Alapon

সুলতান আল্প আরসালানের মৃত্যু ও একটি শিক্ষা


৪৬৫ হিজরি। মানযিকার্টের যুদ্ধের পর আল্প আরসালান পশ্চিম এশিয়ার অধিকাংশ অধিকার করেন। এরপর তিনি তার পূর্বপুরুষদের অঞ্চল তুর্কিস্তান অধিকার করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এক শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি আমু দরিয়ার দিকে যাত্রা করেন। এ বছর সুলতান আল্প আরসালান ২ লাখ সৈন্য নিয়ে পুরো মধ্য এশিয়া জয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আমুদরিয়া নদীর তীরে পৌঁছে পুল নির্মাণ করলেন প্রায় এক মাস সময় নিয়ে।নদী পার হওয়ার পরে কিছু দুর্গ দখল করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তৎমধ্যে একটি বেশ কয়েকদিন ধরে ইউসুফ আল-হারেযমি প্রতিরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মসমর্পণে বাধ্য হন এবং দুর্গের অধিপতিকে বন্দী করে সুলতানের সামনে আনা হয়। সুলতান তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।

কিন্ত ইউসুফ আল-হারেযমি বলে উঠে- ওহে কাপুরষ, আমার মতো লোক কি এভাবেই মৃত্যুবরণ করবে? এতে সুলতান প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ছেড়ে দিতে আদেশ করলেন। নিজে ধনুক তুলে তীর ছুঁড়েন কিন্তু প্রথমবারের মতো তাঁর ছোঁড়া তীর লক্ষভ্রষ্ট হয়। অথচ সুলতান ছিলেন এমন অব্যর্থ লক্ষ্যভেদী যে তার তীর কখনো লক্ষভ্রষ্ট হতোনা। ইতিমধ্যে ইউসুফ হাতে করে খঞ্জর নিয়ে একেবারে কাছে এসে পৌঁছায় এবং সুলতানের কোমরে ছুরি বসিয়ে দেয়।

শাহাদাতের পূর্বে সুলতান বিছানায় শায়িত অবস্থায় বললেন,
‘আমি সারাজীবন আমার মনে গর্ব, অহংকার ও আত্নশ্লাঘাকে স্থান দেইনি। কিন্তু গতকাল যখন আমি পাহাড়ের উপর থেকে আমার বিশাল সেনাবাহিনীর উপর দৃষ্টিপাত করলাম তখন আমার মনে হলো, আজ পৃথিবী পৃষ্ঠে কোন শক্তিই আমার মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়।
এরপর ইউসুফকে যখন আমার সামনে আনা হলো তখন আমি আল্লাহর উপর ভরসা না করে আমার বাহুবলের উপর ভরসা করেছিলাম এবং তাকে তুচ্ছ ভেবেছিলাম। এর পরিণাম হলো, আল্লাহ এক নগন্য বন্দীর হাতে আমাকে মৃত্যুর দরজায় পৌঁছে দিলেন। আমি এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।’


[i] আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১২/১১৪) লি ইবনি কাসির (রাহিমাহুল্লাহ)


এর চার দিন পর ১০৭২ সালের ২৫ নভেম্ব আরসালান মৃত্যু বরণ করেন। মার্ভে তার পিতা চাঘরাই বেগের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। তার সমাধিতে লেখা রয়েছে: “যারা সুলতান আল্প আরসালান বেগ'র আকাশসম জাকজমক দেখেছ, দেখ, তিনি এখন কালো মাটির নিচে শায়িত...”

এ থেকে আমাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে শিক্ষা।

(সংকলিত)

পঠিত : ১৯৮৬ বার

মন্তব্য: ০