Alapon

শৈশবের প্রথম রোজা

শৈশব! রমজান মাস এলেই রবিউলের ছোট্ট প্রাণটা নেচে উঠত খুশিতে। সবার সঙ্গে সাহরি খাওয়া, ইফতারি করা, মসজিদে দল বেঁধে তারাবি পড়ার সে কী আনন্দ! যদিও তখন নামাজের নিয়মকানুন কিছুই জানতো না সে। সামনের ব্যক্তি যতবার সেজদায় যেতেন রবিউলও ততবার সেজদায় গিয়ে রাকাত পূর্ণ করতো।শৈশবের রমজানে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সময় ছিল ভোররাতের সাহরি। ভোর রাতে ইমাম সাহেব ভরাট কণ্ঠে বলতেন! উঠুন, সাহরি খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আর ঘুমাবেন না। মাঝেমধ্যে তিনি সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত করতেন।

ভোররাতে বড় ভাই, মেজ ভাই, সেজ ভাই সবাইকে ডেকে ওঠানো হতো। রবিউল ও তাঁর ছোট দুই ভাইকে ডেকে তোলা হতো না। তবুও তাঁরা ইমাম সাহেবের গলার আওয়াজে জেগে উঠতো। তাঁদের দেখে মা আদর করে পাশে বসিয়ে খেতে দিয়ে বলতেন, তোমরা ১০টা বাজলে আবার খাবে। সকাল ১০টায় তোমাদের এক রোজা পূর্ণ হবে।

তাঁরা মায়ের কথামতো ১০টা বাজলে সকালের প্রথম ইফতার করে আনন্দে নাচানাচি করতে থাকতো। কানামাছি খেলায় চোখ–বাঁধা কানামাছিকে ‘টুকি’ দিতে দিতে সুর করে গলা ছেড়ে গাইতো ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ’। খেলায় মেতে থাকায় ইফতারের সময়ের কিছুক্ষণ আগে দৌড়ে বাড়ি ফিরে আসতো রবিউল।সবার সাথে আরো একদাপ ইফতার শেষে দৈনিক তিন নাম্বার রোজাটা পূর্ণ হতো রবিউলের।

বয়স তাঁর একটু বেড়েছে সদ্য আট থেকে নয় বছরে পা রেখেছে রবিউল। কিন্তু এবার তাঁর দৈনিক তিনটা নয়।বরং সবার মত একটি রোজাই রাখার প্রবল ইচ্ছের জাগরণ ঘটেছে তাঁর হৃদয়পট জুড়ে। কিন্তু, বড় মেজ সেজ ভাই কেউ তাঁর অনুরোধ রাখার পাত্র নয়। কারণ! গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রস্নাত বিষ্ণুযশ যুবকদেরও হাড়ভাঙা কষ্টের অনুভূতি পাইয়ে দেয়। আর রবিউল সে অনুপাতে পানিতে মিলিয়ে যাওয়া লবনের মতো। আর তাই কেউ তাঁর মিষ্টি অনুরোধে রাজি হলো না! এখন শেষ উপায় মা। রবিউল মুখ কালো করে মায়ের পাশে গিয়ে বসলো। মায়ের পানে মুখ করে বললো!

—মা! আমিও রোজা রাখবো। তবে, আপনাদের মত একটাই রোজা।
—তাহলে তো বাবা সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে। তুমি খেলাধুলায় তৃষ্ণার্ত হয়ে পরবে।আর তখন পানিও খেতে পারবে না। আরেকটু বড় হও সামনের বছর থেকে শুরু করবে না হয় ইনশাআল্লাহ "
— না মা! আমি প্রয়োজনে খেলবো না তবুও আমি রোজা রাখবো। প্লিজ মা প্লিজ
— আচ্ছা ঠিকাছে কিন্তু কাল খিদে লাগলে আমাকে কিছু বলতে পারবে না আর রোজাও ছাড়া যাবে না।
—ঠিকাছে আম্মু উমমম্মাহ্!(পাপ্পি দিয়ে) তাহলে প্রমিজ করেন আমাকে ঘুম থেকে জাগাবেন?
—ঠিকাছে প্রমিজ।

