Alapon

মাদখালী দায়ির কাজকাম

ইউকের বিখ্যাত মাদখালী দাঈর একটা পডকাস্টের কিছু অংশ দেখলাম। বরাবরের মত শাসকদের অত্যাচারে সবর করার নির্ভরযোগ্য বর্ণনাগুলো মারাত্মকভাবে অপব্যাখ্যা করেছে, প্রসঙ্গ ছাড়া ব্যবহার করেছে। এটা তাদের পুরানো কাজ, এ বিষয়ে আর কিছু বললাম না। কিন্তু এদেরকে যখন বলা হয়- অনেক সালাফই তো যালিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন (অধিকাংশই তাকফীর না করেই বিদ্রোহ করেছেন, অর্থাৎ, শাসক কাফির হয়ে গেছে এ কারণে নয়, বরং শাসকের মাত্রাতিরিক্ত যুলম ঠেকানোর জন্যই তারা বিদ্রোহ করেছিলেন)। তখন তাঁরা বলে দেয়, ‘সালাফরা ভুল করেছিলেন, তাঁদের সময় হাদীছের কিতাবাদি সংকলিত হয়নি, আকীদাহর কিতাব সংকলন হয়নি, তাই শাসকদের বিরুদ্ধে উনাদের অবস্থান আমরা মানি না, আমরা হাদীছ মানি।’ আশ্চর্য কথা! বড়ই আজব কথা! এরা নিজেরাই সালাফদের বুঝের কথা বলে, আর এখানে এসে সালাফদের বুঝ ব্যতিরেকেই হাদীছের মতন নিয়ে পড়ে থাকে, আর বলে সালাফরা ভুল করেছেন, শাসকদের বিরুদ্ধে আহলে সুন্নাহ তো কেবলই দুআ করেই ক্ষান্ত হবে, এটাই নাকি সাহীহ আকীদাহ!
.
ইমাম ইবনু ইমাদ হাম্বলী (মৃ. ১০৮৯ হি) লিখেছেন,
.
والعلماء مجمعون على تصويب قتال عليّ لمخالفيه لأنه الإمام الحق ونقل الاتفاق أيضا على تحسين خروج الحسين على يزيد، وخروج ابن الزّبير، وأهل الحرمين على بني أمية، وخروج ابن الأشعث ومن معه من كبار التابعين وخيار المسلمين على الحجّاج
“আলেমগণ বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে আলীর যুদ্ধকে সঠিক বলে মনে করেন, কেননা তিনি ছিলেন সত্য ইমাম। একইভাবে ইয়াযিদের বিরুদ্ধে হুসাইনের বিদ্রোহ, বনু উমাইয়্যাহর বিরুদ্ধে ইবনু যুবাইর ও হারামাঈনবাসীর বিদ্রোহ এবং হাজ্জাজের বিরুদ্ধে বড় বড় তাবিঈ ও উত্তম মুসলিমদের সাথে নিয়ে ইবনুল আশআছের বিদ্রোহকে সঠিক ভাবার ব্যাপারে আলেমরা ঐক্যমত পোষণ করেছেন বলে বর্ণিত হয়েছে।” (শাযারাতুয যাহাব, ১/২৭৬)
.
বিখ্যাত তাবিঈ হাসান ইবনু সালিহের ব্যাপারে বর্ণিত আছে তিনি যালিম শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করা জায়েজ বলে মনে করতেন। ইমাম ইবনু হাজার (মৃ. ৮৫২ হি) তাঁর জীবনীতে লিখেছেন,
.
كان يرى السيف يعني كان يرى الخروج بالسيف على أئمة الجور وهذا مذهب للسلف قديم
“তিনি যালিম শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণকে বৈধ বলে মনে করতেন, আর এটাই পূর্ববর্তী সালাফদের মত ছিলো।” (তাহযীবুত তাহযীব, ২/২৮৮)
.
ইয়াযিদ এদের কাছে বৈধ শাসক, তখন তো হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু বিদ্রোহী, বাগী হবেনই। তাহলে কি হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহুকে মেরে ইয়াযিদ সঠিক কাজই করেছে? উনি কি তাহলে শহীদ না? উনি কি তাহলে ইয়াযিদের বিরুদ্ধে খুরুজ করে গুনাহ করেছেন? তাহলে কি সাইয়্যিদুশ শুহাদার আকীদাতে সমস্যা ছিলো? কারণ মাদখালীদের কাছে বিদ্রোহের মাসআলা বিদআতের মাসআলা, এখানে চুন থেকে পান খসলেই বিদআতী ট্যাগ দিয়ে দেওয়া যায়। তাহলে কি হুসাইনও বিদআতী ছিলেন? কিন্তু ইমামগণ তো বলেন ভিন্ন কথা। তাঁরা হুসাইনকে হক মনে করেন, ইবনু যুবাইরকে হক মনে করেন, ইবনুল আশআছকে হক মনে করেন। তাঁরা ইয়াযিদ ও হাজ্জাজের মত শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে জায়েজ বলেই মনে করেন। ইবনু ইমাদ লিখেছেন,
.
ثم الجمهور رأوا جواز الخروج على من كان مثل يزيد، والحجّاج
“অধিকাংশ আলেমই ইয়াযিদ ও হাজাজ্জের মত শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে বৈধ মনে করেন।”
.
আফসোস তাঁদের জন্য! যারা আজকে ইয়াযিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খণ্ডন করার জন্য নয়শোর বেশি পৃষ্ঠা খরচ করে, আমিরুল মু’মিনীন সম্বোধন করে, তাও আবার এমন লোক যার তাফসীর সৌদি থেকে ছাপা হয়, মারা গেছেন সেই আলেম সাহেব, রাহিমাহুল্লাহ। কিন্তু এক্ষেত্রে উমার ইবনু আব্দুল আযীযের আচরণ কেমন ছিলো? ইবনু ইমাদ লিখেছেন,
.
وقال رجل في حضرة عمر بن عبد العزيز: أمير المؤمنين يزيد، فضربه عمر عشرين سوطا
“উমার ইবনু আব্দুল আযীযের উপস্থিতিতে কেউ একজন বললো, ‘আমিরুল মু’মিনীন ইয়াযিদ’, উমার সেই লোকটিকে বিশটি চাবুকের ঘা মারলেন।”
.
আল্লাহ আমাকে ও এদের সবাইকে হেদায়াত দিন, আমীন।


লিখেছেন : হোসাইন শাকিল

পঠিত : ৩৯৭ বার

মন্তব্য: ০