Alapon

এ যেন সেই চিরচেনা হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ...



গতকাল হেফাজত ইসলাম আয়োজিত ‘ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে’ অংশ নিয়েছিলাম। আজ বহুদিন পর সেই পুরনো হেফাজত ইসলামে ফিরে পেলাম, যে হেফাজত ইসলামকে আমরা ২০১৩ সালে দেখেছিলাম।

মূলত, ২০১৩ সালে যে কারণে হেফাজত ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল, আজও একই কারণে হেফাজত ইসলাম মাঠে নেমেছে। ২০১৩ সালে একদল নাস্তিক শাহবাগে বসে আল্লাহ ও আল্লাহ রাসূলের নামে বিষোদগার ও অবমাননা করতো। সত্যি বলতে তখন দেশ দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একদিকে ছিল নাস্তিকের দল, অন্যদিকে ছিল আস্তিকের দল। তখন অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল যে, নাস্তিকদের হুকুমেই যেন দেশ চলতো!

শাহবাগিরা যেদিন ঘোষণা দিতো আজ সারাদেশে এক যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে, সারাদেশে তা-ই করা হয়েছে। শাহবাগিরা যখন ঘোষণা করল, আজ অমুক সময়ে সারাদেশে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে; সারাদেশে তা-ই করা হয়েছে। মোদ্দাকথা দেশ তখন শাহবাগ থেকেই পরিচালিত হতো, আর পরিচালনা করতো একদল নাস্তিক। এমন একটা পরিস্থিতিতে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে মুসলিমরাই যেন অসহায় হয়ে পড়ল! মুসলিমরাই যেন হীনমণ্যতার অতল সাগরে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

এমন একটা পরিস্থিতিতে নূহ আ.-এর তরীর ন্যায় হীনমণ্যতার এই অতল সাগরে তলিয়ে যাওয়া থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে হেফাজত ইসলাম। আল্লামা আহমদ শফী-রহ.-এর ডাকে এবং আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরীর নেতৃত্বে এই দেশে ইসলাম যেন নতুন করে জেগে উঠতে শুরু করল। একদিকে হেফাজত ইসলাম যতোই মাথা উঁচু করে দাড়াতে থাকে, শাহবাগ যেন ততোই মিইয়ে যেতে থাকে। এরপর এক পর্যায়ে শাহবাগ ও শাহবাগের নাস্তিকরা বাংলার জমিন থেকে প্রায় নাই হয়ে যায়!

একইভাবে সরকারও হেফাজত ইসলামকে দেশের প্রেক্ষাপট থেকে নাই করে দিতে চেয়েছিল। সে উদ্দেশ্যে ৫ মে হেফাজত ইসলামের উপর ক্রাকডাউন চালানো হয়। সরকার শুধু এখানেই ক্ষ্যান্ত থাকেনি; গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে তারা হেফাজত ইসলামের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে। আর সে কারণে তারা একের পর এক ষড়যন্ত্র আটকে থাকে। আর সেই ষড়যন্ত্রের প্রধান কুশীলব ছিল আল্লামা শাহ আহমদ শফির পুত্র আনাস মাদানী।

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে এবং গোয়েন্দা বাহিনীর সহযোগিতায় আনাস মাদানীই মূলত হেফাজতের প্রধান ভূমিকায় চলে আসে। এক পর্যায়ে আনাস মাদানীর কারনেই কওমি অঙ্গন শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা প্রদান করে এবং কওমি জননী উপাধি প্রদান করে। কিন্তু এতে গোটা কওমি অঙ্গন মোটেও সন্তুষ্ট ছিল না। কারণ, এই শেখ হাসিনার হাতেই লেগে আছে ৫ মে’র শহীদের রক্ত। কিন্তু আনাস মাদানী নিজের ও সরকারের স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে তাতে সংবর্ধনা প্রদান করে। আর এসব কাজ নির্বিগ্নে সম্পাদন করতে আনাস মাদানী আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ষড়যন্ত্র করে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করে।

কিন্তু আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যায়। আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং হেফাজত ইসলামকে সরকারের অশুভ ছায়াতল থেকে উদ্ধার করে, তা নেতৃত্বের ভার পুনরায় আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। বাবু নগরীর হাতে নেতৃত্ব আসার পরপরই গোটা জাতি সেই চিরচেনা হেফাজত ইসলামকে খুঁজে পেল। হেফাজত ইসলাম আমাদের প্রশান্তির জায়গা, ভালোবাসার জায়গা! কোনো চক্রান্ত এই দলকে ধ্বংস করতে পারবে না।

পঠিত : ৪০৯ বার

মন্তব্য: ০