Alapon

সরকার ভিপি নুরের আন্দোলন বন্ধ করতে চায় কেন...?


পত্রিকায় দেখলাম ছাত্র অধিকার পরিষদের চার নেতাকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। প্রথমে পুলিশ তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও দুপুরের দিকে দুজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে। আর তাদের ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অবশ্য তারা উক্ত মামলার এজহারভুক্ত আসামী।

ছাত্র অধিকার পরিষদ যখন ভিপি নুরের নেতৃত্বে ধর্ষণের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে, তখন আমার মনে হয়েছিল নুরের সহযোদ্ধাদের গ্রেফতার অথবা গুম করা হবে। নুরকে গ্রেফতার করার মত সাহস সরকার দেখাবে না। কারণ, নুর এখন ফ্যাক্ট! নুরকে গুম করে হজম করা সরকারের জন্য এখন অনেক কঠিন ব্যাপার। আর গ্রেফতার করেও তাকে জেলে বন্দি রাখা সম্ভব নয়। কারণ, জনসমর্থন নুরের পক্ষে। আর নুরকে যে ধর্ষণের মামলায় আসামী করা হয়েছে, আইনত সেই মামলায় নুরকে আসামী করা যায় না। কারণ, ঘটনা ঘটিয়েছে হাসান আল মামুন! ভিক্টিম ভিপি নুরের কাছে এ বিষয়ে নালিশ করেছিল, বিচার দাবি করেছিল। ভিপি নুর ব্যাপারটা সমাধান করতে পারেননি। যার কারণে ভিক্টিম নুরকেও ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়েছে। আরও মজার বিষয় হল, ভিক্টিম ধর্ষণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে অনশন করছে। সেই অনশনে যতোটা না মূল আসামী হাসান আল মামুনকে গ্রেফতারের দাবি করা হচ্ছে, তার চেয়ে ঢের বেশি ভিপি নুরকে গ্রেফতারের কথা বলা হচ্ছে! তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, ডাল মে কুচ কালা হায়...

ভিক্টিমের এমন উদ্ভট আচরণ দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, এ ঘটনায় ভিপি নুরকে উদ্দেশ্যপ্রোণিতভাবে জড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে ভিপি নুর আপামর ছাত্র জনতাকে সাথে নিয়ে ধর্ষণ বিরোধী শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলেছে। আর এমন স্বতঃফূর্ত আন্দোলন দেখে সরকারের যে মাথা বিগড়ে যাবে, তা যে কেউ বলে দিতে পারে। কিন্তু এমতাবস্থায় ভিপি নুরকে গ্রেফতার করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। ভিপি নুরকে গ্রেফতার করলে উপরন্তু আন্দোলন আরও বেগবান হবে। তখন সরকার ভিন্ন পথে হাটতে শুরু করলো। ভিপি নুর যেসব সহযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে ধর্ষণ বিরোধী এই দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে, তাদের গ্রেফতার ও গুমের মাধ্যমে ভিপি নুরকে দুর্বল করে ফেলতে হবে। ভিপি নুর যখন আশে পাশে তার সহযোদ্ধাদের পাবে না, তখন আন্দোলন খুব স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে যাবে। সরকার ঠিক এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের চার নেতাকে প্রথমে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যায়, পরে দুজনকে গ্রেফতার দেখায়।

জনমনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সরকার কি ধর্ষণকে উৎসাহিত করার জন্যই ভিপি নুরের ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন দমনের পায়তারা করছে?

না, সরকার নিজেও চায় না ধর্ষণের ঘটনা ঘটুক। সরকার আন্তরিকভাবেই ধর্ষণ রোধে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হল, ২০০৮ সালের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজে লাগাতে গিয়ে তাদের প্রায় অকার্যকর বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। যার দরুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী দল দমন করতে সক্ষম হলেও অপরাধ দমন করতে সক্ষম হচ্ছে না। কিন্তু তারপরও ক্রসফায়ার, তাৎক্ষনিক গ্রেফতারের মাধ্যমে সরকার ধর্ষণ রোধের চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের প্রধান ভয়ের কারণ হল, আন্দোলন!

প্রত্যেক স্বৈরাচার সরকারই জনগণের যেকোনো স্বতঃফূর্ত আন্দোলকে ভয় পায়। সেই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন না হলেও ভয় পায়। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে নেমে এসেছিল, তখনও সরকার তাদের হেলমেট বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে সেই আন্দোলন রুখে দিয়েছে। যদিও তা সরকার বিরোধী আন্দোলন ছিল না। সেই একই কারণে সরকার ভিপি নুরের ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন বন্ধ করতে চাচ্ছে। কিন্তু সরকার যদি ধর্ষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতো এবং দল মত নির্বিশেষে সকল ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতো, তাহলে তো ভিপি নুরদের আর রাজপথে নামতে হতো না। আর সরকারকেও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের গুম করার কথা চিন্তা করতে হতো না।

স্বৈরাচার সরকারের একটি কমন স্বভাব হল, তারা সমস্যার গোড়ায় সমাধান করে গাছের ডাল কেটেই স্বস্তি পেতে চায়! কিন্তু প্রশ্নটা যখন ইজ্জতের তখন কি আর চুপ করে বসে থাকা যায়?

পঠিত : ৪৬২ বার

মন্তব্য: ০