Alapon

||ভালোবাসা :পৃথিবীর সেরা সম্পদ সেরা অস্ত্র||




ইন্টারমেডিয়েটে "সেই অস্ত্র" নামক একটা কবিতা আছে। আমরা সকলেই সেই কবিতা পড়েছি। কবি আহসান হাবিবের। সেখানে তিনি একটা বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। তা হলো ভালোবাসা।

তিনি বুঝাতে চেয়েছেন পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী একটা অস্ত্রের নাম হলো ভালোবাসা। যে অস্ত্র দিয়ে সারা পৃথিবীকে জয় করা যায়। বশে আনা যায়। আপন করা যায়।

পরম শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করা যায়। কিন্তু আমরা মানুষেরা স্বার্থপরতা-জড়তা, আত্মপূজায় বিভোর হয়ে, স্বার্থের মোহে পড়ে সে ভালোবাসা নামক অস্ত্রকে নিজেদের মধ্যে অর্জন করে নিচ্ছি না।

দুনিয়ার ক্ষয়িষ্ণু, বিনাশী, কয়দিন পরে অকেজো হয়ে যাওয়া সব অস্ত্রকে আমরা যতোটা মূল্য দিই, ততোটা ভালোবাসা নামক অস্ত্রটাকে দিই না।

.

আমরা অন্যকে বশে আনার জন্য, অন্যের ওপর কতৃর্ত্ব খাঁটানোর জন্য আমাদের সাথে ভয়ালসব অস্ত্র রাখি। সেসব অস্ত্র অর্জনের প্রতিযোগিতায় নির্মমভাবে লিপ্ত হই।

.

কিন্তু বিনেপয়সাতে বিনে পরিশ্রমে যে অস্ত্র অর্জন করা যায়, যে অস্ত্র দিয়ে ভূবন জয় করা যায় সেই অস্ত্রের মালিক হতে চাই না। তা অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই না।

.

ভালোবাসা নামক অস্ত্রটা এমনই এক দুর্দান্তরকমের শক্তিশালী অস্ত্র, যা দিয়ে মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায়ও ঢুকে পড়া যায়। অন্যের হৃদয়ের দখল নেয়া যায়।

এই যে ভালোবাসা, এই ভালোবাসা নামক অস্ত্রটা ছাড়া পৃথিবীতে মানুষের মন জয় করার মতোন কোনো অস্ত্র আজো আবিষ্কৃত হয় নি। ভবিষ্যতেও হবে না।

.

আরবের বর্বর মানুষদের হৃদয়ে তো আল্লাহর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালোবাসার সিলমোহর মেরে দিয়েছেন।

ভালোবাসা দিয়ে তাঁদের কঠিন হৃদয়ের মাঝে আসন গেঁড়ে বসে ছিলেন।

তার ভালোবাসা, সৌহার্দ্য, আন্তরিকতায় বিমুগ্ধ হয়ে কতো কতো মানুষজনই তো দ্বীনের পতাকাতলে সমবেত হয়েছেন তা তো আমাদের সকলেরই কমবেশি জানা আছে।

.

জিহাদের ময়দান ছাড়া তিনি কখনো কারো সাথে দয়াদ্র আচরণ বাদ দিয়ে কর্কশ-কঠিন আচরণ করেন নি। ভালোবাসাহীন আচরণ করেন নি। এবং কি যুদ্ধের ময়দানেও তিনি যে দয়ার আচরণ করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো সমরনায়ক তার নজির দেখাতে পারেনি!

ফলস্বরূপ অল্প সময়ের ব্যবধানে পুরোটা আরবজুড়ে তিনি আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করতে পেরেছেন। ধীরে ধীরে তা পৃথিবীর বিস্তৃর্ণ জমিনে বিস্তৃত হয়েছে। আমরাও পেয়েছি ইসলাম নামক একটা সুন্দর জীবন-বিধান এবং সুবিশাল নিয়ামত।

.

অথচ আমরা নানাবিধ অস্ত্রের মহড়ায় নিমজ্জিত হই ঠিকই, কিন্তু ভালোবাসা নামক অস্ত্র-অর্জনের কোনো প্রতিযোগিতা নেই। সেই অস্ত্রের মহড়াও নেই।

.
.

অথচ এই অস্ত্র দিয়েই সারা পৃথিবীর রূপ রঙ পাল্টে দেয়া সম্ভব। সারাটা পৃথিবীকে পরিবর্তন করে দেয়া সম্ভব!


কিন্তু আফসোস আর অনুতাপের বিষয় হচ্ছে যে, পৃথিবীর এসব যান্ত্রিক অস্ত্র আসোলে চূড়ান্তভাবে আমাদের যান্ত্রিক বানিয়ে দিচ্ছে। আমাদের কারো অনুভূতিকে বানিয়ে দিচ্ছে, কারো বা বিশ্বাসকে বানিয়ে দিচ্ছে। এর বাহিরে আজ আমরা যেতেও পারছিনা। সে কারণে এই যান্ত্রিক সভ্যতার যান্ত্রিক মানুষগুলো কোনোদিন মানুষকে বিশ্বাস করতে পারার আনন্দ অনুভব করতে পারেনা। মানুষকে ভালোবাসতে পারেনা। মানুষকে প্রাপ্য সম্মান দিতে পারেনা, এবং কস্মিনকালে পারবেও না! নির্মল-নিষ্কলুষ পবিত্র ভালোবাসাতেও তারা হাবিজাবি কতো কিছু আবিষ্কার করবে,করেও। তাঁদের কাছে মায়া-মমতা,ভ্রাতৃত্ব-ভালোবাসার কোন ধারণাই নেই। থাকলেও তার কোন মূল্য নেই।

