Alapon

ইসলামি খেলাফত পতনের একশ বছর এবং কিছু কথা...



আমরা এমন জাতি, যারা "ইসলামী খেলাফত" পতনের একশো বছর পার করতে যাচ্ছি।

তখন খেলাফতে উসমানিয়ার মসনদে সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ খান (১৮৭৬-১৯০৯)। মুসলিম বিশ্বের জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী সুলতান। প্রধান-উজির ও মন্ত্রীবর্গের সামনে উপবিষ্ট সুলতান। এমন সময় মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্য সংবাদ নিয়ে এলেন, ফ্রান্সের একটি থিয়েটারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে গোস্তাখী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ একটি নাটকের আয়োজন করেছে। যা আজ রাতে ফ্রান্সের একটি থিয়েটারে প্রদর্শিত হবে। এবং ঐ নাটকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রে এক ব্যক্তি অভিনয় করবে। নাউজুবিল্লাহ। তারা পত্রিকায় এই নাটকের বিজ্ঞাপনও ছেপেছে।

এ সংবাদ শোনা মাত্রই রাগে সুলতানের চেহারা রক্তিম হয়ে গেল। এবং তিনি উপস্থিত মন্ত্রীবর্গকে জোরে জোরে এই সংবাদ পড়ে শোনালেন। সুলতান দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, তারা যদি আজ আমার ব্যাপারে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতো, আমার কোন পেরেশানিই থাকতো না। কিন্তু, তারা আজ আমার প্রাণাধিক প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে বেয়াদবি করেছে। আমি তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবো। তাদের রাজত্ব ধুলিস্যাৎ করে ফেলবো। এর জন্য আমি নিজের জীবন বিসর্জন করতেও দ্বিধাবোধ করব না।

সুলতান ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে জরুরী তলব করে বললেন, আমি সিরিয়া, ইরাক, লেবানন,বলকান ও হিজাযের বাদশা। আমি খলিফাতুল মুসলিমীন সুলতান আব্দুল হামিদ। আমি শুনেছি, ফ্রান্স আমাদের রাসুলের শানে উদ্ধত্যপূর্ণ একটি নাটকের আয়োজন করেছে। জেনে রাখুন, আমরা মুসলমান। আমরা আমাদের রাসুলকে নিজের জীবনের চেয়েও অধিক মহব্বত করি। ফ্রান্স যদি এই আয়োজন বন্ধ না করে, আল্লাহর কসম ! আমরা ফ্রান্সের অস্তিত্ব বিলীন করে দেব। আমি জিহাদের ঘোষণা দেব। এই বলে সুলতান বিজ্ঞাপনযুক্ত পত্রিকা রাষ্ট্রদূতের দিকে নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেলেন।

ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত দ্রুতপদে বেরিয়ে তাৎক্ষণিক ফ্রান্সে সংবাদ পাঠালেন-"ওসমানীয় সৈন্যরা শুধুমাত্র সুলতানের আদেশের অপেক্ষায় আছে। তাদের যুদ্ধজাহাজগুলো বন্দরে হুকুমের অপেক্ষমান। পদাতিক বাহিনী ছাউনি থেকে তোপ- কামান নিয়ে সুলতানের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে"

এই সংবাদ শুনে গোটা পৃথিবী কেঁপে উঠলো। ফ্রান্স হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য হলো। গোটা পৃথিবী অবাক মনে অপেক্ষা করতে লাগল, কী হতে চলছে।

এমন সময় সুলতান তাঁর খাসকামরায় অপেক্ষা করছেন। প্রধান সহকারী এসে বলল, একটি সুসংবাদ আছে সুলতান ! ফ্রান্স শুধুমাত্র ঐ নাটকই বন্ধ করেনি বরং চিরদিনের জন্য ওই থিয়েটারও বন্ধ ঘোষণা করেছে।

সুলতান "আলহামদুলিল্লাহ" বললেন। এবং দু'চোখের অশ্রু ফেলে বললেন, আমার এই ক্ষমতা, রাজত্ব ও জনপ্রিয়তা একমাত্র এইজন্য যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন নগণ্য খাদেম"

এ'তো হলো তখনকার ঘটনা, যখন ইউরোপ আমেরিকাসহ গোটা বিশ্ব ইসলামী খেলাফতের কাছে নতজানু এবং ভয়ে তটস্থ থাকতো। ১৯২৩ সালে খিলাফত পতনের পর আমরা একশো বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছি। আজ সেই মুহূর্তে ফ্রান্স আবারো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করছে। শুধু ফ্রান্স নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এমনকি এই বঙ্গদেশেও বিভিন্নভাবে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কটুক্তি বা অসম্মান করা হচ্ছে।

অথচ,এখনো কি আমাদের বিশ্বমানের এমন কোন নেতা আছেন যিনি বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলবেন সুলতান আব্দুল হামিদ এর ন্যায় !

এমন কোন নেতা আছেন ? যিনি খেলাফত পুনরুদ্ধারের আওয়াজ তুলবেন !

অন্তত, মুসলিম দেশগুলোর শাসকরাও কি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কিংবা বয়কট এর আওয়াজ তুলবেন ! বিশ্ব দরবারে ! হয়তো নেই !

তবে, ফ্রান্স তার পরিণতি অতি শীঘ্রই ভোগ করবে। বিশ্ববাসী দেখতে পাবে। ইনশাআল্লাহ।

- আবু সুফিয়ান

পঠিত : ৬১৪ বার

মন্তব্য: ০