Alapon

সমস্যাটা ইসলামের নয়, মঁসিয়ে ম্যাকরনের নিজের...



ফরাসি প্রেসিডেন্ট মঁসিয়ে ম্যাকরন অতি সম্প্রতি (২রা অক্টোবর, ২০২০) এক ভাষণে বলেছেন; Islam is a religion that is in crisis all over the world today, we are not just seeing this in our country.

ভাবানূবাদ: ইসলাম এমন একটা ধর্ম যা কেবল আমাদের দেশেই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বব্যাপীই এক সমস্যার ভেতরে পড়েছে।
এতোদিন তাদের সমস্যাটা ছিল ‘মৌলবাদী ইসলাম’ নিয়ে। আর আজ তিনি বলছেন ‘ইসলাম’ নিয়ে। অর্থাৎ তার সমস্যাটা হলো ইসলাম নিয়ে।
এর পর সপ্তাহ না যেতেই রাসূল (সsmile এঁর ব্যঙ্গচিত্র অংকন, প্রদর্শন ও স্কুলের শ্রেণিকক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তা নিয়ে সবক দেবার কারণে ক্ষুব্ধ এক মুসলিম যুবক জনৈক স্কুল শিক্ষককে হত্যা করেছে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, হত্যকারী যুবকের হাতে কোন বন্দুক ছিল না, ছিল ছুরি। এরকম এক যুবককে খুব সহজ্ই জীবিত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা যেতো।

কিন্তু ফরাসি পুলিশ সেটা করেনি। করলে জানা যেতো ঐ যুবকের আসল উদ্দেশ্য। তাকে ঘটনাস্থলে বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে সত্য জানার সকল পথকে রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর পরে এ ঘটনাকে পুরো ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে, বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রায় দেড়শত কোটি অনুসারীদের বিরুদ্ধে দমন নীপিড়ন, অপমান ও অবমুল্যায়নের কাজে লাগানো হয়েছে।

শুধু তাই নয়, সবচেয়ে লজ্জা আর আক্ষেপের বিষয় হলো, ফরাসি সরকার রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ও উদ্যোগে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে চলেছে বাকস্বাধীনতা রক্ষার নামে।
ফরাসি সরকারের এ কাজটা যদি সঙ্গত হয়ে থাকে, তবে তাদের দেখানো পথেই আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া'সহ আফ্রিকা মহাদেশের প্রতিটি লোকের নৈতিক অধিকার রয়েছে তাদের নিজ নিজ দেশ ও জনপদে অবস্থিত প্রতিটি খৃষ্টান গির্জা বন্ধ করে দেবার, প্রত্যেক খৃষ্টান লোককে ঘাড় ধরে দেশ থেকে বিদায় করার। কারণ এই ফ্রান্স উপনিবেশিক শাসনে সেইসব জনপদে লক্ষ লক্ষ মানুষকে (এমনকি নিরস্ত্র নারী পুরুষ শিশু ও বৃদ্ধকেও) হত্যা করেছে বর্বরতার মাধ্যমে।

এক অখ্যাত বেসামরিক মুসলিম যুবকের কৃত অপরাধের কারণে যদি ফ্রান্স পুরো ইসলামকে দায়ী করতে পারে, তবে আলজেরিয়া তিউনিসিয়া মিশর'সহ পুরো আফ্রিকার কোটি কোটি জনগণের প্রতি ফ্রান্স সরকারের কৃত অপরাধের কারণে তাদেরও অধিকার রয়েছে বিশ্বব্যাপী পুরো খৃষ্টাদর্শী জনগণকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর। কিন্তু মুসলমানরা তো মুসলমানই। তারা এতোটা বর্বর ও অবিবেচক নয়।

আসলে মঁসিয়ে ম্যাকরন নিজে যে পাহড়সম সমস্যার আবর্তে ডুবে যাচ্ছেন, তা থেকে দেশের জনগণের দৃষ্টি সরাতেই ঘৃন্য রাজনৈতিক চালটা নিয়েছেন, তবে এতে করে তার কোন লাভ হবে না, তা হলফ করে বলতে পারি। ফ্রান্সে অর্থনৈতিক মন্দা জেঁকে বসেছে। জনগণের জীবনধারন কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারের বিপক্ষে জনমত চলে যাচ্ছে, জনসমর্থন কমছে। কিছুদিন আগে সেটা ২৯ শতাংশেরও নীচে চলে আসে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে তার ভরাডুবি যে নিশ্চিত, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজের ও দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের চিন্তায় মঁসিয়ে অস্থির হয়ে হিতাহীত জ্ঞানটুকুও হারিয়ে ফেললে এতো বড়ো ভূল তিনি করতেন না। বিশ্বের দেড়শত কোটিরও বেশি মুসলমানকে এক ধাক্কায় ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ বানাতেন না।

তার মনে রাখা উচিৎ আধুনিক মুসলিম মানস আর সেই ১৯১৭ এর প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর মুসলিম মানস এক নয়। এক শতাব্দির ব্যবধানে তারা আগের চেয়ে অনেক পরিপক্ক ও প্রাজ্ঞ। মুসলিম বিশ্বে ফ্রান্স বিরোধিতার যে ঢেও শুরু হয়েছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কুটনীতির ক্ষেত্রে তার জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে, তাকে অনেক্য বড় মূল গুনতে হবে তা নিশ্চিত। সে ঠিকই বুঝবে যে, সমস্যাটা ইসলামের নয়, সমস্যাটা হলো মঁসিয়ে ম্যাকরনের নিজের, তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রান্সের।

সমস্যার এ রুপটা মুসলমানদের বুঝতে হবে। ফ্রান্স হলো পূজিবাঁদি বিশ্বের অন্যতম প্রতিভূ। আর পূঁজিবাদের প্রাণশক্তি তার অর্থনীতি ও বস্তুবাদিতার মধ্যে বিদ্যমান। আমরা যদি মাত্র বছরখানেক সময় ফরাসি পণ্য, তার অর্থনৈতিক স্বার্থকে বয়কট করতে পারি, করোনার ছোবলে ইতোমধ্যে জর্জরিত ফ্রান্সের মুখ থেকে তথাকথিত বাকস্বাধীনতা আর ধর্মনিরপেক্ষতার ফাঁকাবুলি উবে যাবে অচিরেই। কাজেই এ কথা ভাববেন না যে, আপনার একার দ্বারা ফরাসি পণ্য বয়কটে আর কিইবা হবে? আসলে হবে অনেক কিছুই। আধুনিক বিশ্বসভ্যতায় অর্থনৈতিক ধাক্কার গুরুত্ব ও শক্তি ব্যাপক। সেখানে ঠিকমতো আঘাত করতে জানাটাও একটা যুদ্ধকৌশল বটে।

প্রিয় রাসুল সা: এর একজন গর্বিত উম্মত হিসেবে কৌশলটা আপনি ঘরে বসেই প্রয়োগ করতে পারেন।

- জিয়াউল হক

পঠিত : ৪৩০ বার

মন্তব্য: ০