মৌমাছি সমাচার
তারিখঃ ১১ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৩৫
'মৌমাছি ফুল থেকে নয়, ফল থেকে মধু সংগ্রহ করে।
কথাটা শুনেই হয়তো আপনার চোখ ছানাবড়া! বলে কি এই নাবালক! এতোদিন দেখে আসলাম বাগানে বাগানে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আসছে মৌমাছি!
অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি। এ ব্যাপারে আমি নই, স্বয়ং আল্লাহ পাকই জানিয়েছেন,
"তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে শিক্ষা দিয়ে আদেশ করলেন, পাহাড়ে, গাছে এবং মানুষের ঘরে মৌচাক তৈরি করো। সব ধরনের ফল থেকে আহার করো এবং প্রতিপালকের সরল পথে চলো( যা মনে রাখা ও অনুসরণ করা সহজ) মৌমাছির উদর থেকে নিঃসৃত হয় বর্ণিল পানীয়। এতে মানুষের জন্য রয়েছে নিরাময়। জ্ঞানীদের জন্য এর মধ্যেও রয়েছে (আল্লাহর মহিমার) উজ্জ্বল নিদর্শন।" -[সূরা আন-নহল, ৬৮-৬৯]
ভেবে দেখেছেন, আল্লাহ পাক এখানে ফুলের কথা না বলে ফলের কথা বললেন কেনো?
চলুন ব্যাপারটা নিয়ে একটু গবেষণা করি।
আপনি বা আমি যেটা দেখি, সেটা হলো মৌমাছি উড়ে গিয়ে ফুলের উপর গিয়ে বসছে। এটা সত্য। কিন্তু আল্লাহ যে বললেন মৌমাছি ফল থেকে মধু সংগ্রহ করে! তাহলে ফুলের ভেতর কি ফল লুকায়িত!
জ্বি, ব্যাপারটা ঠিক সে রকম।
মৌমাছিরা মুলত ফুলের গর্ভাশয় থেকে রস সংগ্রহ করে। গর্ভাশয়ের কাজ কি? গর্ভাশয় হলো এমন একটি প্রকৃয়া যা থেকে পরিবর্তিত হয়ে ধীরে ধীরে তা ফলে রূপান্তরিত হয়। এই ফলের অভ্যন্তরে বীজ থাকে। এই ফল ও বীজের বিস্তরণ ঘটে এবং অঙ্কুরিত হয়ে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়। এই নতুন উদ্ভিদ থেকে পুনরায় ফুল, ফল ও বীজ উ ৎপন্ন হয়। এতে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি ঘটে, উদ্ভিদ সম্প্রদায় দীর্ঘদিন পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারে।
অর্থাৎ গর্ভাশয় মূলত ফুল নয় ফলের প্রাথমিক
অবস্থা!
আর আল্লাহ পাক সেটাই নির্দেশ করেছেন।
একটু ভাবুন তো ১৫০০ বছর আগে কি কেউ জানতো ফুলের গর্ভাশয় আছে? এবং সেটা থেকেই ফল হয় আর মৌমাছি সেখান থেকেই মধু সংগ্রহ করে! তখন তো দেখা যেত মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে! কিন্তু এটা যে মূলত ফলেরই রস তা কি কেউ কল্পনাও করতে পেরেছিল সে সময়?
কি অনুধাবন করতে পারলেন কিছু?
এরপর আয়াতটি নিয়ে আরেকটু ভাবুন। আল্লাহ পাক মৌমাছির সরল পথে ( যা মনে রাখা ও অনুসরণ করা সহজ) চলার কথা বলে মৌমাছিদের দক্ষতার কথা জানিয়েছেন।
১৯৭৩ সালে ”ভোন ফ্রিচ” (Von Frich) মৈামাছির আচারণ ও যোগাযোগের উপর গবেষনার জন্য নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন ।’মৌমাছি কোন নতুন ফুলের বাগানের সন্ধান পেলে মৌচাকে ফিরে আসে এবং মৌমাছি নাচ নামক আচারন দ্বারা অন্যান্য সাথীদেরকে সে বাগানের হুবাহু দিক ও মানচিত্র বলে দেয়। অন্যান্য শ্রমিক মৌমাছিকে তথ্য দেওয়ার লক্ষে এ আচারণের বিষয়টি ক্যামেরার সাহায্যে ছবি গ্রহণ সহ অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকভাবে আবিষ্কৃত সত্য ।
আয়াতটি আরেকটু নিচের দিকে দেখলে আমরা দেখবে, আল্লাহ বলেছেন... এতে রয়েছে মানুষের জন্য নিরাময়...। [সূরা আন- নাহল,৬৮-৬৯]
আজ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, মধুর ভেতর রয়েছে হাজারো রকমের ঔষধি গুণ। চলুন এক ঝলক দেখে নেই...
• বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, মধুর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা। এ ক্ষমতার নাম ইনহিবিন। মধুর সঙ্গে কোনো তরল পদার্থ মিশ্রিত হলে তা তরলীভূত হয়ে পড়ে। গ্লুকোজ অক্সিডেজ নামের বিজারকের সঙ্গে মধুর বিক্রিয়া ঘটলে গ্লুকোনা ল্যাকটোন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডে পরিণত হয়। এই বিক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস হয়।
• গবেষণায় দেখা গেছে, রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মধুতে ডুবিয়ে দিলে মারা যায়। মধু ইস্টের (Yeast) বংশবৃদ্ধি ঘটতে দেয় না। এ কারণে খাঁটি মধু বোতলজাত করে অনেক দিন রাখা যায়। মধু একটি উৎকৃষ্ট প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষক।
• সারা পৃথিবীতে কাশির ওষুধ ও অন্যান্য মিষ্টিদ্রব্য তৈরি করতে প্রতিবছর কমপক্ষে ২০০ টন মধু ব্যবহৃত হয়। খুসখুসে কাশিতে মধুর সঙ্গে লেবুর রস উপশমদায়ক। মাতাল রোগীকে স্থিরাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মধু কার্যকর ভূমিকা রাখে। -[আদ-দিমাশকি, আত-তিব্বুন নববী, খ. ১, পৃ. ২৭]
• গ্লুকোজের ঘাটতিতে হৃৎপেশির শক্তি কমে যায়। মধুর ব্যবহার এ ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম।
• হাঁপানি রোগে মধুর স্থান সবার ওপরে।
• প্যারিসের ইনস্টিটিউট অব বি কালচারের পরিচালক রিমে কুভেন বলেন : রক্তক্ষরণ, রিকেট, ক্যান্সার এবং শারীরিক দুর্বলতায় মধুর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে।
• চিনির পরিবর্তে শিশুদের মধু খেতে দেওয়া হয়। চিনি দন্তক্ষয় ঘটায়, কিন্তু মধু তা করে না। মধু ব্যবহারে নবজাতক স্বাস্থ্যবান ও সবল হয়ে ওঠে।
(ইবনুল কায়্যিম, তিব্বুন নববী, পৃ. ৫৬)।
• এক চামচ বাদাম তেলের সঙ্গে দুই চামচ মধু মিশিয়ে কাটা বা পোড়ার ক্ষতে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। ইনফেকশন, সাধারণ ঘা, ত্বকের আলসার, পচা-গলা ঘা মধু ব্যবহারে দ্রুত আরোগ্য লাভ হয়।
এ থেকে কি অনুধাবন করতে পারলেন? আল্লাহ পাক যা বলেছেন তা নির্ভুল এবং সত্য। কোনো সন্দেহ নেই তাতে। এটা মহান রাব্বে কারিমের নাজিলকৃত গ্রন্থ।
মন্তব্য: ০