Alapon

শিক্ষাংগন ও বোনেদের মাঝে দাওয়াত

“ তার কথার চাইতে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎকাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান”!
(সূরা হামীম আস সাজদাহ, আয়াত-৩৩)

দাওয়াহ! সমগ্র বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে প্রতিনিধি বা খলীফা করে পাঠিয়েছেন। এ কথা আমরা মোটামুটি সবাই ই জানি। কিন্তু খলীফা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কী? এ প্রশ্নের মানানসই উত্তর হলো, নিজ জীবনে ইসলাম কায়েম করে মানুষ কে আল্লাহর পথের দিকে আহ্বান করা। আমরা কেউ ই হয়তো মহাজ্ঞানী নই। কিন্তু যেটুকু নির্ভেজাল জ্ঞান আমার আছে, তা আমার পরিবার, প্রতিবেশী, সহপাঠী, আত্মীয় স্বজন -এদের না ও থাকতে পারে। তারা হয়তো এ বিষয়ে গাফেল। তখন আমার দায়িত্ব হবে, এই মানুষগুলোকে আল্লাহর পথের সন্ধান দেয়া। অন্তত ইসলামের বেসিক বিষয়গুলোর জ্ঞান যেনো তাদের থাকে, সে বিষয়ে আমাদের সচেতনতা জরুরী।

আলহামদুলিল্লাহ! সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে অনলাইন দাওয়াহ'র পার্ট টুকু আল্লাহর রহমতে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে প্র‍্যাক্টিক্যাল লাইফে আমরা বলতে গেলে একদম ই পিছিয়ে আছি। অনেকাংশে ই ছেলেরা নানা ভাবে ভাইদের মাঝে এই দাওয়াহ’র কাজ করে যাচ্ছেন। আজকের যারা ছাত্রী, তারা ই একদিন এদেশের ভবিষ্যত শিশুদের মা হবে! তাই এই বোনেদের মাঝে ইসলামের বেসিক বিষয় গুলোর বীজ বুনে দেয়া জরুরী। কিন্তু হতাশাজনকভাবে আমাদের বোনেরা অনেকেই অনলাইনে সরব থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনে তারা নীরব আচরণ প্রদর্শন করেন। এক্ষেত্রে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। অনেকে সামনাসামনি কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। এরকম আরো অনেক কারণে ক্যাম্পাসে আমাদের বোনেরা দ্বীনের দাওয়াত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ বর্তমান সময়ের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাদেরকে দাওয়াত দেয়া থেকে বিরত থাকি। কিন্তু এই অবহেলার সুবাদে তারা নাস্তিকতা, ফেমিনিজম, লিবারেলিজম সহ যুগের নব্যসৃষ্ট নানান ফেতনার শিকার হয়ে যান।
কোন একজন ভাইয়ের পোস্টে পড়েছিলাম, যে আমাদের প্রতিটি ক্যাম্পাসে দাওয়াহ প্রতিনিধি রেখে সর্বাংগীন একটি দাওয়াহ অংগন তৈরি করা যেতে পারে। সেই উদ্যোগ কবে বাস্তবায়ন হবে আমরা জানিনা। কিন্তু চাইলে আমরা এই উদ্যোগের ব্যক্তিগত বাস্তবায়ন করতে পারবো যদি নিজস্ব ভাবে আমরা ক্যাম্পাস দাওয়াত চালু করি।

