Alapon

জুম্মান সিদ্দিকীকে বিচারপতি হিসেবে আগাম অভিনন্দন



জুম্মান সিদ্দিকী। ব্যারিস্টার হয়ে এসেছেন দেশে। প্রচুর পড়াশোনা করেন তিনি। বার কাউন্সিলের এডভোকেটশিপ পরীক্ষায় বার বার এটেইন করেছেন, কিন্তু প্রতিবারই ফেল করেছেন। এটা কি জুম্মান সিদ্দিকীর দোষ? মোটেই না! তিনি তো বিদেশে পড়াশোনা করেছেন! এদেশের সেকেলে পদ্ধতি তার সাথে খাপ খায় না।

তিনি ব্যারিস্টার হয়ে এসেছেন। যদি আইন পেশায় না থাকতে পারেন সেটা তো মানায় না। তিনি এদেশে আইনজীবী হবেন তারপর একদিন বিচারপতি হবেন এই আশায় তো তিনি দিন পার করছেন। তাই কী আর করা! বার কাউন্সিল নিজেদের সেকেলে ব্যবস্থাপনায় এমন একজন যোগ্য মানুষকে আদালত থেকে দূরে রাখতে পারে না। তদুপুরি জুম্মানের বাবা একজন ক্ষমতাসীন মানুষ।

ব্যাস! বার কাউন্সিল এক নজিরবিহীন কাজ করে বসলো। জুম্মানকে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই বার কাউন্সিল সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে। জুম্মানকে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সালে। আর ৩১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে গেজেট প্রকাশ হয়।

এবার তার বাবার প্রসঙ্গে আসি। তিনি বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি। তার নাম আবু জাফর সিদ্দিকী। তিনি বিচারপতি হওয়ার আগে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আওয়ামী পন্থী আইনজীবী। বিডিআর বিদ্রোহের রায় নিজেদের ইচ্ছেমতো আনার জন্য কিছু বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবু জাফর সিদ্দিকী ও গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর অন্যতম। হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে তাদের অস্থায়ী নিয়োগ হয় ১৮ এপ্রিল ২০১০ সালে। দুজনই স্থায়ী বিচারপতি হন ১৮ এপ্রিল ২০১২ সালে। গোবিন্দের নাম কেন নিলাম তা একটু পর বুঝতে পারবেন।

জুম্মানের ঘটনা আইনজীবী মহলে বেশ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এর মধ্যে দুইজন আইনজীবী গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। ২৬ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে বিচাপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রিট শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন। রিটটির শুনানি করতে গেলে আদালত বলেন, ‘এই রিট মামলা শুনতে আমরা অপারগতা প্রকাশ করছি।’

পরে ওই রিট চলে যায় বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে। আদালত ১৮ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীকে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে জারি করা গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত করেন। পাশাপাশি এই গেজেট প্রকাশ কেন অবৈধ হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

সেই রুল বহুদিন পর গতকাল ৮ নভেম্বর ২০২০ তারিখে খারিজ করে দেন হাইকোর্টের আরেকটি দ্বৈত বেঞ্চ। এর মাধ্যমে জুম্মনে সনদ বৈধ ঘোষণা করা হয় এবং একইসাথে দুই রিটকারীকে আদালত অবমাননার দায়ে জরিমানা করা হয়। এই রুল খারিজ করেন বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এই বিষয়ে গোবিন্দ বলেন, এটি জনস্বার্থের রিট নয়, প্রচারণা পাবার রিট। রিটকারী দুজন আইনজীবী হলেন, ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসান। এটা বাংলাদেশের বিচারালয়। এমনি দেশ আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না।

হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যরিস্টার মোহাম্মদ জুম্মান সিদ্দিকীকে বিচারপতি হিসেবে আগাম অভিনন্দন। নিশ্চয়ই তিনি দিন কয়েক পরে তার বাবার মতো হাসিনার পছন্দসই রায় দেবার জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাবেন। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য বড় অর্জন।

পঠিত : ৫৯৫ বার

মন্তব্য: ০