Alapon

||সফল হলো সে, শুদ্ধ হলো যে||

নিজের ওপর নিজের প্রচণ্ড ঘৃণা হয়! নিজেকে নিরবে নিঃশেষ করে দিতে ভীষণরকম ইচ্ছে হয়! নিজের চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলতে মন চায়! আমার যে ভয়ানক অকৃতজ্ঞ নাফস আছে সে নাফসকে খুন করে দিয়ে পরিতৃপ্ত হতে পারলে আমি জগতের সবচেয়ে বেশি খুশি এবং পরিতুষ্ট মানব হতাম। খুশির ফোয়ারা বইতো জীবনে আমার।

অন্তত পক্ষে নষ্ট নফসের ডানাটাকে যদি ধরতে পারতাম আমি! আমার নাফসের ডানাটাকে যদি আমি একটিবার ছুঁতে পারতাম, ধরে-ছুঁয়ে যদি সেই ডানাটা ভেঙে চুরচুর করে অনন্ত জীবনের জন্যে থামিয়ে রাখতে পারতাম, তা হলে জগতের সব আলোর বন্যা ঢেউয়ে ঢেউয়ে আঁচড়ে পড়তো আমার হৃদয়-কন্দরে ...

এই যে এতোগুলো ভাবনা-কল্পনা তা আমি বাস্তবে রূপান্তর করতে পারছিনা!

এমন জীবন-যৌবন আমি চাইনা, যে জীবন যৌবন আমাকে আমার রব্বুল আলামীনের পথ থেকে দূরে নিয়ে যাবে! আমাকে নিরেট অকৃত্রিম অকৃতজ্ঞ বান্দা বানিয়ে দিচ্ছে এ জীবন.....

আমি মোবাইলটা হাতে নিই, ডাটা অন করে কিছুক্ষণ এলোমেলো ঘুরে ফিরে চলে যাই পাপের জগতে। পাপের সমুদ্রে ডুবে ডুবে ডুবুরি হয়ে সাঁতার কাঁটি!

উত্তাল তরঙ্গের ঊর্মীমালার মতোন আমার মনের দুষ্ট আবেগও ঢেউয়ে ঢেউয়ে আঁচড়ে পড়ে জীবন নদীর মোহনায়! আমি সেই উত্তাল ঢেউয়ের উন্মত্ততায় হারিয়ে যাই। পানির বুদবুদের মতো মিলিয়ে যাই....

পাপের সাগরে সাতার কেটে কেটে আমি ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে যাই। আমি ক্লান্তিতে মুখ থুবড়ে পড়ি। ক্লান্তি নুয়ে পড়ে। পুনরায় আবার আমার নষ্ট নফসের নিবিড় তাড়না জাগে। সেই তুমুল তাড়নার তীক্ষ্ণতা আমাকে আবার আমার প্রভুর অবাধ্য হতে, তাঁর বিধিমালা ভাঙতে বাধ্য করে। আমি নাফরমান। আমি অকৃতজ্ঞ। আমি ভেঙে ফেলি সব বিধিনিষেধ। আমি হেরে যাই। পরাজিত হয়ে পড়ি শাইত্বনের ওয়াসওয়াসার কাছে...
..
আমার মনে আবার অনুতাপের অনল জেগে ওঠে।
পুড়ে যায়। ছাঁই হয়ে যায়। বাষ্প হয়ে যায়। আমার মনের পূর্বের সব প্রশান্তি আমি শান্তি খুঁজি। আশা খুঁজি! কোথায় পাবো! আশার পেয়ালা পেলেই ঢকঢক করে খেয়ে ফেলবো কয়েক বোতল আশা....

মনে পড়ে মিলোডিয়াস কন্ঠের জাদুকর শিল্পী সাইফুল্লাহ মানসুরের কালজয়ী গানটি:

''নিরাশাতে আশা তুমি অন্ধকারে আলো।
সবার মনে জানি তুমি, আশার প্রদীপ জ্বালো....