আজ প্রথম রোজা। দুপুর পর্যন্ত রবিউল সুস্থসবল স্বাভাবিক ছিলো। মায়ের কথায় মসজিদে গিয়ে দুপুরের সালাত আদায় করে আসলো। বাহিরে খুব প্রখর রোদ্র রবিউল বাসায় এসে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে উঠে একবার এদিক-ওদিক ঘোরপাক খাচ্ছে। মা দরজার সামনে কুরআন তেলোওয়াত করছিলেন। বারংবার দরজায় গিয়ে থু-থু ফেলছিলো রবিউল। রবিউলের এ অবস্থায় মা বুঝতে পেরেছে! রবিউল খুব দূর্বল হয়ে পড়ছে! মাকে কিছু একটা বলবে কিন্তু বলছে না। এমনি করে আছরের আজান পড়লো মা ছেলে একসাথে সালাত আদায় করলো।সালাত শেষে জায়নামাজে মায়ের সামনে হাঁটুগেড়ে বসল রবিউল, মা'কে প্রশ্ন করলো!

-মা আমরা এই যে নামাজ-রোজা পড়ি কি জন্য? কি হবে রোজা রাখলে?

রাকিবের মা উঁচ্চশিক্ষিত নাহলেও মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ খুব পর্দানশীন ধার্মিক পরিবারের মেয়ে, ছেলের এমন প্রশ্ন শুনে মা মুচকি হেসে বললো।

—বাবা, নামাজ-রোজা হলো মুমিন মুসলমানের জন্য ফরজ তা একমাত্র আল্লাহ্তায়ালার জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য[০১] আর নামাজ রোজা আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে একটি। এবং আল্লাহ নিজেই এর প্রতিদান দিবেন।[০২]

—তাহলে রোজার আসল উদ্দেশ্য কি মা?
—রোজার আসল উদ্দেশ্য হলো যাতে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি।[০৩]

—তাকওয়া কি মা? এর অর্থ কি?

— শোনো বাবা! তাকওয়া অর্থ হচ্ছে বাঁচা, আত্মরক্ষা করা, নিষ্কৃতি লাভ করা। অর্থাৎ আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যাবতীয় অপরাধ, অন্যায় ও আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ, কথা ও চিন্তা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার নাম তাকওয়া।

প্র্যাকটিকাল সহজ ভাবে বলতে গেলে – আমরা যা ভাবছি, যা করছি, যা বলছি, যা শুনছি – আল্লাহ তার সবকিছু দেখছেন, শুনছেন, রেকর্ড করে রাখছেন, বিচার দিবসে সবার সামনে আমাদের গোপন-প্রকাশ্য সমস্ত কাজ দেখানো হবে, ভাল-মন্দ সব কাজের প্রতিদান দেয়া হবে – এই চিন্তাগুলো মাথায় রেখে যে কোন কিছু করার নামই তাকওয়া।

বাবা ব্যাপারটা কিন্তু আসলে খুব ভয়ংকর। আমি আজ সকালে ফজরের নামাজ পড়েছিলাম কিনা তার জবাব আমাকে দিতে হবে, ঠিক মত হিসাব করে তোমার বাবা যাকাতের টাকা গরীব মানুষকে দিয়েছে কিনা তার জবাব দিতে হবে, সুদের টাকায় বাড়ি-গাড়ি করলে তার জবাব দিতে হবে, কোন বন্ধুর সাথে অন্য কোন বন্ধুর বদনাম করলে তার জবাব দিতে হবে, রিকশাওয়ালাকে অকারণে ধমক দিলে তার জবাব দিতে হবে, অফিসে বসে কাজে ফাঁকি দিলে জবাব দিতে হবে, জবাব দিতে হবে,পড়ালেখায় ফাঁকি দিলে জবাব দিতে হবে। আমাদের প্রতিটা কাজের, কথার, চাহনির জবাব দিতে হবে।

