনের রেসেও প্রথমবারই ১১০ কি.মি বেগে বাইক চালাতে গেলে এক্সিডেন্ট করার সম্ভাবনাই বেশি।

বাইক চালানো শিখতে হলে যেমন স্লো চালানো প্রয়োজন, তেমনি জীবনের রেসেও রাস্তা দেখে শুনে, ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে বাইক চালানো প্রয়োজন৷ আর তাতেও যদি এক্সিডেন্ট হয়, তাতে হয়তো কিছুটা ক্ষতি হবে সত্য! কিন্তু এই ক্ষতি আপনাকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে সহায়তা করবে। জীবনে বড় হতে অভিজ্ঞতার বড়োই প্রয়োজন। ফলে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার জীবনে চলার পথে কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে! আর সমস্যা ধরতে পারলে সেই ভুল আপনি জীবনে আর দ্বিতীয়বার করবেন না, এ কথা নিশ্চিত।

কিন্তু যদি জীবনের রেসে ১১০ কি.মি বাইক চালাতে গিয়ে একবার পড়ে যান, তাহলে আর উঠে দাড়াতে পারবেন না! আপনার জীবনের রেস সেখানেই সমাপ্ত হয়ে যাবে! তাই জীবন নিয়ে প্রথমবারই বাজি ধরতে যাবেন না। আগে পথ চলা শিখুন। ছোট্ট ছোট্ট কিছু এক্সিডেন্ট করুন। তারপরই দ্রুত বেগে বাইক চালানোর আত্মবিশ্বাস পাবেন। মনে রাখবেন, ক্রাইসিস মানুষকে বড়ো করে। তাই কোনো ক্রাইসিস বা বিপদ-আপদে ভেঙ্গে পড়বেন না। ধৈর্য ধরুন। দেখবেন, সেই ক্রাইসিস থেকে পাওয়া শিক্ষাই একদিন আপনাকে বড়ো হতে সাহায্য করছে।

পঠিত : ৩২৯ বার

মন্তব্য: ০