Alapon

কম্পিউটার প্রসেসর টেকনোলজির এ টু জেড



প্রসেসরই কম্পিউটারের মাথা। নতুন কম্পিউটার কেনার সময় প্রসেসর নির্বাচনই প্রথম ধাপ আর প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন উন্নয়নে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভার্সন, জেনারেশন ফিচার যুক্ত হচ্ছে প্রসেসর ও কম্পিউটার প্রযুক্তিতে। এজন্য কম্পিউটার বা প্রসেসর কেনার সময় একজন সাধারণ ব্যবহারকারী এমনকি প্রযুক্তি সচেতন মানুষেরাও কনফিউজড হয়ে যান। নিচে প্রসেসরের লেটেস্ট টেকনোলজি, এর নানা ধরণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে সহজে বোঝার মত একটি আলোচনা করা হল।
প্রসেসর কেনার সময় প্রথমে দুটো বিষয় আপনাকে চিন্তা করতে হবে

১. কি কাজ করবেন কম্পিউটারে?
২. দামী নাকি সাশ্রয় চান?

কেমন পিসির জন্য কেমন প্রসেসর হয়ে থাকে?
প্রথমেই আমাদের প্রসেসরের আধুনিক প্রযুক্তি এর ফিচার বা বৈশিষ্টগুলি জানা দরকার। প্রসেসর কেনার সময় যে গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলি দেখে কিনবেন

1. কোর Core:

Dual Core, Core2 Duo, Quad Core, Core i3, i5, i7 ইত্যাদি আমরা শুনে এসেছি। Core হলো processor এর একটা অংশ, সেই মূলত হিসাব-নিকাশ করে, নির্দেশ পালন করে! হার্ডওয়্যার সফটওয়্যারের সমন্বয় সাধন করে। সুতরাং, Dual Core processor মানে দাঁড়ায় একের ভেতর দুই! প্রসেসর এর একেকটা কোর একেকটা স্বাধীন সিপিইউ।
Core বেশি থাকলে CPU একসাথে অনেক ধরনের কাজ করতে পারবে। যেমন আপনার দুইটা কাজ আছে, একজনকে করতে দিলে দেরি হবে, দুজনকে ভাগ করে দিলে দ্রুত হয়ে যাবে অনেকটা এমন।
আবার সব ধরণের সফটওয়্যার/প্রোগ্রাম কাজ করার সময় সবগুলো Core দখল করেনা, কোনো প্রগ্রাম একাধিক Core নিয়ে কাজ করে, যেমন 3D, গেমিং ও ভিডিও প্রডাকশন সফটওয়্যারগুলো। কোনোটা একটাতেই হয়ে যায় ২টা কোর থাকলেও সেটা একটা কোরই দখল করবে।

2. ক্লক স্পিড Clock Speed:
যেমনটা হৃদস্পন্দন, আপনার কম্পিউটারের হার্ট (প্রসেসর) কত দ্রুত স্পন্দিত হয় সেটাই তার স্পিড বা হার্টজ। বর্তমানের সেটা Giga Hertz [GHz] এ দেয়া থাকে। যেমন Core 2 duo 2.4 GHz, Core i3 4.30 GHz.
আবার Dual Core 2.4 GHz মানে কিন্তু 2x2.0 বা 4 GHz নয়। পাশাপাশি দুইটা গাড়ি ৬০ কি.মি/ ঘন্টায় চললে কি তাদের স্পিড ১২০ কি.মি হয়ে যায়!
শুধু Clock Speed বেশি হলেই যে আপনার কম্পিউটারের গতি বেড়ে যাবে এমন না! এর সাথে Cache Memory সহ আরও কিছু বিষয় জড়িত।

3. ক্যাশ মেমোরি Cache Memory:
কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় Memory হলো Hard Disk এরপর RAM, প্রসেসর কাজ করার সময় সবচেয়ে কাছের মেমোরি RAM কে ব্যবহার করতো এরপর একটু দূরে হার্ডডিস্ক যেখানে ফাইনালি ডাটা সেভ করে। এই দূরত্বের কারণে স্পিড কমবেশি হয়ে থাকে এই র‌্যামের এই সামান্য দূরত্ব দুর করতে প্রসেসরের ভেতরেই কিছুটা মেমোরি দিয়ে দেয়া হয়েছে এটাই ক্যাশ মেমোরি Cache Memory

এখান থেকে ডাটা আদান-প্রদান করতে Processor এর সবচেয়ে কম সময় লাগে। এখানে সে এমন সব ডাটা জমা রাখে যে গুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে বারবার ব্যবহার করা হচ্ছে। Cache Memory যদি বড় হয়, তাহলে সে processor এর কার্যক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।

4. ফ্রন্ট সাইড বাস Front-Side Bus (FSB):
Front-side bus প্রসেসর এর সাথে RAM ও ইনপুট/আউটপুট যন্ত্রগুলির দ্রুত যোগাযোগের একটা পদ্ধতি
ইন্টেলের সব প্রসেসরেই বর্তমানে এই প্রযুক্তি আছে। AMD প্রসেসরেও পরবর্তিতে এই প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে।