প্রলয় যখন আসে আকাশ ঘিরে
জীবন যখন ভাসে ব্যথার নীড়ে
তুমি তখন, গোপন হাতে, ঘোচাও আঁধার কালো!

আঘাত যখন ঝরায় আড়াল হতে
বাঁধার পাহাড় দাঁড়ায় যখন পথে
তুমি তখন, প্রানে আমার, শক্তি সাহস ঢালো........


আমি যেনো সম্বিত ফিরে পাই! আমাকে তো একজন ভালোবাসে, প্রচন্ড। প্রবল। খুউউউউব......


মধ্যরাত। চারদিকে ঘুটঘুটে আঁধার। সেই ঘুটঘুটে আঁধারের মধ্যরাতে আচমকা জেগে যাই! আমি ভীতু মানুষটা সেই আঁধারেরর নির্জনতায় বের হয়ে যাই! স্বচ্ছ সরোবরে পবিত্র হবার আশায়! আমি অদ্ভুত একটা সাহস পাই। কেউ যেনো আমার প্রানে শক্তি ঢালে। কোনো এক অদৃশ্য হতে কে যেনো আমার প্রানে সাহস ঢালে.....

আমি জায়নামাজ বিছিয়ে সিজদাহ্'তে ঢলে পড়ি। মনে প্রশান্তি পাই...

আমার ভেতর সফল হবার এক দুর্নিবার ইচ্ছে জাগে, আমার সফলতা দরকার। আমি সফলতা চাই! পবিত্র কুরআনের পাতাগুলো ছুঁয়ে দেখি। হরফগুলো ধরে দেখি! আমি পেয়ে যাই! আনন্দের ঢেউ মনে আমার আছড়ে পড়ে। চোখের তারা ঝলমলিয়ে উঠে....

আমি দেখি কিছু কালো কালো ছাপার অক্ষর দিয়ে লেখা আছে, " অবশ্যই সফল হয়েছে মুমিনগণ..[১]

আমার ভাবনার মোহনায় এক অবারিত ঢেউ পূনরায় আছড়ে পড়ে এই ভাবনায় যে, আমি কি মুমিন? আমি সফলদের কাতারে আছি? আমি তো অবিরাম ভিজেভিজে সব কাজ করেই যাচ্ছি, নফসের তাড়নায়....

আমি পড়তে থাকি। আবেগ দিয়ে। হৃদয় দিয়ে। থেমে থেমে....

'সে-ই সফলকাম হয়েছে, যে নিজেকে পবিত্র করেছে।
আর সে-ই ব্যর্থ হয়েছে, যে নিজেকে কলুষিত করেছে।[০২]


আমি আবারো থমকে যাই। ঢুকরে কেঁদে উঠি। আমি তো ব্যর্থ। নিজেকে কলুষিত করে। নিজেকে অপবিত্র করে। কিন্তু এখন আমি পবিত্র হতে চাই। আমি শুদ্ধ হতে চাই। কিন্তু কীভাবে.....

পড়তে থাকি। চোখের পানি ঢেলে ঢেলে পড়তে থাকি। সেই পানিতে বুক ভাসে। মুখ ভিজে।

এই তো, এই তো আমি উপোয় পূর্ণরূপে পেয়ে গেছি.....

"অবশ্যই সাফলতা লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয়।
এবং নিজের রবের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে [৩]"


খুশিতে আখিঁদ্বয় আমার চিকচিক করে ওঠে। আনন্দের আভা ঠিকরে পড়ে। পূর্বেকার সেই মলিন বদন হতে...

আমি প্রাণ থেকে দৃঢ়ভাবে পণ করি, আমি পবিত্র হবো। নফসের নষ্টতাকে পরিহার করবো। আমার রব্বকে স্মরণ করবো। স্বলাত কায়েম করবো। কারণ আমাকে সফল হতে হবে যে......


||সফল হলো সে, শুদ্ধ হলো যে||
--রেদওয়ান রাওয়াহা
৩০.০৭.২০

পঠিত : ১৩০৫ বার

মন্তব্য: ০