Alapon

দেশটাকে নেতাকর্মী সবাই মিলেই লুটেপুটে খেতে হবে তো!



মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘একাই খাবো’ মানসিকতা পরিহার করতে হবে। তার মানে দেশের জনগণের টাকা চুরি করে একাই না খেয়ে দলের অবশিষ্ঠ নেতা-কর্মীদের নিয়ে খেলে, তাতে কোনো দোষ নেই এবং তা অপরাধ বলে গণ্যও হবে না।

অবশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই কথার বাস্তব প্রয়োগ আমরা নিকট অতীতে দেখেছি। আপনাদের নিশ্চয়ই যুবলীগ সভাপতি সম্রাটের কথা মনে আছে। অবশ্য তিনি আর যুবলীগ সভাপতি নেই। তিনি এখন সাবেকদের দলে চলে গেছেন। খুব সম্ভবত তিনি ‘একাই খাবো’ মানসিকতা পরিহার করতে পারেননি বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেছেন এবং কারাগারে বন্দি করেছেন। আমরা দেখেছি, সম্রাট তার এলাকায় চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করেছিল। এমনকি সম্রাট দাতব্য সংস্থা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছেও কয়েক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। চাঁদার টাকা দিতে না পারায় আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের নবনির্মিত ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল সম্রাট। আর সম্রাট চাঁদাবাজির যে টাকা পেত তার প্রায় সবটাই সিংগাপুরে পাচার করতো। তার কর্মীরা ভুখানাঙ্গার মত চেয়ে থাকতো। আর সম্রাট সেই টাকা দিয়ে সিংগাপুরে বিদেশি বউ পালত, ক্যাসিনো চালানো আর জুয়া খেলত। কর্মীদের এই ভুখানাঙ্গা অবস্থা নেত্রীর সহ্য হয়নি। তাই নেত্রী সম্রাটকে ক্যাসিনো কান্ডে গ্রেফতার করালেন! ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে যে ক্যাসিনো খেলা চলে, তা আমার মত আম পাবলিকের জানা থাকলে প্রধানমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জানা ছিল না, তা তো হতে পারে না! কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সম্রাটকে সবাইকে দিয়ে খাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্রাট সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। যা ইনকাম সব একাই সাবাড় করে দিচ্ছিল, তাই নেত্রী তাকে বহিষ্কার করে কারাগারে প্রেরণ করেছে। একই বিষয় জিকে শামীমের ক্ষেত্রেও!

জয় বাংলা! আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা কতই না মহান!

অতি সম্প্রতি এমন আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। দেশবাসী নেত্রীর ভালো কাজগুলো মনে রাখে না। বড়ই অকৃতজ্ঞ জাতি। তাই কষ্ট করে মনে করিয়ে দিচ্ছি।

কিছুদিন আগে মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী পাপিয়াকে যে গ্রেফতার করা হল, সেই কথা নিশ্চয়ই আপনারা ভুলে যাননি। পাপিয়াও অনুরূপ কাজ করছিল। পতিতাবৃত্তি করে, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, মাদক পাচার ব্যবসা একই সাথে নারী পাচারের ব্যবসা করে পাপিয়া এবং তার স্বামী ব্যাপক ইনকাম করছিল। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপিয়াকে নেত্রীর নির্দেশনা স্মরণ করে দিয়েছিল। একা একা খেয়ো না, আমাদের সাথে নিয়ে খাও- নেত্রী এটাই চায়! কিন্তু পাপিয়া নেত্রীর চাওয়াকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের সাম্রাজ্য গোছাতে থাকে। আর স্থানীয় ভুখানাঙ্গা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজেদের অভাব অভিযোগের কথা ব্যক্ত করে পাপিয়ার নামে অভিযোগ করতে থাকে। ফলাফল যা হবার তা-ই হয়েছে! সেই পাপিয়া এখন কারাগারে বন্দি।

ওসি প্রদীপের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। টেকনাফের ত্রাস ওসি প্রদীপ। ইয়াবা নির্মূলের নামে টেকনাফে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল এই ওসি প্রদীপ। ওসি প্রদীপ অনেক বছর থেকেই অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। কিন্তু সরকার কখনোই সেগুলো আমলে নেয়নি। তার বিপরীতে সরকার বলেছিল, যেসব অপরাধ করে টাকা কামাচ্ছো সেগুলো একা একা খেও না। আমাদের দলীয় কোটায় যারা পুলিশ হয়েছে, তাদেরকেও কিছু দিও। স্থানীয় আওয়ামী লীগকেও বাৎসরিক কিছু মাসোহারা দিও। কিন্তু সে মাসোহারা তে দেয়ইনি উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের থেকেও চাঁদাবাজি করেছে, কতককে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিশাল অংকের টাকাও নিয়েছে। এসবই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছেছিল।

মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যাটা ছিল একটা ওছিলা। সে তো অবসরপ্রাপ্ত মেজর এরকম
রানিং মেজর, লেফটেন্যান্টকে দিনে দুপুরে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে মেরে ফেলল, তারপরও হত্যাকারীদের কেউ কিছু করতে পারল না! আর কোথাকার কোন মেজর সিনহার জন্য ওসি প্রদীপকে গ্রেফতার করবে! আসলে ওসি প্রদীপ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করেছিল। সে সব শুধু একা একা খেতে চায়। তাই নেত্রী তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

এবার নেত্রী ধরেছেন হাজী সেলিমকে। হাজী সেলিম দির্ঘদিন ধরে একা একাই সব খেয়ে যাচ্ছেন। একা একা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল করে খেয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের জমি দখল করে খেয়ে যাচ্ছেন। খাসজমি দখল করে খেয়ে যাচ্ছেন। সে খাক তাতে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু হাজী সেলিম নাকি সব একা দরজা বন্ধ করে খায়! তাই এবার প্রধানমন্ত্রী নাকি হাজী সেলিমকে একটু লাড়াচাড়া দিতে চান!

এতোদিন নেত্রী অনেক রাখঢাক করে বলেছেন! কিন্তু নেতারা সব অধর্ব। ইশারা বুঝতে পারে না। তাই এবার মুখ ফুটে বলেই ফেললেন। তারপরও কেউ যদি একা একা খেতে চায় তাহলে তার জায়গা যে শ্রী ঘরে হবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়!

পঠিত : ৪৯৫ বার

মন্তব্য: ০