Alapon

রাসূল(সাঃ) এর রঙে নিজকে রাঙাও

কিভাবে আমরা দায়িত্ব নিবো? কিভাবে? আচ্ছা, আমি আপনাকে জানালাম যে আমার দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু কিভাবে? আমি আপনাদের ১০০টি পদক্ষেপের কথা বলবো না। আমি শুধু একটি পদক্ষেপের কথা বলবো।
কখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) নবুয়্যত পান? ৪০ বছর বয়সে। ৪০ বছর বয়সে তিনি দাওয়াত দেওয়ার কাজ শুরু করেন। এখন, এর পূর্বে কি তিনি মক্কায় বসবাস করতেন? মানুষ কি তাঁকে চিনতেন? তারা তাঁকে কি নামে ডাকতেন? তারা তাঁকে কিছু সুন্দর নামে ডাকতেন। কি ছিলো সেগুলো? আস সাদিক, আল আমীন। ৪০ বছরের পূর্বে তিনি কি কখনো তাদের ইসলামের কথা বলেছিলেন? না। তিনি তাদের সাথে ব্যবসা করেছিলেন, তাদের মাঝে বসবাস করেছিলেন, তাদের প্রতিবেশী ছিলেন, তাদের বন্ধু ছিলেন, তিনি তাদের সাথে প্রতিদিন কথা বলতেন, তাদের সাহায্য করতেন, দান করতেন!
তাহলে, ৪০ বছর ধরে তারা কেবল আস-সাদিক ও আল-আমীন কে চিনতো। তারা জানতো যে, আমাদের গোটা সমাজে একজন মানুষই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ববান। কে ছিলেন তিনি? মুহাম্মাদ। তারা তখনো তাকে রসূলুল্লাহ(সাঃ) বলে জানতো না। এখন এটাই হবে আমার, আপনার প্রথম পদক্ষেপ। উম্মাহর একজন সদস্য হিসেবে আমার, আপনার প্রথম কাজ হবে, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর চরিত্র প্রদর্শন করতে হবে। সমগ্র বিশ্বের কাছে। এবং তা হলো, আস-সাদিক ও আল-আমীন। তাই যখন তারা একজন মুসলিম সম্পর্কে চিন্তা করবে, তারা একজন সৎ মানুষ সম্পর্কে চিন্তা করবে। তারা এমন একজনকে চিন্তা করবে, যাকে তারা বিশ্বাস করতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি এত খারাপ যে আমরা নিজেরাই নিজেদের বিশ্বাস করতে পারি না। আমরা মিথ্যা বলি, আমরা প্রতারণা করি, আমরা ব্যবসার ক্ষেত্রে ধোঁকা দেই এবং ঠকাই, আমরা আমাদের পরিবারে মিথ্যা বলি, আমরা আমাদের উত্তরাধিকার আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে মিথ্যা বলি, আমরা আমাদের কাজের ক্ষেত্রে মিথ্যা বলি, আমাদের ট্যাক্স ফর্ম পূরণের সময় মিথ্যা বলি! সুযোগ পেলেই আমরা মিথ্যা বলি!
উদাহরণস্বরূপ, যে লোক কাপড়ের দোকানে কাজ করে, যেখানে মহিলারা কাপড় কিনতে আসে; সে বলে, আমাকে এটা ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। কারণ এটা আমি ৯৯ টাকা দিয়ে কিনেছি। আমি শুধু ১ টাকা লাভ করবো! সে কিনেছে এটা ১০ টাকা দিয়ে! কিন্তু এখন সে একটা গল্প বানিয়ে নিয়েছে! সে বলবে, এই নিন, শুধু আপনার জন্য ই এটা ৯৯ টাকা! আমরা মিথ্যা বলা ছাড়া এমনকি কিছু বিক্রিও করতে পারি না!
কীভাবে আমরা সমগ্র বিশ্বের জন্য সত্যবাদী এবং বিশ্বাসী হবো?! আমরা এমনকি নিজেদের ই আল-আমীন মনে করে বিশ্বাস করতে পারি না!
আপনি যদি মুসলিম বিশ্বের কোথাও যান এবং ট্যাক্সি ভাড়া করেন, তারা যদি বুঝতে পারে যে আপনি আমেরিকা থেকে এসেছেন, তবে তারা তিনগুণ ভাড়া রাখবে! এটা কি আমানত হলো?! আপনি যদি কোন মুসলিম মেকানিকের কাছে যান, আমার গাড়ীর তেল দরকার; সে আপনার গাড়ী খুলবে, ট্রান্সমিশন বের করবে! আর বলবে, আপনার নতুন ট্রান্সমিশন ও লাগবে! আমি তো গাড়ীর এসব ব্যাপার বুঝি না, সে বুঝে! এভাবে আমরা মানুষকে প্রতিনিয়ত ঠকাই! আমরা মিথ্যা বলি, আমরা মানুষের কাছে অসৎ! তারপর আমরা মানুষের কাছে গিয়ে মুহাম্মাদ(সাঃ) এর দ্বীন নিয়ে কথা বলি, ইসলামের দাওয়াত নিয়ে কথা বলি! রসূলুল্লাহ(সাঃ) এর শরীয়ত নিয়ে কথা বলি!

থামুন! আগে ৪০ বছরের জীবন! প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আমাদেরকে কেউ এখন আর সৎ মনে করে না। এই মুহূর্তে কেউ আমাদের বিশ্বাসযোগ্য মনে করেনা। এটাই আমাদের প্রায়োরিটি। তাহলেই কেবল ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হবে। কারণ আপনার মুখ খোলার আগেই তারা আপনাকে ভালোবাসে। আপনার সম্পর্কে তাদের ধারণা যেনো এরূপ হয় যে, এই লোক কখনও মিথ্যা বলে না, আমি যে কারো উপরে তাঁকে বিশ্বাস করতে পারি! একজন মুসলিমের এমনই তো হওয়া উচিত!
আপনাদের অনেক সহকর্মী হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, নাস্তিক বা অগ্নিপূজারী! ইসলাম বলতে তারা কোরআন কে চিনে না। ইসলাম বলতে তারা কেবল আপনাকেই জানে! আপনি তাদের নিকট ইসলাম! আপনি তাদের নিকট রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর দূত। তাই যখন আপনি আপনার সহকর্মী কে বলেন, আমি ৫ মিনিটের মধ্যে আসছি! অথচ এই ৫ মিনিট আজকের যে কোন সময়ের মধ্যে হতে পারে! এরচেয়ে বিস্ময়কর হলো, আপনি তাঁকে বললেন, আমি রাস্তায়! অথচ আপনি এখনো বাসায় এবং আপনি আপনার দাঁত ও ব্রাশ করেন নি এখনও! আপনি আছেন ৩ ঘন্টা দূরত্বে, কিন্তু আপনি বললেন ১০ মিনিটের মাঝে আসছি!

সততা অবলম্বন করুন। ছোট ছোট বিষয় গুলোতে যদি আমরা সৎ হতে না পারি, বড় বিষয় গুলোতে আমরা কিভাবে সৎ হবো!

[ উস্তাদ নোমান আলীর লেকচার থেকে শ্রুতিলিখন ]

পঠিত : ৪৫৬ বার

মন্তব্য: ০