Alapon

মসজিদ কি শুধুই পুরুষদের জন্য...?



নারী অধিকার নিয়ে যারা কথা বলেন, তাদের বেশির ভাগ কথার সাথেই আমি একমত। একটাই দুঃখ, কোন নারী অধিকার কর্মীকে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অধিকার নিয়ে কোন কথা বলতে শুনলাম না। মসজিদ কি শুধু পুরুষদের জন্য?

বিয়ের অপরিহার্য উপাদান "দেনমোহর" সম্পর্কে অনেকেই তেমন একটা জানেন না। জানলে, অনেক ছেলেই দিয়ে দিত। দেনমোহরটা ঠিক করে দিচ্ছে সমাজ- ১৫/২০লাখের নিচে থাকলে মান্সি কি কবেনে? ৪০হাজার টাকা বেতনের ছেলেটা একসময় ১৫লাখ টাকা দেওয়ার আশা ছেড়ে ক্ষমা চেয়ে নেয় অথবা আজীবন "ঋণী" থেকে মারা যায়।

অন্যদিকে মেয়েটাও সারাজীবন "বঞ্চিত" থেকে যায় তার অধিকার থেকে। অথচ দেনমোহর যদি পাঁচ লাখ ধরা হতো (সাধ্যে না হলে ২লাখ), ছেলেটার মধ্যে একটা তাগিদ থাকত ঋণ পরিশোধ করার। আর মেয়েটাও বিয়ের সাথে সাথে ঐ টাকাটা পেয়ে খুশি হত। উদ্দেশ্য কী ছিল, আর আমরা কী করি! দেনমোহর নিয়েও কোনো নারী অধিকার কর্মীকে কথা বলতে শুনলাম না।

কিছু মেয়েকে দেখবেন, বিয়ের পর নিজের নামের কিছু অংশ "ডিলিট" করে, স্বামীর নামের কিছু অংশ "কপি" করে, নিজের নামের সঙ্গে "পেস্ট" করে দেয়। নিজের প্রিয় নামটা কত সহজেই না এরা বিসর্জন দিয়ে দেয়। জুলিয়েটদের জন্য দুদিন পর পর নিজের প্রাণটা বিসর্জন দিতে চাওয়া রোমিওদের দেখেনতো নাম বিসর্জনে রাজি করাতে পারেন কিনা। মুখে যত বড় বড় কথা ছোটাক না কেন, নিজের নামটা বিসর্জন দিতে চায় এমন একটা ছেলে খুঁজে দেখাতে পারবেন না। মা খাদিজা (রাঃ) তাঁর স্বামীর সম্মানে সব ধন সম্পদ দান করে দিয়েছিলেন, কিন্তু নিজের নামটা নয়। তিনি খাদিজা বিনতে খালিদ। এটা তার পরিচয়। ভাবুন একবার গুলতেকিন খান হয়ে গেল গুলতেকিন আহমেদ। সেখান থেকে আবার গুলতেকিন খান। জিজ্ঞাসা করে দেখুন, তার কেমন লাগে যখন তিনি পুরনো পাসপোর্ট-ভিসায় তার নিজের নামের সঙ্গে "আহমেদ" শব্দটা দেখেন।

মুখের রং মাখা ক্যান্সারের কারণ (বিদেশি গবেষণার ফসল)। তারপরও বেশিরভাগ মেয়েই এগুলো ব্যবহার করে। যাকেই জিজ্ঞাসা করবেন, সে-ই বলবে যে, তারটাতে ক্ষতি হয় না। তিনি বিদেশি কসমেটিকস ব্যবহার করেন। বোনরে, গবেষণা তো বিদেশিরাই করেছে। তারা অবশ্যই বিদেশী পণ্যের উপরই গবেষণা করেছে। তোমার গায়ের রং বা মুখের গঠন যার ভালো লাগে না তাকে তোমার রঙ মাখা কৃত্রিম সৌন্দর্য দেখিয়ে বিয়ে করার কী দরকার? কোন ছেলে যতই কালো হোক না কেন নিজেকে আকর্ষনীয় করতে মুখে রং করতে দেখেছেন কখনো?

