Alapon

জর্জ বার্নার্ড শঃ সামান্য কেরানী থেকে বিশ্ববিখ্যাত লেখক.......

জর্জ বার্নার্ড শ’য়ের জীবন এক বিস্ময়কর ভঙ্গিমায় ঘুরে গিয়েছিলো একদিন। অফিসে কেরানীর চাকরী করে কত সহস্র মানুষই তো জীবন শেষ করেছে! কিন্তু কতজন জীবনের পাদপ্রদীপে জায়গা করে নিতে পেরেছে? এক সামান্য কেরানী একদিন হঠাৎ ভেবে বসলেন, “এভাবে কেরানী হিসেবে জীবন শেষ করার কোনো মানে নেই। কিছু একটা করতে হবে।” সেই “কিছু একটা” যে পরবর্তী সাহিত্যের ইতিহাসকেই বদলে ফেলার গল্প হবে; কে জানতো!


মাইকেল এইচ. হার্টের ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী’ বইয়ের এক জায়গায় বলা আছে, “বিশ্বের অন্যতম প্রতিভাবান নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ’ কে যখন নোবেল পুরস্কার দেয়ার কথা বলা হলো, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি তখন বললেন, “এখন আমাকে এই পুরস্কার দেয়া হলো- যে ডুবন্ত মানুষ তীরে এসে পৌঁছেছে তাকে লাইফ বেল্ট ছুঁড়ে দেওয়ার মতন। তখন তিনি আরো বললেন,”যারা এখনও সাহিত্যিক খ্যাতির তীরে এসে উঠতে পারেনি, সেই নবীন উদীয়মান সুইডিস সাহিত্যিকদের জন্য টাকাটা ব্যয় করা হোক।” কিছু কিছু সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা যায় তিনি পরে সম্মান গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু অর্থ নয়। সুইডিশ বইগুলোকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার জন্য ওই অর্থ ব্যয়ের অনুরোধ করেন তিনি।


মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে নব্য চিন্তাধারার সূচনা করার একজন অন্যতম দিকপাল, খ্যাতনামা নাট্যকার এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জর্জ বার্নার্ড শ' ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ সম্পর্কে যতদূর জানা যায়, তিনি ১৮৬৫ থেকে ১৮৭১ এর মাঝে চারটি স্কুলে পড়াশোনা করেন। এগুলোর মধ্যে মেথোডিস্ট চার্চ পরিচালিত ডাবলিনের একটি গ্রামার স্কুল এবং ডাবলিন ইংলিশ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডে স্কুল অন্যতম। তবে এগুলো তাঁর ভেতরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি বিরুপ মনোভাব তৈরি করে। । পরবর্তীতে তিনি তাঁর প্রায় লেখায় স্কুলকে কারাগার এবং স্কুল শিক্ষককে কারাপরিদর্শক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নিজে নিজে শিখেছেন জ্ঞান,ইতিহাস আর দর্শনের নানান দিকগুলো। হয়ে উঠেছেন একজন প্রকৃত স্বশিক্ষিত।


তিনি মূলত তাঁর সৃষ্ট নাটকগুলোর কারণে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি ছোট থেকে বড় হতে হতে তাঁর চারপাশের সমাজকে নিয়ে যা দেখেছেন ও ভেবেছেন সেগুলোই তাঁর লেখার অন্যতম উপজীব্য হয়ে উঠেছে। তাঁর সময়ে বিদ্যমান সামাজিক সমস্যা, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শোষণ, সামাজিক বিপর্যয়কে তিনি হাস্যরসের ছদ্মাবরণে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেন বিভিন্ন সময়ে তাঁর লিখিত ৬০টিরও অধিক নাটকে।


মনে করা হয় উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের পর নাট্যকার হিসেবে তিনি সবচেয়ে বেশি প্রতিভাবাণ এবং সৃজনশীল। তবে অনেকে তাকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। জর্জ বার্নার্ড শ’ এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি যুগপৎ সাহিত্যে নোবেল (১৯২৫) এবং অস্কার (১৯৩৮) পুরস্কার লাভ করেন।


বার্নার্ড শ’ প্রণীত প্রথম নাটক মঞ্চস্থ হয় ১৮৯০ সালে। ১৮৯৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স। এ ছাড়া তিনি বিখ্যাত সংবাদপত্র নিউ স্টেটম্যানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। জর্জ বার্নার্ড শ’ রাজনৈতিক সমালোচক হিসেবেও খ্যাতিমান ছিলেন। পাশাপাশি সঙ্গীত নিয়েও তাঁর কাজ রয়েছে বিস্তর। শ বলতেন, “আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি কোনো ‍সুযোগ পাচ্ছেন না, তবে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, সঠিক সুযোগটি আপনার কাছে আসার অপেক্ষায় আছে আর আপনি সময় নষ্ট করছেন না।”

পঠিত : ৫৬৬ বার

মন্তব্য: ০