Alapon

পর্দা ও কিছু আলাপন

খুব বেশীদিন আগের কথা নয়। সম্প্রতি ই ফেসবুকে কিছু গার্লস গ্রুপে একটা পোস্ট ভাইরাল হতে দেখেছিলাম। সেখানে ভারতীয় একজন নামকরা গায়কের দুই মেয়ের সাথে গায়ক স্বয়ং ছবি তুলেছেন দেখা যাচ্ছিলো। তো পোস্টের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো এই ই যে, গায়ক সাহেবের এক মেয়ে সম্পূর্ণ বোরকাবৃতা থাকলেও আরেক মেয়ের পরনে ওয়েস্টার্ন পোশাক শোভা পাচ্ছে!! তো সবাই দেখলাম,, খুব করে বলছিলো যে,, আসলে পোশাক কে কেমন পড়বে সেটা তার নিজস্ব বিষয়! এটা নিয়ে কারোই, এমনকি বাবা মায়ের ও মাথা ঘামানোর কিছুই নেই।
তো, পোস্টটা দেখে আমার খারাপ লেগেছিলো বেশ। মানুষ কতোটা অনুকরণপ্রিয়! আর অনুকরণ করতে গিয়ে ভালোর পরিবর্তে খারাপ কে ই বেশি ফলো করছে।

আমাদের সমাজে এরূপ ধ্যান ধারণা পোষণ করা মানুষের অভাব নেই! তাদের বক্তব্য, ব্যক্তি স্বাধীনতা সবার ই আছে এবং তা বজায় রাখা আবশ্যক!! এই ধারণা পোষণ করার ফলস্বরূপ দেখা যায়, আমাদের অনেক দ্বীনি ভাই বোনেদের পরিবার কিংবা ঘনিষ্ঠজনেরা ইসলামের মূল নিয়ম গুলো মেনে চলতে বড্ড উদাসীন। অনেকে ই আছেন, যারা প্রাণপন চেষ্টা করেন পরিবারের সবাইকে সঠিক বুঝ প্রদান করে ইসলামী অনুশাসনে অভ্যস্ত করার। আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত দোয়াও করেন। আবার অনেক কে ই দেখা যায় এ বিষয়ে অতো দৃষ্টিপাত করেন না।

বোনেদের জন্য বলছি৷ প্রিয় বোন, আপনার ছোট বোন টি অথবা পরিবারের কোন আপনজনকে আপনি যদি দেখেন আগুনে হাত দিতে, আপনি কি করবেন? আপনি কি ঘুণাক্ষরেও এটা ভাববেন যে, সে তো প্রাপ্তবয়স্ক, নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী চলার অধিকার তার আছে?! নাকি তৎক্ষনাৎ তাকে সেখান হতে সরিয়ে আনবেন? অবশ্যই আপনি পরের কাজটি ই করবেন। তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো? আপনি দুনিয়ার সামান্য তেজসম্পন্ন এই আগুনে আপনার বোনকে পুড়তে দিতে চান না। তাহলে দুনিয়ার আগুনের চাইতেও ৭০ গুণ বেশি প্রখরতা সম্পন্ন আগুনে আপনার বোন পুড়বে, এটি আপনি কিভাবে সহ্য করছেন? কেনো তাকে আপনি পর্দার গুরুত্ব বুঝিয়ে এই বেপর্দা অবস্থা থেকে সরিয়ে আনছেন না! কীভাবে তাকে আপনি জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হতে দেখবেন!! আপনার চোখের সামনে ই আপনি তাকে কীভাবে জাহান্নামের আগুনের রসদ হতে দেখছেন?!!!

আমাদের মোটামুটি সব পরিবারেই পর্দা সম্পর্কে মা- চাচীদের অজ্ঞতা দেখা যায়। তারা নিজেকে কালো বোরখায় আবৃত করলেও ষোড়শী কন্যাকে হাল ফ্যাশনের পোশাকে সজ্জিত করে বাহিরে নিয়ে যান। বোনেরা, আপনি হয়তো ভাবছেন আমি পর্দা করছি- এটাই আমার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা! কিন্তু আপনার পরিবারের এসকল মানুষকে জানানো আমাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্বে অবহেলা করলে পরকালে আপনাকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এই মানুষ গুলো ই তখন আপনার জান্নাতে যাবার অন্তরায় হয়ে যেতে পারে। তাই এই বিষয় গুলো আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। দ্বীনের দাওয়াত দেয়া আমাদের কর্তব্য। ঠিক সেরূপ ভাবেই আমাদের দাওয়াত পাবার সবচেয়ে বেশি হকদার আমাদের আপনজনেরা।

আমাদের পরিবারে পুরুষেরা যেরূপ কর্তৃত্বের অধিকারী; তেমন ই, পরিবারের সকল সদস্যের জন্য তাকে জবাবদিহি ও করতে হবে। কেউ একজন দ্বীনের খেদমতে সমস্ত দিন ব্যয় করলো, কিন্তু তার পরিবারের নারীরা বেপর্দায় চলাফেরা করলো- তাহলে কিন্তু আল্লাহর কাছে সে দাইয়ুস রূপে ই গণ্য হবে! একজন বাবা, ভাই, স্বামী কে তার কন্যা, বোন এবং স্ত্রীর পর্দাহীনতার জন্য জবাবদিহি করতে ই হবে। এ থেকে কোন ছাড় পাবার সুযোগ নেই। দাইয়ুসের শাস্তি জাহান্নাম! এ বিষয়ে হয়তো অনেকের ই ধারণা নেই। পরিবারের পুরুষদের আরো সচেতন হতে হবে। আপনার মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা সবাই পর্দা বোঝে কিনা, মাহরাম মেনে চলছে কিনা- এসকল কিছু খেয়াল করা আপনার দায়িত্ব।
পর্দা কখনোই মাথায় এক টুকরো কাপড় পেচিয়ে নেয়া নয়। বরং পর্দা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আবৃত করা। যার মাধ্যমে আপনার তাকওয়া প্রকাশ পাবে।।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে পর্দার স্বরূপ বুঝে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন! আমীন।

পঠিত : ৫৫৩ বার

মন্তব্য: ০