Alapon

ফ্রান্স বনাম তুর্কী, ম্যাক্রন বনাম এরদোগান এবং ফ্রান্সের ইসলাম ফোবিয়ার অন্তরালে

আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিরোনাম এক জিনিস আর রাজনীতি আরেক জিনিস। ফ্রান্স আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে, এটা হচ্ছে চোখের সামনের খবর। চোখের আড়ালের খবর হচ্ছে, তুর্কীর সাথে পাঞ্জা লড়াইয়ে ক্রমেই হেরে যেতে থাকা ফ্রান্স ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে।

লিবিয়াসহ সমগ্র আফ্রিকায় ক্রমেই বাড়তে থাকা তুর্কী প্রভাব, আয়া সোফিয়াতে পাত্তা না পাওয়া, বৈরুত বিস্ফোরনের পর লেবাননের রাজনীতিতে কাঙ্ক্ষিত আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার কারনে ইস্টমেডে প্রবেশের সরাসরি অধিকার পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা, নাগারনো কারবাখে আর্মেনিয়ার পাতলুন খুলে যাওয়া এবং সর্বশেষ নর্দার্ন সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুস্তাফা আকিনজিকে হারিয়ে তুর্কীপন্থী এরশিন তাতারের বিজয় ফ্রান্সকে উন্মত্ত করে দিয়েছে। সর্বশেষ, ন্যাটোতে তুর্কীকে একঘরে করে ফেলার ফ্রেঞ্চ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর দেশের মাটিতে ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোনের মুখ রক্ষা করাই এখন দায়। ২০১৭ তে প্রায় অপ্রত্যাশিতভাবেই মেরিন লা পেনকে হারিয়ে ম্যাক্রোন প্রেসিডেন্ট হয়। ২০২২ সালে তাকে আবারও ফার রাইটদের মোকাবিলা করতে হবে এবং এই ফরেন পলিসি রেকর্ড নিয়ে সে তাতে জিততে পারবে কিনা, তা একটা সংশয় সৃষ্টি করেছে। এমনিতেও, দেশের মাটিতে গত বছর ঘটে যাওয়া জিলেট জোনস আন্দোলন এবং এবছরের করোনা ভাইরাস প্যান্ডেমিক প্রতিরোধে ব্যর্থতা ফ্রান্সকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
ফলে, এমনিতেই ইউরোপে ক্রমবর্ধমান ফার রাইটদের উত্থানের মওসুমে ম্যাক্রোনের দুর্বল অবস্থান সামনে দুর্বলতর হতে বাধ্য। মূলত একারনেই ম্যাক্রোন এখন জেনোফোবিয়া এবং ইসলামোফোবিয়ার মাধ্যমে ফার রাইট ভোট টানার ধান্দায় নেমেছে। ম্যাক্রোনকে মূলত ভোট দেয় ফ্রাসোয়া ওলাদের ভোটাররা, এবং সোশ্যালিস্ট পার্টির ভোটাররা। এর সাথে যদি ইমিগ্র‍্যান্ট ইস্যু-ইসলামোফোবিয়া ইস্যু এক করে ফার রাইটদের ভোট পাওয়া যায়, তাহলে একদিকে নিজের ভোট বাড়ে অন্যদিকে মেরিন লা পেনের ভোট কমে।

একই সাথে, বিগত দুই আড়াই বছর ধরে এরদোয়ানের চড় থাপ্পড় খেয়ে অভ্যস্ত চেহারাটায়ও একটুখানি কলোনি আমলের জৌলুস ফেরত আসে। ম্যাক্রোন নিজের কম্পমান রাজনৈতিক ভিতকে দৃঢ় করতেই মূলত এই উন্মত্ততা উসকে দিয়েছে। এ যেন সাদা চামড়ার নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে, সে মোদীরও অধম।

ফ্রান্সের এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের জবাব দেয়ার অসংখ্য পথ মুসলিমদের কাছে থাকলেও সত্যিকারভাবে এরদোয়ান ছাড়া আর কারো তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়ার মত বুকের পাটা, মেরুদণ্ড বা মগজ কোনটাই নেই।

তুর্কী ইতোমধ্যেই ওপরের কর্মকান্ডগুলির মাধ্যমে ফ্রান্সের অনেক ক্ষতি করেছে, এবং এগুলোর প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ফ্রান্স আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে অবমাননায় লিপ্ত হয়েছে।

এর প্রতিশোধ হিসেবে তুর্কীর উচিত হবে সমগ্র আফ্রিকায় নিজেদের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করা এবং একটা একটা করে আফ্রিকান দেশকে ফ্রান্সের বলয় থেকে বের করে নিয়ে আসা। ইতোমধ্যেই প্রায় দু ডজন আফ্রিকান দেশের শিক্ষাখাতে তুর্কী এনজিওগুলি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। এই ধারা আরো জোরদার করে কিভাবে আফ্রিকাতে ফ্রান্সের সর্বনাশ করা যায় সে বিষয়ে যদি তুর্কী অগ্রসর হয়, তবেই প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক রাজনীতির দাবাখেলায় ফ্রান্সকে সত্যিকারের আঘাত হানা সম্ভব।

ফ্রান্স এমন একটা দেশ যার বিশ্বমঞ্চে সত্যিকারের কোন উল্লেখযোগ্য প্রভাব নেই। মূলত, আফ্রিকাকে শোষন করেই ফ্রান্সের এই বাড়বাড়ন্ত।

আফ্রিকাতে ফ্রেঞ্চ স্বার্থের ওপর আঘাত হানার মাধ্যমেই ফ্রান্সের ওপর সত্যিকারের প্রতিশোধ নেয়া সম্ভব। পাশাপাশি, একযোগে মুসলিম রাষ্ট্রগুলি থেকে ফ্রেঞ্চ পন্য, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কার করার সমন্বিত উদ্যোগ কোন শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রের নেয়া উচিত। এই কাজটা পাকিস্তানের ইমরান খানের দিক থেকে আসলে ভাল হয়।

আজকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে ফ্রেঞ্চদের যে বেয়াদবি তা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ময়দানে প্রকাশ্যে চড়থাপ্পড় খেয়ে ঘরে এসে হম্বিতম্বির সাথে তুলনীয়। এসব করে শেষ রক্ষা হবে না।

আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাই, আল্লাহ যেন কোন ন্যায়বান মুসলিম শক্তির মাধ্যমে ফ্রান্সকে আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে চিরতরে উৎখাত করেন।


~Mohammad sajal

পঠিত : ২৭৭ বার

মন্তব্য: ০