ক্যাম্পাসে দাওয়াত দিবো মনস্থির করলাম।
কিন্তু কীভাবে দেবো? আমি কি একা দেবো? এরকম নানা প্রশ্ন মনে আসতে পারে। ধরুন, আপনি আপনার ক্যাম্পাসে দাওয়াত দিবেন ভাবলেন। যখন আপনি এ কাজ শুরু করবেন, দেখবেন আগ্রহী অনেক দ্বীনী বোন আপনার সাথে পরিচিত হবে। এভাবে একটা সার্কেল করে ফেলতে পারেন। কিন্তু এ দাওয়াতের বেসিক উদ্দেশ্য কী হবে? বা আমরা আসলে কোন বিষয় গুলো নিয়ে মানুষের কাছে দাওয়াত দিবো সেটা নির্দিষ্ট করে ফেলা জরুরী।
আমাদের দাওয়াত হবে ইসলামের একদম মূল বিষয়গুলো। আমরা নিম্নোক্ত বিষয় গুলো নিয়ে কাজ করতে পারি।
১) নামাজ, রোজা, ইসলামের আহকাম-আরকান সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, যা প্রতিটি মুসলিমের থাকা জরুরি।
২) ইসলামের দৃষ্টিতে রিলেশনশিপ হারাম কেনো, এর থেকে কেন বেরিয়ে আসা জরুরি তা বুঝিয়ে বলা। কারণ আমাদের অনেক ইসলাম প্রিয় ভাই বোনেরাও হারাম রিলেশনশিপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না এবং এটাকে হালালাইজ করার প্রচেষ্টা চালান। যা একদম ই অনুচিত। এক ধরণের কুফর। যা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে আপনি হালাল বলতে চাইলে সেটা কুফরির পর্যায়ে পড়ে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
৩) পর্দার ব্যাপারে বোনেদের অনেক বেশি নসীহত করা। পর্দা লংঘন করার পরিণাম কত্ত ভয়ানক হতে পারে তা ভালোভাবে বুঝিয়ে বলা।

এখন কথা হচ্ছে, আমরা যে দাওয়াত দিবো- মানুষ আমাদের দাওয়াত কতোটুকু গ্রহণ করবে সেই ব্যাপারে আমাদের কিছু করণীয় আছে। দাওয়াত দেবার ক্ষেত্রে-
১) নম্র ভাষায়, বিনয়ের সাথে কথা বলতে হবে।
২) যাকে দাওয়াত দিচ্ছি, তার মনোভাব অনুযায়ী কথা বলা।
৩) কখনো ধৈর্যহারা হয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না।
৪) নিজের উত্তম চরিত্র, ব্যবহার দ্বারা মানুষের মাঝে নিজেকে গ্রহণযোগ্য রূপে গড়ে তুলতে হবে।
৫) বিতর্কিত বিষয় যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।

দাওয়াত দেবার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ, রোল মডেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াস সালাম। তিনি যেভাবে সবরের সাথে সবসময় মানুষ কে দাওয়াত দিতেন, তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। তিনি নবুয়্যত পূর্ব জীবনে সব ধরণের সদগুণাবলীর অধিকারী ছিলেন। সবাই তাকে বিশ্বাস করতো, সত্যবাদী বলে জানতো। ফলে তিনি ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পেশ করার পর অধিকাংশ মানুষ অনায়াসে তাকে বিশ্বাস করেছেন। তার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছেন। তার চরিত্রমাধুর্যে মুগ্ধ হয়েও অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আমাদের ও তাই নিজেদেরকে এভাবে গড়ে তুলতে হবে।

দাওয়াত দেবার ক্ষেত্রে সবসময় নিয়তের এখলাস বা বিশুদ্ধতা সম্বন্ধে খেয়াল রাখতে হবে। পরিশ্রম করে করা কাজ গুলো যেনো বিফলে না যায়! মনে রাখতে হবে, দাওয়াত প্রদানের মাধ্যমে আমরা সহপাঠীদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব যেমন পালন করছি, ঠিক তেমনি এ কাজ আমাদের জন্য সদকায়ে জারিয়াহ হিসেবে কাজ করবে। তাই এই সওয়াবের সুযোগ হেলায় আমরা যেনো না হারাই!

আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্বীনের দাওয়াত প্রদানের অংগন হয়ে উঠুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা!
ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা-বিল্লাহ! আমীন!!।


পঠিত : ৫০৫ বার

মন্তব্য: ০