Alapon

আগুনে জ্বলা এমসি ক্যাম্পাস ইজ্জতটাও জ্বালিয়ে দিল...



নান্দনিক স্থাপত্যের সুবিশাল আয়তনের সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের সাথে জড়িয়ে এই কলেজের হাজারো ছাত্রের আবেগানুভূতি। হোস্টেলের সামনে সুবিশাল মাঠ। খোলা মেলা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। ৬টি ব্লকে ভাগ করা হোস্টেল ভবন। প্রতিটি ব্লক দৈর্ঘ্যে কয়েক শ’ ফুট লম্বা। এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকের দূরত্বও অনেক। ৪র্থ ও ৫ম ব্লকের মাঝে রয়েছে ছাত্রদের গোসলের জন্য পুকুর। ছায়া ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের এমন হোস্টেল এদেশে তো নেই-ই, এই উপমহাদেশেও বিরল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো হোস্টেল ভবনের ভিন্নধর্মী স্থাপত্য শৈলী। স্থাপত্যকলায় সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘সেমি পাক্কা আসাম টাইপ’-এর এত বিশাল ভবন বিশ্বের কোথাও হয়তো এখন আর অবশিষ্ট নেই। উপযুক্তভাবে বহির্বিশ্বে উপস্থাপিত হলে অনেক আগেই এই হোস্টেলকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করতো ইউনেস্কো।

১৯৮২-৮৩ সালের বিকালের দিনগুলো এই ছাত্রাবাসের সামনে বসে কাটিয়েছি। সাইকেল চালানো ও ফুটবল খেলার কথা আজো ভুলি নি। ক্যামরা সহজ লভ্য ছিলনা বলে ছাত্রাবাসের সামনে দাঁড়িয়ে একটি ফটো তোলার ব্যর্থ সাধের কথা এখনও মন থেকে মুছে যায়নি। টিলাগড়, শিবগঞ্জে তখনও ফটো স্টুডিও গড়ে উঠেনি। অদূরের মিরা বাজার থেকে ক্যামরা ম্যান ভাড়া করে সখ পূরণ করার মত দুঃস্বপ্ন ছাত্র জীবনের সময়গুলোতে ভাবতে পারিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক ছাত্রাবাস দেখেছি, তবে সেগুলো কোন অবস্থাতেই এম, সি কলেজ ছাত্রাবাসের মত নান্দনিক নয়। এটি সিলেট শহরের গৌরব। তার সৌন্দর্য, আকর্ষণ, মর্যাদাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল। সিলেটে আগত কোন স্কুল ছাত্র যদি এই হোস্টেলের দেখা পেত, সে তার পিতাকে এই কলেজে পড়ানোর জন্য বায়না ধরবেই! ছাত্রাবাসের সামনে বিশাল মাঠ, কমপক্ষে চারটি স্টেডিয়ামের সমতুল্য আয়তন। পিছনে দীর্ঘ পাহাড়ের সাড়ি, পাহাড়ে প্রচুর বানরের উৎপাত, পাখিদের কোলাহল এখনও ভুলিনি।

শত বছরের পুরানো এ ধরনের একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে ছাই করে দিয়েছিল, তদানীন্তন জমানার সরকারী ছাত্র সংঘটন। ঘটনাটি ১০ ই জুন ২০১২ সালের। এই দৃশ্য দেখে সারা দেশের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যায়। তদানীন্তন শিক্ষা মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ভয়ংকর ধ্বংস যজ্ঞ দেখে শিশুদের মত কেঁদে ফেলেছিলেন! এর বিচার কোনদিন কখনও হয়নি। কাউকে তিরস্কৃতও হতে হয়নি! ঐতিহাসিক দিক দিয়ে, মূল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেভাবে বিনষ্ট হল তার দায় কেউ নেয়নি। আবার অসহায় জনগণের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেই জায়গায় পাকা হোস্টেল হল। সেখানেও দুই নম্বরি হল।

আজ সেই এম সি কলেজ হোস্টেলে ঐতিহাসিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটল। এরা ছাত্র নাকি দুর্বৃত্ত। নাকি জাতিয় কুলাঙ্গার বলা হবে। এ ধরনের লম্পটেরাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কাণ্ডারি হবে! শাস্তি না হবার কারণে, তাদের এসব ঘৃণিত কর্মকাণ্ড নিত্য-নতুন কাহিনীর ভিড়ে চাপা পড়ে যাবে। বীরত্ব প্রকাশকারী শত ধর্ষণের কাণ্ডারিও ইতিমধ্যেই আমাদের গুরু সেজে সরকারী গাড়ীতে চড়ে উপদেশ দিয়ে বেড়াচ্ছে! এ দেশে সবই সম্ভব। প্রতি বছর এদের সংখ্যা এভাবেই বাড়ছে। সরকারী সম্পদ ধ্বংস করেও যাদের ন্যুনতম বিচার হয়নি, একজন গরীব অসহায় নাগরিকের নিরীহ বউকে ধর্ষণ করার শাস্তি, থোরাই হবে এদেশে? এই সাহস তাদের নির্ভয় করে দিয়েছিল।

নিজেকে সেই ঘটনায় রেখে একটু ভেবে দেখুন তো। নিজের হাত-পা বেধে রেখে, পাশেই নিজের অসহায় স্ত্রীর উপর পাশবিক নির্যাতন হচ্ছে। এ দৃশ্য ভাবতে কেমন লাগে! স্বামী হল মহিলাদের সবচেয়ে বড় নির্ভরতার প্রতীক। বন্ধী স্বামীকে রেখে সে মহিলা তখন কার কাছে সাহায্য চাচ্ছিল? এসব মাদকাসক্ত ছেলেদেরকে সে মহিলা কি বাপ-ভাই বলে মাপ চাচ্ছিল? আমরা তো পাকিস্তানিদের ধর্ষণের কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলি, এখন কি সেই জঘন্য ইতিহাসের ঘটনা আমাদের ছাত্রদের কল্যাণে চাপা পড়বে। আমরা কি এই কর্মেও পাকিস্তানি সৈন্যদের হার মানাতে চলছি।

- tipu

পঠিত : ৪২৯ বার

মন্তব্য: ০