আসোলে এসমস্ত লোক ওদের মত-- যারা ভালোবাসার নামে অবৈধ মেলামেশাকে আঁকড়ে ধরে। অশ্লীলতা,নোংরামি-ছ্যাবলামিতে মজে গা-ভাসিয়ে দেয়। ক্ষেত্র বিশেষ ওদের চেয়েও অধম। এই ধরণের লোকগুলো যদিও মোটামুটি পবিত্র থাকবার চেষ্টা করে, তথাপি পারেনা।ওদের মন-মনন নিদারুণ সংকীর্ণ। এই ক্ষুদ্রমানসিকতাই ওদের দিন শেষে অপবিত্র হবার কারণ। এই মানুষগুলো ভালোবাসার যথার্থ মূল্যায়ন দিতে পারেনা। ভালোবাসা মানেই তাঁদের কাছে যৌনতায় ভরপুর এক দুষ্ট আবেগ। যৌনতা ছাড়া এরা ভালোবাসার ঘোড়ার আণ্ডাটাও বুঝে না! সব ভালোবাসায়ই এরা যৌনতা খোঁজে। এরা কাউকে বলতেও পারেনা--''ভালোবাসি"--এই পবিত্র শব্দটি। পারবে কীভাবে! এদের মানুষিকতায় যে কী বিশ্রী আর উৎকট চিন্তাধারা বিরাজ করে এই পূত-পবিত্র শব্দটি নিয়ে!

অথচ
রাসূল(সঃ) বলেছেন,''ওই ব্যক্তির মাঝে কোন কল্যাণ নেই,যে কাউকে ভালোবাসেনা এবং যাকে কেউ ভালোবাসেনা"। [বায়হাক্বী: ৮১১৯] অন্যত্র বলেছেন,''কেউ যদি কাউকে ভালোবাসে(আল্লাহর সন্তোষের জন্য) তাহলে সে যেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তা জানিয়ে দেয়।'' (আবু দাউদ :৫১২৪)



আবু যার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর কাছে মানুষের প্রিয় আমলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে, আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালোবাসা....!(আবু দাউদ-৪৫৯৯)


মেকি সভ্যতার বেড়াজালে আটকে আটকেই যাদের জীবন অতিক্রম হয়, তারা কি আর সুস্থ ও সুন্দর ভূবনের যে পরিবেশ তা উপলব্ধি করতে পারে? রব্বের সন্তোষে যে ভালোবাসা, সে ভালোবাসার স্বাদ আস্বাদন করতে পারে? ওই যে চিড়িয়াখানার বাঁন্দর কি আর গাছে গাছে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ অনুভব করতে পারে? ওই লম্ফঝম্ফ শুধুই খাঁচাতেই সীমাবদ্ধ। বাস্তব জীবন-পরিবেশ হতে তারা যোজন যোজন দূরে।

সুতরাং এখনি সময়, সমাজকে এসব দূষিত জঞ্জাল হতে মুক্ত করার। সমাজ ও বিশ্বকে ভেঙে চুরমার করে শুদ্ধ একটি দুনিয়া উপহার দেয়ার জন্যে চাই মনের মুকুরে প্রবলতর ভালোবাসা। যে ভালোবাসা সৃষ্টির প্রতি, স্রষ্টার জন্য। যে ভালোবাসা ক্ষণিকের স্বার্থে বিলিন হবে না। যে ভালোবাসায় থাকবেনা কোনো হীনমন্যতা, কোনো জড়তা। শতো দোষ-ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখেও যে হৃদয়ে ঘৃণা আসবে না। দরদী আর সহমর্মিতার সাথে যা মানুষের সংশোধনের মাধ্যমে আরো বিকশিত করে তুলবে। কারণ আমরা যদি কাউকে ভালোবাসতে চাই, কল্যাণকামিতা আর মমতায় জড়িয়ে রাখতে চাই, তা হলে একটা গুণই যথেষ্ট। আবার যদি কাউকে ঘৃণা করতে চাই, তা হলেও একটা দোষই যথেষ্ট। কারণ দোষ নেই পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষই তো নেই! আপনি- আমি যদি মানুষের ত্রুটিগুলো খুঁজি- তা হলে পৃথিবীতে ভালোবাসার মতো একটা মানুষও তো খুঁজে পাওয়া যাবে না! কারণ, দোষ-ত্রুটি তো সকলেরই আছে। আমরা শুধু তা দরদের ভাষায়, ভালোবাসা দিয়ে সংশোধন করার চেষ্টা করবো। এটাই তো হওয়া উচিত, তাই না?


এখন মোটের ওপর সীদ্ধান্তটা নিতান্তই আপনার-আমার! পৃথিবীর এতোসব অস্ত্রের মাঝে কোন অস্ত্র অর্জনের প্রতিযোগিতায় মত্ত হবেন, কোন অস্ত্রকে আপনার নিত্যদিনের নিত্য সঙ্গী করবেন! ভালোবাসা, না বুলেট-বোমা, কামান-গুলি আর মিসাইলের বর্বরতা....

যদি ভালোবাসা নামক অস্ত্রটা অর্জন করতে চান, তা হলে আসুন সে লক্ষ্যে দোর্দণ্ডপ্রতাপে এগিয়ে যাই! নির্মল ভালোবাসায় পূর্ণ করি হৃদয় কানন। চর্চাকরি শুদ্ধতম ভালোবাসার। যে ভালোবাসায় থাকবে রবের সন্তোষ,অনাবিল আনন্দের স্নিগ্ধতা। ফুটবে মানুষের মুখে নির্মল দীপ্ত হাসি।


||ভালোবাসা :পৃথিবীর সেরা সম্পদ সেরা অস্ত্র||
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৬৫৬ বার

মন্তব্য: ০