তাকওয়া একটি উন্নতর মানবীয় গুণ। তাকওয়া ছাড়া কোনো ব্যক্তির পক্ষে ইহজগতে সৎ ও কল্যাণকর কাজ সম্পাদন করে পরজগতে মুক্তিলাভ করা সম্ভব নয়। কারণ সব সময় মানুষ অসৎ ও অনিষ্টকর কাজ করার জন্য এবং খোদাদ্রোহিতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য প্ররোচিত হয়। তাই তাকওয়া বা খোদাভীতি ছাড়া এসব থেকে বিরত থাকা সম্ভব নয়।[০৪]

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'হে মোমিনরা, যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়।'[০৫]। আল্লাহ পাক আরও বলেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য একটা পথ করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে দান করেন যা সে কল্পনাও করে না।' [০৬]। 'যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজকে সহজ করে দেন।' [০৭]।

তাকওয়া হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের অন্যতম সেতুবন্ধ, একজন মুসলমান তার আরেক মুসলমান ভাইকে ভালোবাসবে, সাহায্য-সহযোগিতা করবে শুধু আল্লাহর ভয়ে। যদি প্রতিদান পাওয়ার আশায় কোনো মুসলমানকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয় তাহলে তার আমলগুলোর কোনো সওয়াব পাওয়া যাবে না। নিঃস্বার্থভাবে অপরকে ভালোবাসতে হবে।

হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসল তারই জন্য কাউকে ঘৃণা করল, তারই জন্য কাউকে দান করল এবং তারই জন্য কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকল সে অবশ্যই ঈমানকে পূর্ণতা দান করল। [০৮]।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই যে তার প্রতি জুলুম করে না, তাকে অপমানিত করে না তাকে অসহায় বন্ধুহীন করে না। তাকওয়া এখানে এই বলে তিনি নিজ বক্ষের দিকে তিনবার ইঙ্গিত করেন। [০৯]।

বর্তমান সমাজে আমরা যে নৈতিক অবক্ষয় পরিলক্ষণ করি যেমন মেয়েদের উত্যক্তকরণ, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস ইত্যাদি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমাদের মধ্যে তাকওয়া তথা খোদাভীতির অভাব।

বিশিষ্ট দার্শনিক ইমাম জাকালি (রা.) বলেন, তাকওয়ার স্তর হচ্ছে চারটি_

* শরিয়ত যেসব বস্তু হারাম করেছে, সেসব বস্তু থেকে বিরত থাকা। যেমন মদ-সুদ, জুয়া, জেনা ব্যভিচার ইত্যাদি। এটা সাধারণ মোমিনের তাকওয়া এ শ্রেণীর মুত্তাকিকে বলা হয় মোমিন

*
হারাম বস্তু থেকে বিরত থাকার পর সন্দেহযুক্ত হালাল বস্তুগুলো থেকে দূরে থাকা। এ শ্রেণীর মুত্তাকিকে বলা কথা হয় সালেহ


* যাবতীয় হারাম বস্তু ও সন্দেহযুক্ত হালাল বস্তুগুলো থেকে দূরে থাকার পর আল্লাহ তায়ালার ভয়ে অনেক সন্দেহবিহীন হালাল বস্তুও পরিত্যাগ করে_ এ শ্রেণীর লোককে বলা যায় মুত্তাকি।

* উপরোক্ত তিন শ্রেণীর তাকওয়া আয়ত্ত করার পর এমনসব হালাল বস্তু পরিত্যাগ করা, যা ইবাদতে কোনোরূপ সহায়তা করে না। এ শ্রেণীর মুত্তাকিকে বলা হয় সিদ্দিক।[১০]

এতক্ষণ রবিউল মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সব কথা শুনছিলেন আর মাঝে মাঝে মাকে প্রশ্নই করে যাচ্ছেন।

—কিন্তু, রোজা রাখার সাথে তাকওয়া অর্জনের সম্পর্ক কি মা?