সে আপনাকে ভালবাসবে। তবে শর্ত আছে। আপনার ভ্রু চিকন করতে হবে, আপনাকে হাই হিল পরে টলমল করে হাঁটতে হবে, আপনাকে না খেয়ে স্লিম ফিগার বানাতে হবে। এই ভালবাসার কি আদৌ কোনো দরকার রয়েছে?

একজন প্রশ্ন রেখেছেন, বিয়ের আগে ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে উপহার, আর বিয়ের পর এটা পাপ হয়ে গেল? উত্তর দিচ্ছি। ভ্যালেন্টাইন ডে বিয়ের আগেও পাপ ছিল, এখনও আছে। বড়শিতে যে দ্রব্য গেথে পানিতে ফেলা হয়, ওটা মাছকে লোভ দেখানোর জন্য, মাছের প্রতি উতলে ওঠা ভালবাসার জন্য নয়। ওটাকে টোপ বলে।

কিছু ছেলে পাবেন এরা নায়িকা বিয়ে করে বলবে, আমার বাবা-মা তোমার চালচলন একদম পছন্দ করছে না, বোরকা পরো। আচ্ছা পর্দা কি বাপ মার জন্য নাকি আল্লাহর জন্য? আবার কিছু ছেলে দেখবেন, বোরকা পরা মেয়েকে বিয়ে করে বলবে, আমাদের সোসাইটিতে এগুলো চলে না। ভাইরে, সে-ও তো একটা মানুষ। দুদিন পরে তো বলবা, নিঃশ্বাস নিতে হলে, আগে অনুমতি নিতে হবে।

একটা গান শুনেছিলাম, তুঝে জিনা ভি হোগা, জেহের পিনা ভি হোগা। অর্থটা তখন বুঝিনি, তবে এখন বুঝি যখন শুনি, কারো এমএ পাস বউ লাগবে তবে চাকরি করতে পারবে না। তোমাকে রান্না করে খাওয়ানোর জন্যই যদি বউ লাগে, তাহলে গ্রাম থেকে একটা নন-মেট্রিক মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে আস। "আজ বেড়াতে যাব" এই কথাটা শুনে সে রান্না করে, সংসার সামলে, তোমার জন্য সাজুগুজু করে সারাটা বিকেল ধরে অপেক্ষা করতো! আর চাকরি করলে যদি মেয়ের প্রেম করার আশঙ্কা থাকে, তাহলে এমন মেয়েকে বিয়ে করার কী দরকার? এরকম মেয়েকে তো ঘরে বেঁধে রাখলেও সে "হ্যালো" করে প্রেম করতে পারবে।
ঘরজামাইকে আমাদের সমাজে বিদ্রুপ করা হয়। অথচ, মুসলিম আইনে বিয়ের উপানের মধ্যে এমনটা নেই যে, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে যেতেই হবে। পুত্রহীন কোন বৃদ্ধ দম্পতি যদি কোন মেয়ে ও জামাইকে নিজেদের কাছে রাখেন, এটা কি অন্যায়?

সুদর্শন এক লোক বিয়ে করল কালো এক মেয়েকে। অনেকেই এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিয়ে বয়কট করেছিল। সে হয়তো ওই কালো মেয়েটার মাঝেই কোনো ভালো গুণ খুঁজে পেয়েছিল। ভেবে দেখুন, সে যদি ঐ মেয়েটাকে নিয়ে খুব সুখি হতে পারে, সমাজের কি ক্ষতি হচ্ছে?

ধর্ষক সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। আর ধর্ষিতা ঘরের কোন মুখ লুকায়। এমন কি কোন ধর্ষিতাকে থেকে কেউ বিয়েও করতে চায় না। দোষটা কার ছিল- ধর্ষকের নাকি ধর্ষিতার?

