কোটি মানুষকে বদলে দিয়েছেন যিনি
তারিখঃ ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৪৭
ড. আব্দুর রহমান আস সুমাইত (রহিমাহুল্লাহ)। কানাডার বিখ্যাত McGill University থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করেছেন। একজন কুয়েতী হিসেবে চাইলে খুব সহজেই পারতেন বাকিটা জীবন বিলাসবহুল ভাবে কাটিয়ে দিতে। কিন্তু তাঁর জীবনে আরো বড় লক্ষ্য ছিল। উদ্দেশ্য ছিল- মানুষকে আল্লাহ্র পথে ডাকা। ছাত্র জীবনে তিনি পকেট মানি বাঁচিয়ে মানুষকে ইসলামিক বই, লিফলেট গিফট করতেন। পড়াশুনা শেষ হবার পর পাড়ি জমান সুদূর আফ্রিকায়।
.
কিন্তু আফ্রিকায় মানুষের করুণ জীবন তাঁকে হতবাক করে। তিনি সেখানে এমন মুসলিম দেখতে পেলেন যারা সূরা ফাতিহা পড়তে জানে না। সালাত সম্পর্কে অনেকের কোন ধারণাই নেই। এমন ইমাম দেখতে পেলেন যারা মসজিদের ভেতরে জিনা করছে অথচ তারা জানে না যে এটা হারাম। এমন গ্রাম দেখতে পেলেন যেখানে খাবার আর বাসস্থানের লোভে সবাই একসাথে মুসলিম থেকে খৃষ্টান হয়ে গিয়েছে। এসব দেখে তিনি তাঁর বাকী জীবনের সবটুকু পরিশ্রম আফ্রিকার জন্য নিবেদিত করেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলামের বাণী পৌঁছে দিতে থাকেন। আফ্রিকার রুক্ষ আবহাওয়ায় তাঁর শরীরে মারাত্নক কিছু অসুখ দানা বাঁধে। পর পর তিনবার তিনি কোবরার ছোবল থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান, দুইবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, দুইবার তাকে জেলে বন্দী করা হয় আর অল্পের জন্য সেখানে তিনি মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান।
.
কখনো এমন হয়েছে টানা তিনদিন চলে গিয়েছে কিন্তু তিনি পান করার মত কোন পানি পাননি। মানুষের মল-মূত্রে পরিপূর্ণ পুকুরে কাতর হয়ে একটু বিশুদ্ধ পানি খুঁজেছেন। একবার অনেক কষ্ট করে তিনি একটা গ্রামে পৌঁছালেন। কিন্তু গ্রামের প্রধান নেতা তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না।
.
সে বলল, “আমি ততোক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে গ্রামে ঢুকতে দিব না, যতোক্ষণ না আপনার রব আমাদের গ্রামে বৃষ্টি না দেয়।”
উনি জবাব দিলেন, “আমার কাছে এটা চেয়ে লাভ নেই। এটা আমার কিংবা তোমার হাতে নেই।”
তখন গ্রামের মাতব্বর বলল, “তাহলে ভাগো। তোমাদের কোন প্রয়োজন নেই।”
.
আব্দুর রহমানের মন প্রচণ্ড কষ্টে ছেয়ে গেল। তিনি আকাশের দিকে চেয়ে কাতর হয়ে আল্লাহ্র কাছে দুয়া করলেন। বললেন-
“হে আমার রব! আমার গুনাহের কারণে তোমার বান্দাদেরকে তোমার প্রতি ঈমান আনা থেকে বঞ্চিত করো না।”
আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল। পুরো গ্রামবাসী ইসলাম গ্রহণ করল।
.
তিনি তাঁর জীবনের আরেকটি স্মরণীয় ঘটনার কথা বলেন- “আমি সে রাতটার কথা কখনোই ভুলব না যখন আমি আর আমার স্ত্রী আফ্রিকার একটি গ্রামে মাঝরাতে একসাথে বসে ছিলাম। আমি আমার স্ত্রীর দিকে তাকালাম। আর তার চেহারায় ক্লান্তি আর অবসাদ দেখতে পেলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- “তুমি কি হাল ছেড়ে দিয়েছ?”
.
তাঁর জীবনসঙ্গিনী জবাব দিলেন। আর সে জবাব শুনলেই বুঝা যায় যে, “প্রত্যেক বিখ্যাত ব্যক্তির পিছনেই একজন অসাধারণ নারী থাকে”- এ কথা কেন বলা হয়! তাঁর স্ত্রী জবাব দিলেন-
“আমি কি তোমাকে বলব আমি আসলে কি ভাবছিলাম? আমি ভাবছিলাম, আল্লাহ্ তায়ালা যদি আমাদের জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দেন, আমরা কি এর চেয়েও বেশী সুখে থাকবো যতোটা এখন আছি?”
.
আব্দুর রহমানের অর্জন কি ছিল আফ্রিকায়?
তাঁর নিরলস পরিশ্রমে প্রায় ৫,৫০০ মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল আফ্রিকাতে। তিনি প্রায় ৫০,০০০ এতীমের সকল ব্যয়ভার বহন করেছিলেন। প্রায় ৭০ লক্ষ কুর’আন বিতরণ করেছিলেন। বারো হাজার কূপ স্থাপন করেছিলেন, নির্মাণ করেছিলেন ৯০টি হাসপাতাল। আর কতোজন মানুষ তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিল সে সংখ্যাটা অজানা। তবে তাঁর অনুসারীদের দেয়া তথ্যমতে, এক কোটিরও বেশী লোক তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
.
অনেক বিখ্যাত সংগঠনের তুলনায় মানবতার প্রতি তাঁর সেবা অনেক বেশী। অনেক বিখ্যাত দায়ীর তুলনায় তাঁর হাতে বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। কিন্তু তবুও তিনি এতোটা বিখ্যাত নন। তিনি নোবেল পাননি। আর এ দুনিয়ার খ্যাতি তিনি চাননি। ইন শা আল্লাহ্, আল্লাহ্ তায়ালাই তাঁকে সবচেয়ে উত্তম পুরস্কার দিবেন।
.
সফলতা মানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বড় ডিগ্রী নেয়া নয়, বড় কোন কোম্পানীর মালিক হওয়া নয়, একজন এমপি কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়া নয়। কোন অনিন্দ্য সুন্দরী নারীকে বিয়ে করে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাকীটা জীবন বিলাসবহুলভাবে কাটিয়ে দেয়ার মধ্যেও সফলতা নেই। ড. আব্দুর রহমান ভালো মতই জানতেন এ দুনিয়ার সব ডিগ্রী, সব খ্যাতি, সব সম্পদের সাথে যদি আখিরাত না জুড়ে থাকে; তবে তার কোন মূল্যই নেই। তিনি এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছিলেন। তাই এ বিশ্বাসের উপর বেঁচেছিলেন, জীবনকে পরিচালিত করেছিলেন আর এর উপরেই মারা গিয়েছিলেন।
.
ইন শা আল্লাহ্ এই বিশ্বাসের উপরেই তাঁকে কিয়ামতে উঠানো হবে, সম্মানিত করা হবে নবী-সিদ্দিক এবং শহীদদের সাথে।
আল্লাহুম্মা আমিন।
.
(আলী হাম্মুদার "WHAT IS YOUR VISION IN LIFE" লেকচারের অনুকরণে লিখিত)
© শিহাব আহমেদ তুহিন
মন্তব্য: ০