Alapon

ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন এবং কিছু কথা...



জন্মদিন পালন যে ইসলামে নিষিদ্ধ সেটা অনেকেই জানেন। তবে মানার ক্ষেত্রে চলে আসে আধুনিকতা। তাই সে সম্পর্কিত আলোচনা বিস্তারিত করব না। অনেকেরই খারনা এটা খ্রিষ্টান সংস্কৃতি তবে আপনি কি জানেন এই জন্মদিনের সংস্কৃতি খ্রিষ্টান কিংবা ইহুদি সংস্কৃতি নয়। এটির সূচনা করেন মিশরের রাজা ফারাও যাকে খ্রিষ্টানরাও শয়তান মনে করত। আপনি খোঁজ নিলে জানতে পারবেন এখনও অনেক খ্রিষ্টান আছে যারা জন্মদিন পালন করেন না।
এই যে আমরা উইশ করি 'শুভ জন্মদিন', এইটার কারণটা কি জানেন আপনি?

জন্মদিনের ইতিহাস নিয়ে রচিত একটি বই থেকে বিষয়টি তুলে ধরছি, "মূলত [জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং সুখের শুভেচ্ছের] ধারণাটি মূলত যাদুতে জড়িত।জাদুবিদ্যার প্রধান ব্যবহার হল ভাল-মন্দের জন্য মন্ত্র বানান । একজন বিশেষত তার জন্মদিনে এই ধরনের মন্ত্রের প্রতি সংবেদনশীল, যেমন একজনের আত্মা তখন তার কাছে উপস্থিত হয়।জন্মদিনের শুভেচ্ছা ভাল বা অসুস্থ করার ক্ষমতা রাখে কারণ এটা আত্মিক জগতের কাছাকাছি দিন। এইদিনের শুভকামনা সৌভাগ্য নিয়ে আসে, তবে বিপরীতটিও সত্য। তাই এক এড়ানো উচিত নয়। একজনের জন্মদিনে তাকে তার শত্রু নয় এবং কেবল শুভাকাঙ্ক্ষীদের দ্বারা ঘিরে রয়েছে। ‘শুভ জন্মদিন’ এবং "দিনের অনেক শুভ প্রত্যাবর্তন" হ'ল চিরায়ত শুভেচ্ছা "

জন্মদিনের উপহার দেওয়া পৌত্তলিকদের বলিদানের সাথে সম্পর্কিত একটি প্রথা। অবশ্যই সেই প্রথাটি একই কুসংস্কারের সাথে যুক্ত ছিল জন্মদিনের শুভেচ্ছা জন্য অনুষ্ঠান করা, উপহারের বিনিময়-এর সাথে জড়িত তাদের বা আমাদের জন্মদিনে ভাল এবং অশুভ জড়িয়ে রয়েছে " জন্মদিনের কেক এবং মোমবাতিগুলিরও প্রাচীন পৌত্তলিক মূর্তিকেউৎসর্গ করা হয় এবং এতে তাদের জন্য রয়েছে উপাসনা। প্রাচীনরা বিশ্বাস করতেন যে মোমবাতির আগুনের যাদুকরী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা প্রস্তাব করেছিলো,মোমবাতিগুলির শিখায় দেবতাদের কাছে প্রার্থনা ও শুভেচ্ছা নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এইভাবে আমাদের এখনও শুভেচ্ছা জানানো ও জন্মদিনের অনুষ্ঠানের প্রথা প্রচলিত রয়েছে, তারপরে মোমবাতিগুলি ফুটিয়ে তুলার।

গ্রীকরা তাদের চাঁদদেবী আর্টেমিসের জন্মদিন উদযাপন করেছিল কেক দিয়ে সজ্জিত করে ও আলোকিত মোমবাতি দিয়ে।

গ্রীকরা বিশ্বাস করত যে প্রত্যেকেরই একটি প্রতিরক্ষামূলক আত্মা বা ডেমন থাকে যারা তার জন্মের সময় উপস্থিত হয়েছিল এবং জীবনে তাঁর উপর নজর রাখে। এবং জন্মদিনে ইশ্বরের সাথে এই আত্মার এক মরমী সম্পর্ক তৈরি হয়। পৃথক জন্ম হয়, রোমানরাও এই ধারণার বহন করে।