— রোজাকে আরবীতে ‘সাওম’ বলে, যার অর্থ হলো বিরত থাকা। রোজা রাখলে আমরা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেই, এমনকি যখন একা ঘরে থাকি, বাথরুমে থাকি তখনও কিন্তু আমরা খাই না। আমরা খাই না কারণ কেউ না দেখলেও তো আল্লাহ্‌ দেখছে, অর্থাৎ আমরা তাকওয়ার কারণেই রোজার সময় খাই না। এখন দেখো, এই খাবার খাওয়া কিন্তু আমাদের মৌলিক চাহিদা। কিন্তু, গীবত করা, গান-নাচ দেখা, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা, কাজের লোকের সাথে খারাপ ব্যবহার , মানুষের উপকার করে খোঁটা দেয়া – এগুলো একটাও কি আমাদের মৌলিক চাহিদা? না। রোজার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ ‘আযযা ওয়া জাল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন – হে মানুষ! তোমরা যদি তাকওয়ার কারনে তোমার মৌলিক চাহিদা থেকেই বিরত থাকতে পারো, তাহলে যেই কাজগুলো অপশনাল সেগুলো থেকে কেন বিরত থাকতে পারবে না?

আবার ভেবে দেখো বাবা রোজার সময় না খাওয়ার কারণে আমাদের শরীর দুর্বল থাকে। আর দুর্বল শরীরে আমাদের নফসের বা অন্তরের কু-চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আর নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে আল্লাহর হুকুম মেনে চলার নামই তো তাকওয়া।

—আচ্ছা মা তাহলে আমরা তাকওয়া অর্জন করবো কিভাবে ?

— শোনো বাবা! আল্লাহ তা'আলা বলেছেন—

‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর। তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য রাস্তা তালাশ কর এবং তাঁর রাস্তায় মেহনত কর। যাতে এসব কিছুর ফলে তোমাদের সফলতা অর্জিত হয় দুনিয়াতেও, আখিরাতেও।[১১]

তাকওয়া এক অতন্দ্র প্রহরী:

আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে প্রথমে তাকওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পুরা কুরআন মজীদ তাকওয়ার নির্দেশে পরিপূর্ণ। স্থানে স্থানে একটু পরপরই তাকওয়ার নির্দেশ এসেছে। কুরআন মজীদের রীতি হল, কোনো নির্দেশ বা বিধান জারি করার পূর্বে বা পরে সাধারণত তাকওয়ার আদেশ করা হয়। কারণ তাকওয়াই হচ্ছে ওই বস্তু, যা মানুষকে আল্লাহ তাআলার যে কোনো হুকুম পাবন্দীর সাথে মেনে চলতে বাধ্য করে।

তাকওয়া অর্জনের প্রথম পদ্ধতি—

وابةغوا اليه الوسيلة وابتغوا اليه الوسيلة

আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের জন্য ‘ওসীলা’ তালাশ কর। ‘ওসীলা’ কী? মুফাসসিরগণ এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন, ‘ওসীলা’ হল নেক আমল। যত বেশি নেক আমল করবে, ততই তাকওয়া হাসিল হবে এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জিত হবে। কেউ অন্য ব্যাখ্যাও করেছেন। একটি ব্যাখ্যা হল-যার সমর্থন অন্য আয়াতেও পাওয়া যায়-‘ওসীলা’ তালাশ করার অর্থ এমন ব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণ করা, যাঁরা তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত। এটি তাকওয়া অর্জনের সবচেয়ে সহজ ও সবচেয়ে ফলপ্রসূ পন্থা।

ব্যক্তিগত কিছু আমল:

