Alapon

জো বাইডেনের বিজয়ে নরেন্দ্র মোদির কপালে চিন্তার ভাজ কেন...?


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালীন সময়ে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় কামনা করে পূজা করতে দেখা গেছে। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পরে ভারতে যে পরিমান আনন্দ ও উচ্ছাস দেখা গেছে, তার সিকি ভাগও জো বাইডেনের বিজয়ে দেখা যায়নি। বরোঞ্জ মনে হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়ে ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণ প্রচন্ড থাক্কা খেয়েছে। আর সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারার কারণে মোদি সরকার এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেনি। তবে কি জো বাইডেন ভারতের জন্য আর্শীবাদ না হয়ে চিন্তার কারণে পরিণত হতে যাচ্ছেন?

জো বাইডেনের বিজয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য চিন্তার কারণই বটে। কারণ, গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার মূল কারিগর হিসেবে জো বাইডেন সবসময় মোদিকেই দোষারোপ করেছেন। বিগত সময়ে দেখা গেছে, জো বাইডেন সিনেটে মোদির বিষয়ে একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছেন এবং মোদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাঙ্কা চেয়েছিলেন। আমরা সবাই জানি, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত মোদির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সে তো আর ব্যক্তি থাকে না, হয়ে যান একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী! তাই ব্যক্তি মোদিকে নয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সেই স্মৃতি মোদি নিশ্চয়ই ভুলে যাননি।

মোদির কোলাকুলি সর্বস্ব কূটনৈতিক সম্পর্ক ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে না পারলেও বৈরি সম্পর্ক ছিল না। যার জের ধরে ভারতের বিতর্কিত নাগরিক আইন (সিএএ) ও কাশ্মিরের বিশেষ ক্ষমতা বাতিল করা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। এমনকি বিতর্কিত নাগরিক আইন নিয়ে মুম্বাইয়ে যে দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছে, তা নিয়েও হোয়াইট হাউজ তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, এগুলো ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি আশা করব, ভারত তার দেশের ভিতরে সৌহার্দ বজায় রাখবে এবং শান্তি বিরাজ করবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এতোটুকু বক্তব্যের মাঝেই নিজের দায়িত্ব সেরেছেন। বিতর্কিত নাগরিক আইন ও কাশ্মিরের বিশেষ ক্ষমতা বাতিল করন নিয়ে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করেননি। অন্যদিকে জো বাইডেন এসব নিয়ে সবসময় সরব ছিলেন। তাই বলা যায়, জো বাইডেন বিতর্কিত নাগরিক আইন নিয়ে চুপচাপ থাকবেন না, এবং মুসলিমদের উপর চলমান নির্যাতন নিয়েও মুখে কুলুপ আটবেন না। আর এটাই হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের চিন্তার কারণ!

অন্যদিকে ক্ষমতার শেষ বেলায় এসে পাকিস্তানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কে ছেদ পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দেয়। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মুহাম্মদ বিন সালমান ও মুহাম্মদ বিন যায়েদ প্রভাবিত করেছে বলে কূটনৈতিক পাড়ায় খবর চাউর হয়েছে। কারণ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে সম্পর্ক গড়েছেন। মুহাম্মদ বিন সালমান ও মুহাম্মদ বিন যায়েদের প্রধানতম শত্রুদের মধ্যে অন্যতম এরদোয়ান। কূটনীতির সূত্র হল, শত্রুর বন্ধু আমার শত্রু। এই সূত্রে পাকিস্তানও সৌদি আরবের শত্রুদের তালিকাভুক্ত হয়ে পড়েছে। আর সেকারণে ট্রাম্পের ঘনিষ্ট দুই যুবরাজ এমবিএস ও এমবিএজেড ট্রাম্পকে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছেদ করতে প্রভাবিত করেছে। আর এতে করে স্বাভাবিকভাবেই ভারত লাভবান হয়েছে। পাকিস্তান ভারতের চিরশত্রু! পাকিস্তানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ থাকে তবে সবদিক দিয়েই ভারতের লাভ। কিন্তু জো বাইডেন কি ট্রাম্পের নীতি অনুসরণ করে পাকিস্তানের সাথে দূরত্ব আরও বৃদ্ধি করবেন? মনে হয় না! জো বাইডেন ট্রাম্পের মত বোকা নিশ্চয়ই নয়। আফগানিস্তানে প্রভাব রাখতে আমেরিকার অবশ্যই পাকিস্তানের প্রয়োজন পড়বে। তাই সম্পর্ক উন্নয়ন করা অবধারিত। এটাও ভারতের একটা চিন্তার কারণ হয়ে দাড়াবে।

এতো গেল নেতিবাচক দিক! ইতিবাচক দিকও রয়েছে। ট্রাম্প বিদায়ের প্রাককালে আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোর জন্য চেষ্টা করেছেন এবং সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সৈন্য প্রত্যাহার করলে সমগ্র আফগানিস্তানে যে তালেবানরা পুনরায় প্রভাব বিস্তার করবে তা অনুমান করাটা খুবই সহজ। আর তালেবানরা আফগানিস্তানের দখল নিলে তা ভারতের জন্য নতুন করে চিন্তার কারণ হবে। আফগান সীমান্ত নিয়ে তখন ভারতকে নতুন করে ভাবতে হবে। সেইসাথে তারা ভারতে যে ইনভেস্টমেন্ট করেছে তা সব জলে যাওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে জো বাইডেন ভারতের ত্রান কর্তা হিসেবে আর্বিভূত হতে পারে। জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়! তবে জো বাইডেন তো ওবামার সহকারী ছিলেন। তাই সেই দিক বিবেচনা করে হলফ করা যায়, জো বাইডেন এতো সহজে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে চাইবেন না। এই দিক থেকে ভারত আশার আলো দেখতে পাচ্ছে।

অন্যদিকে জো বাইডেন হয়তো ইরানের সাথে পারমানবিক চুক্তিকে পুনরায় নবায়ন করতে পারেন। এতে করে ইরান থেকে তেল আমদানি করতে ভারতে তেমন কোনো বেগ পেতে হবে না। সবদিক বিবেচনা করলে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য জো বাইডেন নতুন বারাক ওবামা হিসেবেই যে আর্বিভূত হতে যাচ্ছেন, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন। সময়ই বলে দিবে, জো বাইডেন শান্তির পথে হাটবেন নাকি হাতে শান্তির পতাকা নিয়ে পিছন দিক থেকে বিশ্বের বুকে যুদ্ধের দামাবা বাজাবেন!

পঠিত : ৩৩৭ বার

মন্তব্য: ০