Alapon

আজ ইমাম হারানোর দিন



২০১৪ সালের এই দিন। একটা শিক্ষা শিবিরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলাম। হুঁশ ঠিক রাখা কঠিন, এমন ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাত খবর পেলাম অধ্যাপক সাহেব আর নেই। অস্থির হয়ে গেলাম।

এর আগেও একবার ওনার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়েছিল। তাই যাচাই করতে থাকলাম। অল্প কিছু পরে নিশ্চিত খবর পেলাম আমাদের ইমাম আর নেই। আমাদের অভিভাবক নেই। আমরা ইয়াতিম হয়ে গেছি।

স্তব্দ হয়ে গেছি। একদম স্তব্দ। হাহাকার ও শূন্যতা ঘিরে ধরেছে আমাকে। কোনো কাজ আর করতে পারছিলাম। হঠাত মনে হতে লাগলো আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। মানুষজন নানান কাজে ডাকছে, ফোন করছে কিন্তু আমি যেন জড় পদার্থে পরিণত হয়ে গেছি। কোনো কাজ করতে পারছিলাম না। কেবল দুই চোখ বার বার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল।

কিছু মানুষের জন্মই হয় হিরো হওয়ার জন্য। পাঞ্জেরী হওয়ার জন্য। তাদের দিকে তাকিয়ে মানুষ আগুনে ঝাঁপ দিতেও কার্পন্য করেনা। এদের পুরো জীবনটাই সাক্ষী হয়ে থাকে মানবজাতির জন্য। এরা শহীদ, সাক্ষ্যদাতা। জীবনের প্রতিটি কাজে ইসলামের সাক্ষ্য দেয়াই ওনাদের কাজ।

এমন একজন কিংবদন্তি মানুষ ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। ৭১ সালের বাম-রামদের যৌথপ্রজেক্ট বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হলে অনেকে মনে করেছে এদেশে ইসলামী আন্দোলন আর কোনোদিন দাঁড়াতে পারবে না। মনে বল নিয়ে বিদেশে থেকেও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছেন। ইসলামকে যখন এদেশ থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশকে দারুল হারবে পরিণত করেছে সন্ত্রাসীরা তখন ঠায় দাঁড়িয়ে এদেশের মানুষকে আবারো ইসলামের আলোর দিকে আহ্বান করেছেন।

সমাজতন্ত্রী ও নাস্তিক গোষ্ঠীর জয়রথকে অধ্যাপক সাহেব তার স্বভাবসুলভ স্থির প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে মিটিয়ে দিয়েছেন। তৌহিদবাদী মানুষদের ওপর চেপে বসা কমুনিস্টদের আদর্শিক পরাজয় হয়েছে আমাদের ইমামের কাছে।

দুপুরের পর গায়েবানা জানাজাতে যখন বক্তারা নানান কথা বলছিলেন তখন কোনো কথাই আমার মাথায় প্রবেশ করে নি। আমার মনে শুধু একটা অনুভূতিই জাগরুক ছিল। আহা! আমরা আমাদের প্রিয় ইমামকে হারিয়ে ফেলেছি, আমরা ইয়াতিম হয়ে গেছি। পৃথিবী আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেছে।

একের পর এক ষড়যন্ত্রের মুখে ইমাম ছিলেন অবিচল, নিঃসংকোচ, নিরুদ্বিগ্ন। মহান রবের প্রতি অবিচল আস্থায় যেকোন পরিস্থিতে শান্ত থাকার অনুপ্রেরণা তিনি। তিনি এমন এক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছেন যেখানে দুনিয়াবী কোন স্বার্থ পাওয়া যায়না। যে দেশে রাজনীতি একটি লাভজনক ব্যবসা সে দেশে তিনি মানুষকে পকেট থেকে টাকা বের করে সমাজের উপকার করার রাজনীতি শিখিয়েছেন। তিল তিল করে কঠিন সময়গুলো পার করে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।

অধ্যাপক গোলাম আযম একটি নাম, একটি ইতিহাস। তিনি বিশ্বনন্দিত ইসলামী চিন্তাবিদ। বাংলাদেশের মাটি, আলো, বাতাস এবং মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে আছে তার জীবন, তার সংগ্রাম। স্বেচ্ছায় দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন তার মতো ব্যক্তির পক্ষেই দেয়া সম্ভব হয়েছে।

৫ম বারের মতো জেলে যাওয়ার আগে গণমাধ্যমের সামনে তিনি যে বলিষ্ঠ সাক্ষাতকার দিয়ে গেছেন তা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার বাতিঘর হিসেবেই দেখছেন সকলে। তার চিন্তা চেতনা আর সাহসিকতা আর বলিষ্ঠতা এদেশের ছাত্র যুব সমাজ তথা ইসলাম প্রিয় মানুষের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে। তিনি ইসলামের সাক্ষ্যদাতা তথা শহীদ হিসেবে আজীবন আমাদের প্রেরণা দিয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ্‌।

পঠিত : ৪১৮ বার

মন্তব্য: ০