Alapon

বাংলাদেশ পুলিশ: আইনের রক্ষক হয়ে এখন ভক্ষকের ভূমিকায়...


শনিবার মধ্যরাত সিলেটের কোতয়ালী থানার এসআই আকবর ব্যবসায়ী রায়হানকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে থানায় না নিয়ে, নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ ফাঁড়িতে। কারণ, এসআই আকবর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। রাতে সুস্থসবল রায়হানকে গ্রেফতার করল পুলিশ, আর সকালে সেই রায়হান লাশ হয়ে হাসপাতাল মর্গে পড়ে রইল। পুলিশ বলল, ছিনতাই করতে গিয়ে রায়হান জনগণের হাতে ধরা পড়ে। তারপর গণপিটুনিতে রায়হান মারা যায়। কিন্তু পুলিশের অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, সেদিন সিলেটের কোথাও কোনো গণধোলাই-এর ঘটনা ঘটেনি।

এরপর পুলিশ দাবি করে, গণধোলাই এর সিসিফুটেজ রয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে সেই ফুটেজ দেখানো যাবে না। কিন্তু মিডিয়ার চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে বাধ্য হয়। আর সেই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেল, পুলিশের দাবি করা ঘটনাস্থলে সেদিন কোনো গণধোলাইয়ের ঘটনা তো পরের কথা ছিনতাইয়ের ঘটনাই ঘটেনি।

তাহলে রায়হান মারা গেল কীভাবে?

এবার আসা যাক আসল ঘটনায়। মূলত এসআই আকবর তার চার সহযোগিকে সাথে নিয়ে রায়হানকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। তারপর তার কাছে চাঁদা দাবি করে। কিন্তু রায়হান চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তখন এসআই আকবর এবং তার চার সহযোগি রায়হানের উপর চড়াও হয়। রাতভর তার উপর অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়। মাঝরাতে রায়হানকে দিয়ে তার বাড়িতে কল দেওয়ায় এসআই আকবর। সে সময় রায়হান তার স্ত্রীকে বলে, ‘তোমরা তাড়াতাড়ি টাকা নিয়ে থানায় আসো, না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে!’

শেষ পর্যন্ত রায়হানের আশঙ্কাই সত্যি হল। এসআই আকবর এবং তার চার সহযোগি চাঁদার কাঙ্খিত টাকা না পেয়ে রায়হানকে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রায়হানকে চাঁদাবাজি মামলায় অভিযুক্ত দেখিয়ে গণপিটুনিতে নিহত বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এসআই আকবর। কিন্তু মিডিয়ার সরব উপস্থিতি এসআই আকবরের সমস্ত চক্রান্ত নষ্ট করে দেয়।

চাঁদার টাকার জন্য অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়, তেমনি নতুন নয় চাঁদার টাকা না পেয়ে হত্যা করার ঘটনাও!

আপনাদের নিশ্চয়ই ওসি সালাউদ্দিনের কথা মনে আছে। যে ওসি সালাউদ্দিন হলি আর্টিসেনের হামলায় নিহত হয়েছিল। আপনাদের স্মরণ আছে কিনা, টিভি স্ক্রলে যখন এই সংবাদ ভেসে উঠে, হলি আর্টিজেনের জঙ্গিদের ছোড়া বোমার আঘাতে ওসি সালাউদ্দিন নিহত হয়েছে। এই সংবাদ শোনার সাথে সাথে মানুষ তার জন্য দুঃখ করা তো পরে কথা, কেউ ‘ইন্নালিল্লাহ...’ পর্যন্ত পড়েনি। কারণ, এই ওসি সালাউদ্দিনই এভাবে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে চাঁদাবাজি করার মূল রূপকার। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ পুলিশের বহু সদস্য এখন এভাবে জনসাধারণকে গ্রেফতার করে চাঁদাবাজি চালাচ্ছে। আর চাঁদার টাকা না পেলেই তাকে হত্যা করছে।

যদি ওসি সালাউদ্দিন মারা গেছে কিন্তু তার সাগরেদরা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। তার অন্যতম সাগরেদ ছিল ওসি প্রদীপ। যে ওসি প্রদীপ টেকনাফে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন সে একজন প্রাক্তন মেজরকে জেদের বসে হত্যা করল, তখনই সরকারের টনক নড়ল। কিন্তু এর আগে যে অগণিত মানুষকে এভাবে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে নির্যাতন করে চাঁদা নিয়েছে, চাঁদার টাকা না পেলে হত্যা করেছে, তখন সরকারের টনক নড়েনি। আর ওসি প্রদীপদের এভাবে বিনা বাধায় অপরাধ সংগঠিত করার পরিণাম স্বরূপ আজ বাংলাদেশের থানায় ওসি সালাউদ্দিন ও ওসি প্রদীপ তৈরি হচ্ছে। ওসি প্রদীপ কারাগারে বন্দি কিন্তু তার সাগরেদ হিসেবে এসআই আকবররা আইন রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

পরে পত্রিকায় দেখলাম, রায়হানের স্ত্রী হত্যা মামলা করার পর এসআই আকবর এবং তার চার সহযোগিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এরপর আকবর পালিয়ে গেলেও তার চার সহযোগিকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এখন কিছুদিন তাদের পুলিশ লাইনের মাছি তাড়াতে হবে। তারপর মিডিয়া ও ইস্যুর চাপে শর্ট টার্ম মেমোরি লস বাঙালি জাতি যখন এই ঘটনা ভুলে নতুন কোনো ঘটনা নিয়ে মাঠ গরম করবে, তখন তাদের নতুন কোনো থানায় পোস্টিং করা হবে। আর স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার এটাই ঘটে যাচ্ছে।

পুলিশের কোনো সদস্য যখনই কোনো আইন ভঙ্গ করে তখন তাকে থানা থেকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। এটাই নাকি তার একমাত্র শাস্তি। দেশের প্রচলিত আইনে তার কোনো শাস্তিই হয় না। এরপর কিছুদিন পর সেই পুলিশ নতুন একটি থানায় জয়েন করে, সেখানেও বেআইনি কাজ করে। তারপর আবার ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে। তারপর আবার নতুন কোনো থানায় জয়েন করে, সেখানেও অনুরূপ ঘটনা ঘটাবে। এভাবেই বাংলাদেশ পুলিশ দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলেছে। যে দেশে আইনের রক্ষকরাই যখন ভক্ষক, সেখানে বেঁচে থাকাটাই একটা মিরাকল!

পঠিত : ৯৬৯ বার

মন্তব্য: ০