* প্রথম আমল : দুআ

অর্থাৎ আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং চাইতেই থাকা। এর একটি উপায় হল, জীবনের সকল কাজে মাসনূন দুআর ইহতিমাম করা। যেমন ঘুম থেকে উঠে দুআ পড়া, ইস্তিঞ্জাখানায় যেতে ও বের হতে দুআ পড়া, ফজরের সময় মসজিদে যেতে দুআ পড়া, ঘরে ঢুকতে ও বের হতে দুআ পড়া, খাবারের শুরুতে ও শেষে দুআ পড়া। মোটকথা, জীবনের প্রতিটি কাজে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দুআ শিখিয়েছেন তা পাঠ করা। মানুষ একে সামান্য আমল মনে করে। আসলে তা অসামান্য আমল।

*দ্বিতীয় আমল : শোকর

অর্থাৎ বেশি বেশি শোকরগোযারি করা। চিন্তা করে দেখো, প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তাআলার কত অসংখ্য নেয়ামত আমাদের উপর বর্ষিত হচ্ছে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। এগুলো সবল ও কর্মক্ষম থাকা কত বড় নেয়ামত! স্বাভাবিক অবস্থায় এই সব নেয়ামতের মূল্য না বুঝলেও যখন কোনো একটি অঙ্গ অসুস্থ বা অকেজো হয়ে পড়ে তখন তার মূল্য বুঝে আসে।

তাকওয়া অর্জনের দ্বিতীয় পদ্ধতি:

মুজাহাদা অর্থাৎ প্রবৃত্তির বিরোধিতায় সর্বাত্মক চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করা। মনে ছাচ্ছে না মসজিদে যেতে, মনের বিরুদ্ধাচরণ করে মসজিদে চলে যেতে হবে। গুনাহ ছাড়তে মনে ছাচ্ছে না, তারপরও জোর করে ছাড়তে হবে।

এখানে হযরত থানভী রাহ. একটি কথা খুবই প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছেন, অল্প কথায় তাসাওউফের সারমর্ম হল, কোনো ইবাদত পালনে অলসতা লাগলে জোর করে তা আদায় করা। আর গুনাহ থেকে বাঁচতে অনীহা বোধ করলে নিজের ওপর জোর খাটিয়ে তা থেকে বাঁচা।[১২]

এই ভাবে মা ছেলের কথোপকথন চলছে হঠাৎ রবিউলের মেজ ভাই ইফতার নিয়ে দরজার কড়া নাড়ালো। রবিউল মাকে ইফতার আয়োজনে সহায়তা করেন তারপর সপরিবার একসাথে ইফতারে সামিল হয়।

~~ওবাইদুল ইসলাম সাগর
ফটো ক্রেডিটঃ Mahfujur Rahman Mehad
______________________________________
তথ্যসূত্রঃ
[০১] সূরা-জারিয়াত আয়াত নং-৫৪
[০২] সহীহ্ বোখারী- ১৯০৪,১৮৯৪,৫৯২৭,
মুসলিম- ১১৫১, তিরমিজি-৭৬৫,৭৬৬
[০৩] সূরা-বাকারা আয়াত-১৮৩
[০৪] As Sirat Mission Online
[০৫] সূরা-আনফাল আয়াত-২৯
[০৬] সূরা-তালাফ আয়াত-২-৩
[০৭] সূরা-তালাফ আয়াত-৪
[০৮] মিশকাতুল মাসাবিহ্-৪৮
[০৯] জামে'আত তিরমিজি - ১৯২৭
[১০] As Sirat mission online
[১১] সূরা- মায়িদা আয়াত-৩৫
[১২] আবু জুবায়ের, মার্স্টাস, ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনশাস্ত্র & সাহিত্য, জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলামের বর্ণনা থেকে।
পত্রিকা প্রথম আলো এবং পেজঃ আয়াতুল্লাহ নুসরাত হাসান

পঠিত : ৮৬৮ বার

মন্তব্য: ০