অনেকেই স্বামীর নামে যৌতুকের মামলা দেয়। সাথে জুড়ে দেয় বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির নাম। ৩০বছরের বৌমা নারী। আর ৭০বছরের শাশুড়ি কি নারী নন? উনার কি কোন অধিকার নেই? জানেন কি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বেশিরভাগ মামলাই মিথ্যা!
অনেককে বলতে শুনবেন, মেয়ে মানুষের বুদ্ধি কম। খোজ নিয়ে দেখেন, উনার বউ উনার থেকে ১৫/২০বছরের ছোট। আপনার থেকে ১৫/২০বছরের ছোট মেয়ে হোক আর ছেলে হোক, (সেম ফুটিং এ থাকলে) সে তো আপনার থেকে কম বুঝবে। এটাই স্বাভাবিক। বুঝদার চাইলে, বড় কোন মহিলাকে বিয়ে করতে পারতেন!

কারো স্বামী মারা গেল। আর তাকে মুড়ে দিলেন সাদা শাড়ি দিয়ে। সাদা শাড়ি পরে ১০টা প্রেম করুক, কোন সমস্যা নাই। কিন্তু বিয়ে করলে সমাজ তাকে প্রতিতার আসনে বসাতে দ্বিধা করবে না। মুসলিম আইন ও রাষ্ট্রীয় আইন তাকে অধিকার দিয়েছে। সে যদি বিয়ে করে সুখে থাকে, আমার আপনার কী সমস্যা?

নবী (সঃ) এর পা ধরে কখনো কোন সাহাবী সালাম করেননি, না করেছেন মা আয়েশা (রাঃ)। তবে তারা মুখে সালাম দিতেন। আজ বাড়ি ফিরে আপনার স্ত্রীকে সালাম দিয়ে দেখুন। নির্ঘাত বলবে, কি অমুকের বাপ আমাকে চিনতে পারতেছ না?

কোন মহিলা তার স্বামীকে কষ্ট দিলে সমাজ কিছু বলুক বা না বলুক স্বামীর নাম ধরে ডাকলে সমাজ "বেয়াদব" খেতাবটা দিতে দেরি করবে না। জানেন তো, ইব্রাহিম (আঃ) এর বিবি নাম ধরে ডেকেছেন। সমাজ আপনাকে বলে দিয়েছে, প্রিয় মানুষটার নাম ধরে ডাকা যাবে না। ডাকতে হবে, অমুকের বাপ আর তমুকের মা বলে।

বিয়ের খরচ কার করার নিয়ম? বলতে পারবেন? হিন্দু আইনে মেয়ের বাবার এবং মুসলিম আইনে ছেলের (বর)।

আপনার বিবি রান্না করছে আর আপনি ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুলে হুকুম করছেন, এটা করে দাও ওটা করে দাও। তাহলে শুনুন, নবী (সঃ) নিজের কাপড় নিজে পরিষ্কার করতেন, সেলাই করতেন এবং নিজের টুকিটাকি কাজগুলো নিজেই করতেন। রান্নাঘর কতটা "আরামদায়ক" জায়গা বুঝতে হলে, মা-কে একদিন রুটি বানানোতে সাহায্য করুন। যদি প্রমোশন পেয়ে থাকেন, তাহলে বউকে সাহায্য করুন।

কোন মেয়ে নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিজে দিলে, সমাজ তাকে "বেহায়া" খেতাবটা দিতে কার্পণ্য করবে না। অথচ মা খাদিজা (রাঃ) নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিজেই দিয়েছিলেন। তিনি কি বেহায়া ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)? কখনোই না।

বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখবেন, বউ সারাদিন বসে বসে ঝিমায়। আর বিয়ে শেষে একটা "কান্নাকাটি পর্ব" থাকে। আচ্ছা, বিয়ে কি কোন দুঃখের অনুষ্ঠান যে কাঁদতে হবে? যাকে বিয়ে করে কাঁদতে হবে এমন মানুষকে তো বিয়ে না করাই ভালো। একটা বিয়েতে দেখেছিলাম দুজনে হেঁটে হেঁটে সব আত্মীয়দের সাথে পরিচিত হচ্ছিল। সবার ক্ষেত্রেই আসলে এমনটা হওয়ার কথা ছিল। কী কী খেয়েছিলাম ঠিক মনে নেই। তবে এইটুকু বুঝেছিলাম আমাদের মেয়েটা সুখে থাকবে।

যদি ভুল কিছু বলে থাকি, তাহলে আশা করি শুধরে দিবেন।

- সংগৃহিত

পঠিত : ৪১৫ বার

মন্তব্য: ০