Alapon

খেটে খাওয়া মানুষ যেন নেড়ি কুকুরের প্রতিচ্ছবি!

রাত আনুমানিক দেড়টা বাজে হয়তো। হাতের ঘড়িটা কোথায় ফেলেছি বুঝতে পারছি না। সঙ্গে মোবাইলটাও নাই। তাই ঠিক কয়টা বাজে বুঝতে পারছি না। এই মধ্যরাতে কাটাবন মোড়ে দাঁড়িয়ে বৈদেশি কুত্তাগুলোর ঘেউ ঘেউ শুনতেছি।


যতোদূর জানি কাটাবন মোড়ের দোকানের কুত্তাগুলো সবই বৈদেশি। এই মধ্যরাতে কুত্তাগুলো নরম নরম ঘেউ ঘেউ করতেছে। নরম নরম বললাম কারণ কুত্তাগুলো যখন রাগ হয় তখন তাদের ঘেউ ঘেউ শুনলে মরা মানুষও ভয়ে চিক্কুর দিয়া উঠবে। কিন্তু এখনকার ঘেউ ঘেউ শুনে বেশ মজা লাগছে। এখন হয়তো তারা একে অপরের সাথে নরম নরম ঘেউ ঘেউ দ্বারা প্রেম নিবেদন করছে।



একবার এক বন্ধুর কোলে এইরূপ বৈদেশি কু্ত্তা দেখেছিলাম। আমি প্রায় সাথে সাথে চিল্লায় বলছিলাম, ‘কুত্তা! কু্ত্তা পালা শুরু করলি কবে থেকে?’
সে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলল, ‘প্লীজ দোস্ত! ওরে কু্ত্তা কইস না। ওর একটা নাম আছে। ওরে নাম ধরে ডাক।’ (নাম ভুলে গেছি)
তার এই হৃদয় নিংড়ানো আবেদনেও আমার মন গলেনি। বলেছিলাম, ‘কুত্তারে কুত্তা বলব না তো কি বাঘমামা বলব হরিণ ছানা বলব? বড়জোর তোর সম্মানে এই কুত্তারে কুকুর বলে ডাকতে পারি। কিন্তু এর বেশি কিছু নাহ।’


চা খেতে খেতে এক দেশীয় কু্ত্তা চলে আসল। বেচারা বেশকিছু সময় ধরে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বন্ধুকে বললাম, ‘ওহে কু্ত্তা প্রেমিক! দেশীয় এক কুকুর অভুক্ত নয়নে তোমার পানে চাহিয়া রয়েছে। তাহারে অন্ন দাও। পারলে একটা বস্ত্র দাও সে তার লজ্জা নিবারণ করুক।’
ওমা সে উঠে ‘দূর কুকুর! দূর! ছাই! তারপর সামান্য একটা ধাওয়া দিতেই আমাদের দেশীয় কুত্তা এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হল।’ এই দৃশ্য আমাকে বিরাট ব্যাথিত করল।


তাকে বললাম, ‘তুমি বৈদেশি কুত্তারে কোলে নিয়া পুরা শহর ঘুরতেছো! আর তোমার দেশী একটারে সামান্য খাবার দিতে পারলা না। এইটা কোন কথা! তোমাদের বিরুদ্ধে কেন যে নেড়ি কুত্তা মিছিল বের করতেছে না।’


এসব ভাবতে ভাবতে শহরের অন্যপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। এপ্রান্তে এসে দেখি ছোট ছোট অস্থায়ী ঘর। পলিধিনে মোড়ানো ঘর। একটি ঘরের সামনে সেই মধ্যরাতেও এক নারীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আজ হয়তো কোন খদ্দের মিলেনি। কাল হয়তো তার ভাতের হাড়িতে আগুন ধরবে না।


যে দেশে দৈনিক ৫০ হাজার নারী শুধুমাত্র পেটের দ্বায়ে দেহব্যবসা করে সে দেশের কাঁটাবন মোড়ে এসব কুকুরের দোকান বড়ই বেমানান। যে দেশের মানুষকে এখনো ডাস্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খেতে হয় সে দেশের মানুষের বৈদেশি কুত্তা পোষাকে সত্যিই বিলাসিতাই বলতে হয়। আর বিলাসিতা প্রিয় মানুষগুলোর কাছে এই নিচের মানুষগুলো শুধুই নেড়িকুত্তা।


নেড়িকুত্তা যেমন মূল্যহীন তেমনি পেটের দায়ে দেহব্যবসায়ীরা এবং ডাস্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খাওয়ারাও তাদের কাছে নেড়িকুত্তা। কিন্তু এই নেড়ি কু্ত্তাদের উপর ভর করেই তারা বৈদেশি কুত্তা কেনার টাকা উপার্জন করে। কিন্তু দিনশেষে তারাই হয়ে যায় মূল্যহীন!


পঠিত : ৭৯৫ বার

মন্তব্য: ০