Alapon

জো বাইডেনের বিজয় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে...


জো বাইডেনের বিজয় আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয় ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে বিরাট পরিবর্তন আনয়ন করতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্য ও সৌদি রাজপরিবারের আজকের এই পরিবর্তনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ অবদান ও ভূমিকা যে ছিল, তা নির্দিধায় বলে দেওয়া যায়।

প্রথম পরিবর্তনটা আসতে পারে সৌদি রাজপরিবারে! আমরা মোটামুটি সবাই জানি, সৌদি রাজপরিবারের এখন অষোষিত রাজা হলেন মুহাম্মদ বিন সালমান; যিনি কিনা গদিসীন রাজা সালমানের পুত্র। রাজা সালমান এবং মুহাম্মদ বিন সালমান ট্রাম্পের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে পরবর্তি রাজা হিসেবে মুহাম্মদ বিন সালমানকে নিশ্চিত করেছে। আর এই কাজটি করতে গিয়ে মুহাম্মদ বিন সালমানকে বেশ কয়েকজন রাজপুত্রকে গ্রেফতার করতে হয়েছে, কাউকে নির্বাসন দিতে হয়েছে, এমনকি কতককে গৃহবন্দি করা হয়েছে। এমতাবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয় সৌদি রাজপরিবারের পরবর্তি রাজা কে হবে, সেই হিসাব উল্টে যেতে পারে! সেখানে ‍কুয়্যের উপর ক্যু হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

মুহাম্মদ বিন সালমানের উপর জামাল খাশোগির মামলা পুনরায় বিপদ হিসেবে আপতিত হতে পারে। তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোকি হত্যাকান্ডের পর সেই হত্যাকান্ডের সাথে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের নাম জড়িয়ে যায়। সেই অপরাধে ইতোমধ্যে যুবরাজের এক ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তারক্ষিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপর ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার মেয়ে জামাইয়ের সহযোগিতায় এ যাত্রায় জামাল খাশোগি হত্যার দ্বায় থেকে প্রায় মুক্তি পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু জো বাইডেনের বিজয় তা আর হতে দিবে বলে মনে হয় না। কারণ, নির্বাচন পূর্ববর্তি সময়ে জো বাইডেনকে জামাল খাশোগি হত্যাকান্ড নিয়ে জোর প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। এমনকি জামাল খাশোগি হত্যার জন্য জো বাইডেন মুহাম্মদ বিন সালমানের বিচারও দাবি করেন। তাই জো বাইডেনের পরাজয় মুহাম্মদ বিন সালমারে কপালে নতুন চিন্তার রেখা তৈরি করবে, তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়।

বেশ কিছুদিন আগ থেকেই মধ্যপ্রাচ্য ‍তুরস্কের বিরুদ্ধে এক জোট হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা ‍তুরস্কের পন্যও বয়কট করেছে। কিন্তু ভূ-রাজনীতিতে একটা কথা আছে, শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু। এই কথাই হয়তো তুরস্ক আর সৌদি আরবকে পুনরায় একজোটে নিয়ে আসতে পারে। কারণ, জো বাইডেন তুরস্কের জন্যও মাথাব্যাথার কারণ। নির্বাচিত হওয়ার আগেই জো বাইডেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তাই জো বাইডেনের বিজয় যে এই অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করবে তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়। ফলে এই চিন্তায় ভুগছে সৌদি আরব ও তুরস্ক। দুজনের চিন্তা যখন অভিন্ন তখন দুজন দুজনার ঘাড়ে হাত রাখতে কতটা সময় নেয়, সেটাই দেখার বিষয়! তবে এক্ষেত্রে সৌদি আরবকেই অগ্রগামী দেখা যাচ্ছে!

গেল সপ্তাহে তুরস্কে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেই ভূমিকম্পে প্রায় অর্ধশত মানুষ মারা যায়। এই ঘটনার পর গ্রীস পর্যন্ত তুরস্কের প্রতি সহমর্মিতা জানায়, কিন্তু সৌদি আরব নীরব থাকে! কিন্তু জো বাইডেনের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর আচমকা সৌদি সরকার তুরস্কের ঘটনার জন্য শোক বার্তা প্রকাশ করে এবং সৌদি বাদশাহ তুরস্কে সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেন। হয়তো সৌদি আরব নিজেদের বিপদ আঁচ করতে পেরে তুরস্কের প্রতি বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটাই দেখার বিষয়! কিন্তু এ কথা নিশ্চিত জো বাইডেনের বিজয় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আনয়ন করবে। সেই পরিবর্তন হয়তো মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত করতে পারে; আবার ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। সময়ই বলে দিবে মুসলিম উম্মাহর ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে!

পঠিত : ৩৫৪ বার

মন্তব্য: ০