Alapon

হযরত খুবাইব রা.: ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম...


তখনো মক্কা বিজয় হয়নি। একদিন আল্লাহর রাসূল কয়েকজন সাহাবিকে একটা জায়গায় পাঠালেন। সাহাবিদের দলনেতা ছিলেন আসেম ইবনে সাবেত রা.।

কিন্তু পথিমধ্যে তাদের উপর মুশরিকরা আক্রমণ করে। সাহাবিরা এমন অতর্কিত আক্রমন দেখে প্রথমেই বেশ ভড়কে গেলেও, পরোক্ষণেই কোষবদ্ধ তলোয়ার উন্মুক্ত করে মুশরিকদের রুখে দাড়ায়। মুশরিকদের সাথে মুখোমুখি লড়াই শুরু হয়ে গেল। কিন্তু মুশরিকরা সংখ্যায় ছিল অনেক বেশি। যার কারণে বেশ কয়েকজন সাহাবি লড়াইয়ের শুরুতেই শাহাদাত বরণ করলেন। এমতাবস্থায় অন্যান্য সাহাবারা চিন্তা করলেন, এভাবে লড়াই চালিয়ে গেলে নির্ঘাত ‍মৃত্যু! তখন সাহাবারা তাদের হত্যা না করার চুক্তিতে মুশরিকদের হাতে আত্মসমর্পন করেন।

কিন্তু মুশরিকরা তাদের বন্দি করে মক্কার বাজারে নিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। সেই বন্দি সাহাবিদের মধ্যে ছিলেন খুবাইব রা.। মক্কার কিছু মুশরিক বদর যুদ্ধের বদলা নিতে খুবাইব রা.-কে কিনে নেয় এবং প্রকাশ্যে হত্যার ঘোষণা দেয়।

এরপর খুবাইব রা. বন্দিশালায় শাহাদাতের প্রহর গুনতে থাকেন। তিনি ঘরের মালিকের কাছে একটি ক্ষুর চান, উদ্দেশ্য ক্ষৌরকর্ম করা। দাড়ি-মোচ ছাটাই করবেন। তিনি যখন দাড়ি-মোচ ছাটাই করছিলেন, এমন সময় ঘরের মালিকের ছোট্ট বাচ্চা খুবাইব রা.-এর কাছাকাছি চলে আসে। খুবাইব রা. বাচ্চাটিকে দেখে মুচকি হাসেন। তার হাসি দেখে বাচ্চাটা আশ্বস্ত হয় এবং তার কোলে গিয়ে বসে।

এরই মাঝে সেই বাচ্চার মা খেয়াল করলেন, তার বাচ্চাটি নেই। সে খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে দেখে, তার বাচ্চা খুবাইব রা.-এর কোলে বসে আছে। আর খুবাইব রা.-এর হাতে ক্ষুর! এই দৃশ্য দেখে সেই বাচ্চার মা ভয়ে আৎকে উঠে। তখন খুবাইব রা. সেই মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি কি ভেবেছো, প্রতিহিংসার বসে আমি তোমার বাচ্চাকে হত্যা করব? যদি এমনটা ভেবে থাকো তবে ভুল ভাবছো। কারণ, ইসলাম আমাকে এমনটা শেখায়নি। তার বাবা হয়তো প্রতিহিংসার কারণে আমাকে হত্যা করতে যাচ্ছে, কিন্তু সুযোগ পেয়ে আমি এই মাসুম বাচ্চার ক্ষতি করতে পারি না। আমি তাকে হত্যা করতে পারি না। একজনের অপরাধে অপরজনকে শাস্তি দেওয়া ইসলামে জায়েজ নেই। এটা ইসলাম আমাকে শেখায়নি। তোমার বাচ্চা আমার কাছে নিরাপদে আছে এবং থাকবে।’

এরপর খুবাইব রা. বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে প্রকাশ্যে তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। মৃত্যুর পূর্বে খুবাইব রা. দু রাকাত নামাজ পড়ার সুযোগ চাইলেন। মুশরিকরা তাকে নামাজ পড়ার অনুমতি দিল।

খুবাইব রা. নামাজ শেষ করে বললেন, ‘তোমরা যদি না ভাবতে, আমি মৃত্যুর ভয়ে নামাজ দির্ঘ করছি, তাহলে আরও কিছুটা সময় নিয়ে নামাজ পড়তাম। কিন্তু কোনো মুশরিক কখনো যেন বলতে না পারে, আল্লাহর রাসূলের কোনো সাহাবি মৃত্যুর ভয়ে নামাজ দির্ঘ করেছিল। সে কারণে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আমি নামাজ সংক্ষিপ্ত করেছি। আমার ভিতরে মৃত্যুভয় তো নেই, উপরন্তু শাহাদাতের জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’

এরপর পরই হযরত খুবাইব রা.-কে নির্মম নির্যাতন করে শহীদ করা হয়। কিন্তু এতো নির্যাতন স্বত্বেও তিনি ঈমান ত্যাগ করেননি। বরোঞ্জ শহীদ হয়ে মহান আল্লাহর মেহমান হওয়াকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। যার কারণে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ শহীদ হিসেবে আজ অবধি মুসলিমরা হযরত খুবাইব রা.-কে স্মরণ রেখেছে। আর কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিমরা গর্বভরে স্মরণ করবে। মহান আল্লাহ তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মানিত করুন।

পঠিত : ২৬৩৬ বার

মন্তব্য: ০