Alapon

জাতীয়তাবাদী আন্দোলন | মূসা আ. (দ্বিতীয় পর্ব)

দ্বিতীয়ত
ইসরাঈলীদের কে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে অভিযুক্ত করে চূড়ান্ত নির্মূলের জন্য কাল্পনিক স্বপ্নে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, ফিরাউন স্বপ্নে দেখেছে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে এক খণ্ড আগুন এসে মিসরের কিবতীদের ঘরে প্রবেশ করছে কিন্তু কোনো বনি ইসরাইলিদের ঘরে প্রবেশ করেনি। এ স্বপ্নের ব্যাখ্যায় ফিরাউন জানতে পারে যে, তার রাজত্ব ধ্বংশকারী নবি-রাসুল ইসরাইলিদের ঘরে জন্ম নেবে। যার হাতে ফিরাউনের সকল আহংকার চুর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে ।
এ ধরনের ঠুনকো ও বানায়োট স্বপ্ন বর্ননা করে ফিরাউন বনি ইসরাঈলকে দমনে ঘৃণ্য পন্থা হাতে নেন। ফিরাউন বনি ইসরাইলিদের উপর অত্যাচার- নির্যাতনকে বৈধ করে নিয়েছিলো।

দীর্ঘ শতাব্দী ধরে বসবাসরত ইসরাঈলীদেরকে মিশরের উর্বর ভূমির অধিকার কেড়ে নেয়া হলো। এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যাবহার করা হয়েছিল।

জাতি নির্মূল তথা শিশু পুত্র হত্যা করা ও তাদের শিশু কন্যারা বড় হলে  অন্যদের সাথে বিবাহ দিয়ে অইসরাঈলী রক্তের মধ্যে মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে । যাতে এদের বংশে সুঠামদেহী কোন পুরুষ জন্ম লাভ করতে না পারে।  অর্থাৎ জাতি নির্মূলের সকল আয়োজন সম্পূর্ণ করা হয়েছে। নতুন কোন শিশু পুত্র জন্ম নিলেই তাদেরকে হত্যার নির্দেশ জারি করা হয়।


তৃতীয়ত
সরকারি চাকুরী ও সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদেরকে দিয়ে রাস্তার পরিস্কার পরিছন্নতার কাজে লাগানো হতো। এমনটি গঠিন পরিশ্রমের বিনিময়ে সল্প মজুরী প্রদান করা হতো।
 ফলে মুসলমানদের জীবনমান কঠিন হয়ে গেলো।

সমাজ জীবনে ঈসরাঈলের ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের প্রভাবকে হ্রাস করার জন্য তাদেরকে হেয় পতিপন্ন করা হতো।

চতুর্থত
ফিরাউনের কাছে তার সভাসদগণ(হামান) দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার জন্য প্রস্তাব করে। কারন শিক্ষিত জাতি সহজে ফিরাউনকে প্রভু হিসেবে মেনে নিবে না। তাই অসীম ক্ষমতা অর্জনের জন্য জাতিকে শিক্ষার আলো থেকে দূরে রাখতে হবে। ফলে ফিরাউন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলো। 

এ দিকে মিশরের ক্ষমতা পরিবর্তন ঘটে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় ফিরাউন মিন ফিতাহ।শাসক পরিবর্তন হলেও নীতি অপরিবর্তিত থাকে। এ দিকে জুলুম নির্যাতনের মাত্রা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে  তখন আল্লাহ তা'য়ালা জালিমকে হেদায়াত দানের জন্য তথা তাওহীদের পথে  নিয়ে আসার জন্য একজন মহান নবিকে পাঠিয়েছেন। তিনি  হলেন হযরত মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহি সালাম। যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দ্বীনে হক দিয়ে পাঠিয়েছন।
 
আধুনিক কালে আমরা দেখি দেশে জালিম স্বৈরাচারী শাসকগণ বিরোধীদল বা গোষ্ঠী কে নির্মূল করতে জাতীয়তাবাদ, বর্নবাদ কখনো মুক্তি সংগ্রামের পক্ষ বিপক্ষে ইস্যু তৈরী করে জাতিকে বিভক্ত করে কর্যসিদ্ধ করে। 


জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিংশ শতাব্দীতে  পুরো ইসলামী বিশ্বকে ভেঙে টুকরো টুকরো করেছে। পরবর্তীতে দেশে দেশে ইসলামী রাজনৈতিক শক্তি কে কখনো দেশদ্রোহী আখ্যায়িত করা হয়েছে।  চাকুরী চ্যুত করা হয়েছে।  রাজনৈতি অধিকার হরণ করা হয়েছে। 

সুতরাং স্বৈরাচরীগণ সাধারণত জাতীয়তাবাদী নীতি বা দেশ প্রেমের কথা বলে জনগণকে নির্যাতন করে থাকে। তাদের স্বার্থ হাসিল করা চেষ্টা করে। কিন্তু নবী আলাইহি সালামগণ জাতীয়তাবাদ বাদকে কখনো মানুষকে ভালো মন্দের মাপকাঠি বানায়নি।

নবীগণ সবসময় মানুষে আল্লাহ প্রকৃত বান্দা হবার দাওয়াত দিয়েছেন। এবং ভাতৃত্বের সম্পর্ক স্হাপন করে দিয়েছেন। এবং তাকওয়া কে মর্যাদা ও সন্মানের মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করেছেন।

কোরআন করিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ২২, ২১, পারা: ২১, পৃষ্ঠা: ৫-৪০৭)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাঁদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ (সুরা-১৪ ইবরাহিম, আয়াত: ৪, পারা: ১৩, পৃষ্ঠা: ১৪-২৫৬)।

কোরআনে করিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন। (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১৩, পারা: ২৬, পৃষ্ঠা: ১৬-৫১৮)।

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন যে, নাককাটা হাবসী গোলামও যদি তোমাদের নেতা হয়, তা হলে তোমরা তার অানুগত্য করবে।

এ থেকে বুঝা যায় যে  ইসলামে রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদের কেন স্থান নেই। নবী করিম সা আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে ভাতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে  জাতীয়তার ফিতনা দূর করেছিলেন।

একটি বিষয় খেয়াল কারলে প্রতিয়মান হয় যে, ইবলিশ সর্বপ্রথম জাতীয়তাবাদের স্লোগান দিয়েছিলো। সে বলে ছিলো আমি হলাম নূরের তৈরী আর আদম হলো মাটির তৈরী। সুতরাং আমি আদমকে সিজদাহ্ করবো না। সে সিজদাহ্ না করার অযুহাত দিয়েছে মূলত জাতীয়তার শ্রেষ্ঠত্বের সেন্টিমেন্ট থেকে। যার দরুন আল্লাহ তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
চলবে...............

পঠিত : ৪৮৯ বার

মন্তব্য: ০