কেকগুলিতে আলোকিত মোমবাতির প্রথা গ্রীকদের সাথে শুরু হয়েছিল। চাঁদ হিসাবে মধু কেক মন্দিরের বেদীতে স্থাপন করা হয় এবং টেপস সঙ্গে প্রজ্জ্বলিত করে [আর্টেমিস] । লোকবিশ্বাস যে জন্মদিনের মোমবাতিগুলি বিশেষ জাদুতে সজ্জিত।
শুভেচ্ছা, আলোকিত টেপারস এবং কোরবানি(কেক কাটা) ও আগুনের একটি বিশেষ রহস্যময় তাত্পর্য রয়েছে ।

যেহেতু মানুষ প্রথমে তাঁর দেবতাদের জন্য বেদী স্থাপন করেছিল। জন্মদিনের মোমবাতিগুলি এইভাবে একটি সম্মান এবং শ্রদ্ধা ও সন্তানের জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসুন " [The Lore of Birthdays by Ralph and Adelin and Linto] এবার আসুন হালকা স্বরেই ইসলামের একটু বলি। রাসূলে কারীম সা. বলেছেন – “যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে সে তাদের অনর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে।”

হযরত ইবনে উমার রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে,সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৪০৩১)

হাদিসের কথা বললে অনেকে বলেন কোরআন পড়, কোরআন পড়। তারা হয়তো মানেন না কিংবা জানেন না যে হাদিস কোরআনের ব্যাখ্যাস্বরূপ। তাও তাদের সন্তুষ্টি ও অবগতির জন্য উল্লেখ করছি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
{اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ } [الأعراف : 3]
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষথেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য সাথিদের অনুসরণ করনা।তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ’রাফঃ৩)

{ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ } [الجاثية : 18]
এরপর আমি আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের উপরঃ সুতরাং আপনি এর অনুসরণ করুন, মূর্খদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেননা।(সূরা যাসিয়াঃ১৮)

এখন কেও কেও বলবেন জন্মদিনের দিন রোজা রাখা, অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়াতে তো সমস্যা নেই। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অবশ্যই ইবাদাত করুন। ইবাদাতে কোন নিষেধাজ্ঞা কখনোই নেই। তবে ঐ দিন উপলক্ষেই নির্দিষ্ট করে ইবাদাত করতে হবে সেটা কি ঠিক? কেউ আমল করার জন্য এক বছর অপেক্ষা করুক এটা ইসলাম কামনা করে না। নির্দিষ্ট কোন দিনের জন্য আমলকে বাচিয়ে রাখা ইসলামের কর্মপন্থার বিরোধী। বরং নিয়মিত আমল স্বল্প হলেও আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দ। এ ব্যপারে হাদীসে শরীফে এসেছে
(عن عائشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه و سلم أحب الأعمال إلى الله تعالى أدومها وإن قل ( صحيح مسلم
হযরত আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট পছন্দনীয় আমল হচ্ছে নিয়মিত আমল, চাই তা কম হোকনা কেন।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৯৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৩)
পরিশেষে সংযুক্ত করতে চাই ,"The highest of holidays in the satanic religion is the date of ones own birth date"[The Satanic Bible]
এসব জানার পরও যদি আপনি জন্মদিন পালন নিয়ে উৎসুক থাকেন, এমনকি জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাওয়া কিংবা শুভেচ্ছা জানানোতে যদি ভেবে থাকেন আপনার ঈমানের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তাহলে আমি আর কিছুই বলবো না। আল্লাহ্ সুব'হানু তায়ালাই সব কিছু ভালো জানেন, তিনি সর্বজ্ঞাতা, সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা ও ক্ষমাশীল। আল্লাহ্ সকলকে মাফ করুন যারা আমরা নাবুঝে, না জেনে কিংবা শয়তানের ধোঁকায় ছোট থেকে গুরুতর অনেক পাপ করে ফেলেছি।আপনি ক্ষমা না করলে আমাদের মুক্তি নেই, আপনিতো পরম দয়ালু অসীম ক্ষমাশীল। আমিন।

- রাফুউন

পঠিত : ২২৪৬ বার

মন্তব্য: ০