Alapon

আবরার স্মৃতিতে অমলিন, কোন কথা লিখার কারণে তাকে মরতে হল?



আবরারের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। আল্লাহ তাকে জান্নাতের উচ্ছ্বসনে সমাসীন করুন। সে রাত্রে ঘুমাতে যাবার আগে তার পোষ্ট নজরে এসেছিল। উপরের দুই লাইন পড়ার পর, তার লিখার তথ্য ও বাচন ভঙ্গি আমাকে, বাকি লিখাটা পড়ার জন্য বাধ্য করেছে। তার ছোট্ট লিখায়, হতভাগা বাংলাদেশের এক তরুণ কলম যোদ্ধাকে আবিষ্কার করলাম। ভাবলাম পরবর্তী দিন তার প্রোফাইল পড়ে তাকে রিকোয়েস্ট পাঠাব।

প্রবাসের সময় রাত সাড়ে এগারটায় তার পোষ্ট দেখেছিলাম। তখন বাংলাদেশে রাত দেড়টা। জানা ছিলনা, তখন সেই মুহূর্তে তার উপর মধ্যরাতের ভয়াবহ নির্যাতন বাস্তবায়ন হচ্ছিল। হাড্ডি চুরমার করা হচ্ছিল। আবরারদের লিখা ভারত এবং তাদের তল্পিবাহকের জন্য চরম অস্বস্তি তৈরি করেছিল। ভবিষ্যতে কলম দিয়ে যাদের মোকাবেলা যাবেনা। তাদের কাছে এসব ধী শক্তি সম্পন্ন মেধাবীদের মোকাবেলা করার অস্ত্র দু'টো। একটি হল ভীতি সঞ্চার, দ্বিতীয়টি হল ধাতব মাস্তুলের ব্যবহার। আবরার সেদিন কি লিখেছিলেন,

আবরার ফাহাদের সেই স্ট্যাটাস-
১.
"৪৭-এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ছয় মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিল। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ ইণ্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।"

২.
"কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়া-কামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চায় না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়-লাখ কিউসেক মিটার পানি দেব।"

৩.
"কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রফতানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দেব! যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে, সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।"

হয়তো এ'সুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
"পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’’
স্ট্যাটাসটি এভাবেই শেষ।

উল্লেখ্য, ভারতের সাথে অন্যায্য পানি, গ্যাস ও সমুদ্রবন্দর দেয়ার চুক্তির বিরোধিতা করে, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র দেশপ্রেমিক 'আবরার ফাহাদ' এই ছোট্ট স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। মূলত ভারত বাংলাদেশের সাথে প্রতিটি চুক্তিতেই শঠতা, ঠগবাজির, চালাকি আশ্রয় নেয়। এ সমস্ত দালিলিক কথার উত্তর দেবার মত সৎ সাহস তাদের নেই। সততা তাদের পররাষ্ট্রনীতির অংশও নয়। তাই তো প্রতিটি প্রতিবেশীই তাদের দুষমন।

ভারতের সাথে বহু চুক্তির কথা বাদ, একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে। ৪২ দিনের জন্য পরীক্ষামূলক ফারাক্কা বাঁধ চালু করার জন্য, বাংলাদেশ থেকে অনুমতি নিয়ে, ৪৫ বছরেও বন্ধ করেনি! প্রয়োজন কালে পানি তো দেয়ই না, উপরন্তু ঘন বর্ষায় পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এই বাঁধের সকল গেইট খুলে দেয়। এভাবে প্রতিবেশীকে নাকানি-চুবানী খাইয়ে, কষ্টে ফেলে, নতুন পানি চুক্তির তামাশা করে। আমাদের সাথে এটাই হল তাদের বন্ধুসূলভ আচরণ!

ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে, অন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হলে, ভারতকে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার জরিমানার মোকাবেলা করতে হবে! এসব মিমাংসা করার জন্য আলাদা একটি আদালতই রয়েছে। বাংলাদেশ যাতে বড় ভাইয়ের এই বেয়াদবী না করে, সেজন্য তারা আমাদের সরকার ব্যবস্থাপনায় নাক গলায়। ভারত জানে, ত্যাড়া প্রকৃতির কোন বাঙ্গালী শাসক একবার চেয়ারে বসলে, উপরের ব্যাপারগুলো তারা মোকাবেলা করতে পারবেনা।

তাই বিলিয়ন ডলারের ঝামেলায় না গিয়ে, প্রতি বছর শত কোটি টাকা খরচ করে উচ্চ-বেতনে, পদস্থ কিছু বাংলাদেশী দালাল পুষে। তারা মিডিয়া, শিক্ষা, প্রশাসন সহ সব সেক্টরে লুকিয়ে আছে। এদের কারণেই বিশ কোটি মানুষের হাহাকার চাপা পড়ে যায়।
আবরার বেচে থাকলে তাদের চেহারা খুলে দেবার কাজে নামবে। তাই এদেশীয় পেশী শক্তি দিয়ে মাস্তুলের ব্যবহার করিয়ে নিয়েছে। আজো বাংলাদেশে যারা এসব নিয়ে উচ্চবাচ্য করবে, তাদের পরিণতিও ঠিক আবরারের মতই হবে।

- tipu

পঠিত : ৪২৫ বার

মন্তব্য: ০