Alapon

ফারুকে আযমের গল্প.......

এ এক বিরল সৌভাগ্যের ব্যাপার যে, উমর (রা.) এর মতামতের সঙ্গে আল্লাহর মত ৩ বার মিলে গিয়েছিলো। যে যুবক একদিন মদ্যপ ছিলো, ছিলো মক্কার সবচেয়ে দুর্ধর্ষ লোকদের একজন; আল্লাহ তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন এতোটাই যে, সময়ের ব্যবধানে তিনিই পরিণত হয়েছিলেন অর্ধ পৃথিবীর খলিফায়। শুধু তাই নয়, রাসূল (সা.) ঘোষণা করেছিলেন, “আমার পরে যদি কেউ নবী হতো, তবে উমর নবী হয়ে যেতো।”


উমর (রা.) একবার রাসূল (সা.) কে বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! মাকামে ইবরাহিমকে ইবাদাতের জায়গা বানাচ্ছেন না কেন?” তাঁর এ বক্তব্যের সমর্থনে আল্লাহ কোরআনের আয়াত নাযিল করে দিয়েছিলেন। আরেকবার উমর (রা.) রাসূল (সা.) কে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে ভালো-মন্দ সব ধরণের লোক দেখা করতে আসে। আপনি উম্মুল মুমিনীনদের হিজাবে আবৃত থাকতে বলেন না কেন?” উমর (রা.) এর এই কথার পরপরই কোরআনের আয়াত নাযিল হয়।


একবার রাসূল (সা.) তাঁর স্ত্রীদেরকে তিরস্কার করেছিলেন কোনো কারণে। এমন কথা জানার পর উমর (রা.) রাসূল (সা.) এর স্ত্রীদের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনারা এগুলো বন্ধ না করলে কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলকে আপনাদের চেয়েও উত্তম স্ত্রী দান করবেন।” তাঁর কাছে এমন কথা শুনে রাসূল (সা.) এর একজন স্ত্রী তাঁকে বললেন, “হে উমর! আপনি কি মনে করেন না রাসূল (সা.) স্বয়ং তাঁর স্ত্রীদের বোঝাতে সক্ষম? আপনি কেন এর মাঝে কথা বলতে এলেন?”


এ ঘটনাটির পরই আল্লাহ সূরা আত-তাহরীমের ৫ নাম্বার আয়াতটি নাযিল করেন। এই চমৎকার আয়াতটিতে উত্তম স্ত্রীর বৈশিষ্ট্যও উঠে এসেছে, “যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে সম্ভবত তাঁর পালনকর্তা তাঁকে তোমাদের চেয়ে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। যাঁরা হবেন আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, নামাযী, তাওবাকারিণী, ইবাদাতকারিণী, রোজাদার, অকুমারী ও কুমারী।”


মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাই মৃত্যুবরণ করলে তাঁর জানাযা পড়ানোর জন্য রাসূল (সা.) কে বলা হলো। তিনি সেখানে গেলেন এবং তার জানাযা পড়ানোর জন্য দাঁড়ালেন। সে সময় উমর (রা.) রাসূল (সা.) এর সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “আপনি কি আল্লাহর শত্রু এই আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের জানাযা পড়বেন? সে তো অমুক অমুক দিনে এই এই বলেছিলো।”


বলতে বলতে উমর (রা.) একটু বেশি বলে ফেললেন। এর আগে অব্দি রাসূল (সা.) এর মুখে মৃদু হাসি লেগে ছিলো। এবার রাসূল (সা.) বললেন, “উমর! তুমি আমার কাছ থেকে সরে যাও। আমাকে পছন্দ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমি আমারটা পছন্দ করেছি। আমাকে বলা হয়েছে, “তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো আর না করো। তুমি যদি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা করো, তবুও আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না।” [সূরা তাওবা-৮০]


এ আয়াত বলার পর রাসূল (সা.) বললেন, “আমি যদি জানতাম, সত্তর বারের অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে ক্ষমা করা হবে, তাহলে অবশ্যই সত্তর বারের অধিক ক্ষমা চাইতাম।” এরপরই উমর (রা.) এর বক্তব্যের সমর্থনে কোরআনের আয়াত নাযিল হয়, “আর তাদের মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার উপর কখনও নামায পড়বেন না এবং তাঁর কবরে দাঁড়াবেন না। তাঁরা তো আল্লাহর প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে এবং রাসূলের প্রতিও। বস্তুত তারা নাফরমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।” [সূরা তাওবা-৮৪]


রাসূল (সা.)-ও উমর (রা.) এর কিছু কিছু কথার অকুণ্ঠ সমর্থন করেছেন। একবার একটি বাগান থেকে রাসূল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.) কে এই নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে, “বাইরে যার সঙ্গে তোমার দেখা হবে, সে যদি সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং এ কথা সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করে, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবে।” আবু হুরায়রা বাইরে এলেন এবং হযরত উমর (রা.) এর সঙ্গে দেখা হলো। তিনি তাঁকে এ সংবাদ দিলেন।


এ কথা শুনে উমর (রা.) আবু হুরায়রার বুকে চাপড় দিলেন এবং তিনি উল্টে পড়ে গেলেন। আবু হুরায়রা কাঁদতে কাঁদতে রাসূল (সা.) এর কাছে গেলেন। পিছন পিছন উমর (রা.) ও গেলেন। আবু হুরায়রার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন রাসূল (সা.)। আবু হুরায়রা কারণ খুলে বললেন। তখন উমর (রা.) রাসূল (সা.) কে বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ কাজ আপনি করবেন না। আমি ভয় পাচ্ছি যে, লোকজন শুধু এর উপরই ভরসা করবে। তার চাইতে বরং তাদের কঠোর সাধনা করতে দিন।” রাসূল (সা.) সম্মতি দিলেন।

পঠিত : ৩৬৫ বার

মন্তব্য: ০