5. টার্বো বুস্ট Turbo Boost:
ইন্টেলের চমৎকার একটি প্রযুক্তি সাধারণ প্রসেসরে ডিফল্টভাবে একটা গিগাহার্জ সীমা বেধে দেয়া থাকে যার উপরেও স্পিড বাড়িয়ে ব্যবহার করা যায়। প্রসেসরের রেকমেন্ডেড স্পিডের চেয়ে বাড়ানোকে ওভারক্লকিং বলে। সাধারণ কাজে নরমাল স্পিডে চললেও ভারি কাজের প্রয়োজনে প্রসেসরের গতি আপনাআপনি বেড়ে গিয়ে কাজে হেল্প করে। এই প্রয়োজনে অটোম্যাটিক স্পিড বেড়ে যাওয়াকে টার্বো বুস্ট বলে। কোর আই ৫ ও কোর আই সেভেনে এই টার্বো বুস্ট টেকনোলজি আছে, কোর আই ৩ তে নেই।

6. হাইপার থ্রেডিং Hyper-Threading:
এটা ইন্টেল প্রসেসরের একটা প্রযুক্তি, এর মাধ্যমে প্রসেসরের বাস্তবিক (Physical) একটি কোরকে কাল্পনিক দুটি কোরে কনভার্ট করা হয়। অর্থাৎ প্রসেসরে যেখানে দুটো কোর সেখানে অপারেটিং সিস্টেম মনে করে ৪ টা কোর। তখন সে কাজগুলোকে এই কোরগুলোর মাঝে ভাগ করে দেয়। যদিও ৪টা কাল্পনিক কোর ৪টা ফিজিক্যাল কোরের সমান কাজ করতে পারেনা, কিন্তু একসাথে অনেক কাজ বা মাল্টিটাস্কিং করার সময় এটা চমৎকারভাবে কাজে আসে। ইন্টেলের কোর আই ৩ ও কোর আই ৭ এ এই হাইপার থ্রেডিং টেকনোলজি আছে কোর আই ৫ এ নেই।

7. কে-মডেল K-Models:
এটা প্রসেসরের মডেলের শেষে দেয়া একটা চিহ্ন এখানে K মানে হল এই প্রসেসরটা আনলকড। যার ফলে BIOS সেটিং থেকে ব্যবহারকারী এর ক্লকস্পিড বাড়িয়ে সর্বোচ্চ স্পিড ব্যবহার করতে পারবে যেমন Intel Core i7-4790K .

8. গ্রাফিক্স চিপ Graphics chip:
প্রতিটি ইন্টেল প্রসেসরে বিল্ট ইন গ্রাফিক্স চিপ, বা GPU গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট থাকে এর কাজ হল ভিডিও প্রসেস করা। এটা গেমের জন্য অত কার্যকরী নয়, তবে বর্তমান intel HD Graphics 4400 - 4600 ওয়ালা প্রসেসরগুলোতে হালকা ধরণের গেম চালানো যায়। তবে যত ভালো বিল্ট ইন গ্রাফিক্স থাকুক না কেন ভারী গেম বা ভিডিও এডিটিং এ সেটা খুব একটা কাজে দেয়না। এজন্য গেমিং বা ভিডিও প্রডাকশনের ইচ্ছা থাকলে অতিরিক্ত গ্রাফিক্স কার্ড লাগিয়ে নিতে হবে।

9. জেনারেশন Processor Generation:
প্রতি ১২ থেকে ১৮ মাসে ইন্টেল প্রসেসরের নতুন জেনারেশন আসে।যেটা তার আগের জেনারেশনের তুলনায় একটু বেশি কার্যকরী ও বেশি গতিসম্পন্ন হয়। তবে সব প্রসেসরের নতুন জেনারেশন একই সময়ে আসেনা।২০১৬ তে Kaby Lake U এবং Y সিরিজের এর প্রসেসরগুলো আসতে শুরু করে । ৭ জেনারেশন প্রসেসরের সবগুলো ভার্সন ও সিরিজ পূর্নাঙ্গভাবে আসে ২০১৭ এর জানুয়ারিতে। সেভেন জেনারেশনের Kaby Lake সিরিজের প্রসেসরগুলো এখন শুধুমাত্র বিজনেস ল্যাপটপগুলোতে আছে।



10. থার্মাল ডিজাইন TDP (Thermal Design Power):
এটা হল প্রসেসরের বিদ্যুতের ওয়াট এবং টেম্পারেচারভিত্তিক ডিজাইন। প্রসেসরের বেশি ওয়াট মানে বেশি স্পিড আবার অন্যদিকে বেশি বিদ্যুৎ ক্ষয় এবং বেশি হিট (গরম) । সুবিধা থাকলে কিছু অসুবিধা তো থাকবেই।

11. ভি’প্রো vPro:
এটা হল প্রসেসরের বিল্ট ইন রিমোট ম্যানেজমেন্ট ফিচার যেটা বিশেষত IT ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয় । বিজনেস ক্লাস ল্যাপটপগুলোতে vPro, ফিচার থাকলেও সাধারন ল্যাপটপগুলোতে থাকেনা।

12. ব্র্যান্ড Brand Intel vs AMD:
প্রসেসরের বাজারে একসময় একচেটিয়া আধিপত্য করত ইন্টেল কিন্তু সম্প্রতি এমএমডি রাইজেন সিরিজের প্রসেসর এনে কম দামে বেশি কোরের কারণে অল্প সময়েই বাজারে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। গেমিং এবং ভিডিও এডিটিং পারফর্মেন্স ইন্টেলের কাছাকাছি অথচ দাম কম এজন্য কম্পিউটার বানাতে এমডির প্রসেসরও এখন বিবেচনার বিষয়।

পঠিত : ৩৩৯৮ বার

মন্তব্য: ০