Alapon

অবশেষে স্বাধীন হলো নাগার্নো-কারাবাখ, স্বপ্ন পূরণ হলো আবুল আসাদের...



আজ জননন্দিত লেখক-সম্পাদক আবুল আসাদ স্যারের খুশির দিন। প্রায় ৮০ বছরের বয়োবৃদ্ধ এই লেখক এখন ফ্যাসিবাদের জেলখানায় অবরুদ্ধ। গত বছরের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ আটক হওয়ার পর থেকেই তিনি এখনো আটকাবস্থায়।

ছোটবেলার গুগল ফেসবুক বিহীন সময়টাতে আবুল আসাদের সাড়া জাগানো সাইমুম সিরিজের বইগুলো পড়ে জেনেছিলাম বিশ্বের কোন প্রান্তে কার বিরুদ্ধে লড়ছে স্বাধীনতাকামীরা। সাইমুম-৮ এবং সাইমুম-৯ যথাক্রমে 'সিংকিয়াং থেকে ককেশাস', 'ককেশাশের পাহাড়ে' বইগুলোতে নাগার্নো-কারাবাখের সংঘাত নিয়ে বিস্তর গল্প-কাহিনী ছিল। তিনি তার লিখনির মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন কিভাবে আজারিদের নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে দখল করে আর্মেনিয়ান সন্ত্রাসীরা গণহত্যা-লুটপাট চালিয়েছিল। মসজিদ-ধর্মীয় স্থাপনা গুলোকে গরু-শুকরের আবাসস্থল বানিয়েছিল। তার মাধ্যমেই আমরা সর্বপ্রথম ওই অঞ্চলের মর্মান্তিক ইতিহাস জেনেছিলাম। দীর্ঘ সংঘাত, অসংখ্য মানুষের রক্ত ঝরার মধ্য দিয়ে সেই অঞ্চল আজ আনুষ্টানিক ভাবে স্বাধীন হলো তথা আজারবাইজানের হাতে ফিরে এলো।


ভিডিও : আজারবাইজান থেকে দখলের পর কারাবাখ অঞ্চলের আঠারো শতকে প্রতিষ্ঠিত 'মামার মসজিদ' কে শুকরের খোঁয়াড়ে পরিণত করে আর্মেনিয়া।

চলমান এই যুদ্ধে তুরস্কের ব্যাপক লজিস্টিক সাপোর্ট পেয়ে শুরু থেকেই যুদ্ধের গতি আজারবাইজানের দিকেই ছিল। বিশেষ করে তুর্কি ড্রোনের ব্যাপক ব্যাবহার ছিল এই সংঘাতে। এছাড়াও চলমান সংঘাতের শুরুর দিকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এই যুদ্ধে তার দেশকে সমর্থন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে পাকিস্তান, তুরস্ক ও আফগানিস্তানকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। যদিও ফ্রান্স-গ্রীস আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন আর্মেনিয়ার পক্ষে থাকায় একটা শঙ্কা শুরু থেকেই ছিল। অবশেষে সব শঙ্কা পেরিয়ে চূড়ান্ত সফলতা পেল আজারিরা।

নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চল আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের বলে স্বীকৃতি দেয়া হলেও সেটির নিয়ন্ত্রণ ছিল এতদিন দখলদার আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী নৃ-গোষ্ঠীর হাতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার দেশ দুটি যখন আলাদা হয় তখন থেকেই এই বিবাদ চলছে। নব্বইয়ের দশকের ছয় বছর ধরে চলা ব্যাপক যুদ্ধের পর ১৯৯৪ সালে এটি আর্মেনিয়ার দখলে চলে যায়।

ব্যাপক লড়াই ও যুদ্ধের পর ওই বছর দুই দেশের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল কিন্তু শান্তি চুক্তি হয়নি। এদিকে চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেও রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যেগে স্বাক্ষরিত হওয়া দুইটি শান্তি চুক্তি ভেস্তে যায়। আর আজকে নতুন করে সই হওয়া এই শান্তি চুক্তি আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ১টা থেকে কার্যকর হবে।শান্তিচুক্তির শর্তানুযায়ী,
(১) এখন পর্যন্ত আজারবাইজান যে সকল অঞ্চল দখল/পুনর্দখল করেছে, সেগুলো আজারবাইজানের অধিকারে থাকবে। উল্লেখ্য, যুদ্ধ চলাকালে আজারবাইজান নাগর্নো–কারাবাখের আশেপাশের আর্তসাখ–নিয়ন্ত্রিত আজারবাইজানি অঞ্চলের ৫টি শহর, ৪টি ছোট শহর ও ২৪০টি গ্রাম অধিকার করেছে, এবং ইরানি–আজারবাইজানি সীমান্তের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
(২) আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে আর্তসাখ–অধিকৃত আজারবাইজানি অঞ্চলের অবশিষ্টাংশ থেকে আর্তসাখ/আর্মেনীয় সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
(৩) আর্মেনিয়া ও আর্তসাখের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী লাচিন করিডোরে রুশ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হবে, এবং রুশ শান্তিরক্ষীরা সেখানে কমপক্ষে পাঁচ বছর পর্যন্ত অবস্থান করবে।
(৪) আজারবাইজান ও নাখচিভানের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী করিডোরটির নিরাপত্তাও রুশরা নিশ্চিত করবে।
(৫) আর্মেনিয়া/আর্তসাখ এবং আজারবাইজানের মধ্যে বন্দি বিনিময় অনুষ্ঠিত হবে।
(৬) এতদঞ্চলে বিদ্যমান সমস্ত অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ সংক্রান্ত অবরোধ তুলে নেয়া হবে।

সামগ্রিকভাবে, এই যুদ্ধে আজারবাইজান বিজয়ী হয়েছে। দীর্ঘদিন আর্মেনিয়ার দখলে থাকা নাগারনো-কারাবাখের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তারা পুনর্দখল করেছে।

নতুন চুক্তি অনুযায়ী চলমান সংঘাতে নাগোরনো-কারাবাখের যেসব এলাকা আজারবাইজান দখলে নিয়েছে সেগুলো তাদের দখলেই থাকবে। এ ছাড়া আজারবাইজান সংলগ্ন আরও কিছু এলাকায় আর্মেনিয়ার যেসব সেনা মোতায়েন করা হয়েছে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। পুতিনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্ববহ’ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি আরো জানিয়েছেন এই শান্তি প্রক্রিয়ায় তুর্কি সেনারাও অংশ নেবে।



উল্লেখ্য, আজারবাইজান তুরস্কের অন্যতম মিত্র দেশ। এই যুদ্ধে তুর্কী প্রেসিডেন্ট আজারবাইজানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার কথা যুদ্ধের পরপরই ঘোষণা করেছেন। এবং অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যেও সর্বাত্মক সমর্থনে এগিয়েও এসেছিলেন।

পঠিত : ১১৯৯ বার

মন্তব্য: ০