Alapon

|| আসুন : কু-ধারণা পরিহার করি ||

একটা মানুষকে হুট করেই জাজ করে ফেলি আমরা। হুট করেই তার ওপর চাপিয়ে দিই অভিযোগের পাহাড়। কারো থেকে শুনে, কিছু একটা দেখেই আমরা বিচার করে ফেলি। সীদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আমরা আসোল কারণ খুঁজি না।আসোলে সঠিক বিষয় কী, তার কোনো খোঁজ নিতে চাই না।

এভাবে করে আমরা সমাজে, সংসারে ও পৃথিবীতে সৃষ্টি করি অশান্তির দাবদাহ! জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিই একটা জীবন। একটা পরিবার। একটা মন। একটা সুন্দর ও পবিত্র অনুভূতি। মানুষের মগজের প্রশান্তি কেঁড়ে নিতে আর কী লাগে? অনুমান নির্ভার, ভাষা ভাষা দৃষ্টি নির্ভর একটা কথায়ই তো যথেষ্ট! একটা অভিযোগই যথেষ্ট।

আপনি মানুষের ওপর এমন একটা বিষয় চাপিয়ে দিতে চান, বা দেন যার সাথে সেই মানুষটার বিন্দু বিসর্গ সম্পর্ক নেই।

মনে করুন একটা মানুষ, রিক্সায় করে তার বোনের সাথে কোথাও যাচ্ছে। আপনি দেখেছেন। দেখেই রসিয়ে রসিয়ে রটিয়ে দিয়েছেন যে, সে কোনো মেয়েকে নিয়ে ধুমিয়ে প্রেম করেছে। অথচ কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার বিপরীত।

আমরা ১৯ সালে একবার বই মেলায় গিয়েছিলাম। সে বই মেলায় একটা মেয়ে সিএনজিতে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। মানুষ তো স্বার্থপর। নিজের স্বার্থ ছাড়া একবিন্দুও বুঝতে চায় না। বুঝবার চেষ্টাও করেনা। তো সেই মেয়েকে সহযোগিতা করে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, এমন কেউ নেই। কারো সাক্ষাৎ মিলেনি।

আমার এক ফ্রেন্ড বললো আমরাই নিয়ে যাই। কিন্তু আমি ক্যামন ইতস্ততবোধ করলাম। একপর্যায়ে রাজি হলাম আমিও। আরেকটা সিএনজি ভাড়া করে ঢামেকে ভর্তি করালাম।

এই যে সিএনজি ভাড়া করে একটা মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হলো, এখন তেউ যদি বিষয়টা না বুঝে অভিযোগ করে বলে দুইটা ছেলের সাথে এই মেয়েটা সিএনজিতে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তা হলে বিষয়টা তো নিরপরাধ মানুষকে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো। আসোল বিষয় না বুঝে মন্দ ধারণা করা হলো। অন্যের অধিকার, সম্মান, ব্যক্তিত্বে আঘাত করা হলো অমূলকভাবে!

এক লোকের জীবনের একটা গল্প বলি। সেই লোকটার বউ কালো বোরকার সাথে নীল ওড়না পরে। একদিন বিকেলে তার বউ বাপের বাড়ি গেছে। তার একজন প্রতিবেশি বিষয়টা জানে। সে দেখলো বিকেলে বাজারে হুবহু সেইম কালারের বোরকা-ওড়নায় একটা মহিলা এক অপরিচিত পুরুষের সাথে কথা বলতেছিলো। না বুঝে লোকটা হুট করেই সন্দেহ করে ফেলেছে। কুধারণা করে ফেলেছে। সাথে সাথে কোনো বাচবিচার না করেই উক্ত ব্যক্তি মহিলার স্বামীর কাছে ফোনে অভিযোগ করে দিলো। বললো আপনার বউ বাপের বাড়ির কথা বলে বের হয়ে আরেকটা পুরুষের সাথে আড্ডা মারে। মহিলার স্বামী তো রাগে গরগর করতেছে! এমন কোনো সুপুরুষ পৃথিবীতে আছে কি, যার এমন কিছু শুনলে শরীর রাগে-জিদে না কাঁপবে? নাহ্! সত্যিকারের পুরুষ মানুষ কখনোই বিষয়টি মানতে পারবেনা। মানবেই না। নিজে যেমনই হোক। লোকটাও মানলোনা! কিন্তু বিষয়টি তো যাচাই করবে আগে।

কোনো খোঁজ না নিয়ে সে হনহনিয়ে ছুটে চললো তার বলা ঠিকানায়। বাজারে...

গিয়ে দেখে ভিন্ন এক মহিলা। এক ইতস্তত অবস্থায় পড়লো। ফিরে এলো লজ্জিত অবস্থায়...

এই যে ক্ষণিকের জন্য হলেও এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আর মানসিক যন্ত্রণায় পড়লো লোকটা, এর পেছনে অবশ্যই এই মন্দ ধারণা, অনুমান নির্ভর চিন্তা দায়ী!

দেখুন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা এমন অযথা ধারণা, অমূলক পরিস্থিতিতে যেনো আমরা না পড়ি, সে জন্যে কুরআনুল কারিমে নির্দেশ দিয়েছেন - তোমরা অত্যধিক ধারণা থেকে বিরত থাকো। কোনো ধারণা মিথ্যেও হতে পারে। [০১]

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কোনো ব্যক্তি মিথ্যেবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তা-ই বলে। তা-ই প্রচার করে।[০২]

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত অন্য আরেকটি হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, ধারণা মিথ্যা কথার নামান্তর।’[০৩]

হাদিসবিশারদগণ বলেন, ধারণা বলতে প্রমাণ ব্যতিরেকে কোনো মানুষের প্রতি খারাপ ধারণা বোঝানো হয়েছে। এমনিভাবে যেসব মুসলমান বাহ্যিক অবস্থার দিক দিয়ে সৎকর্মপরায়ণ দৃষ্টিগোচর হয় তাদের সম্পর্কে প্রমাণ ব্যতিরেকে বাজে ধারাণা পোষণ করা হারাম।

আসুন। আমরা আর বাজে ধারণা, কু-ধারণা না করি। সন্দেহ -সংশয়, আর অযথা অভিযোগ না করে মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু করি। কী প্রয়োজন অমূলক ধারণা করে গুনাহগার হওয়ার? অন্যের জীবনকে বিষিয়ে তুলেও বা কী ফায়দা পাবো আমরা? কারো হৃদয়ে আঘাত করলে, অযথা সন্দেহ করলে সেটা কোনো মানুষই মেনে নিতে পারেনা। তাঁর কলিজার চিপায় একটা আঘাত থাকেই। একটুকরো ক্ষত সে সারাজীবনই বয়ে বেড়ায়। যতো ভালো মানুষই হোক কেউ বিষয়টা সহজে মানতে পারেনা। কেউ হয়তো হজম করে নেয়, কেউ নেয় না। কারোটা প্রকাশ পায়, কারোটা পায় না।

তাই আসুন, মন্দ ধারণা পরিহার করি। সু-ধারণা তৈরি করি। কারণ, এই যে সুধারণা, এটা একটা ইবাদাতও বটে...[০৪]

|| আসুন : কু-ধারণা পরিহার করি ||
~রেদওয়ান রাওয়াহা
১১.১১.২০

রেফারেন্স
----------------------

[০১] আলকুরআন -৪৯/১২
[০২] সহীহ্ মুসলিম -০৫
[০৩] তিরমিজি- ১৯৮৮
[০৪] আবু দাউদ-৪৯৯৩

পঠিত : ৩৫৮ বার

মন্তব্য: ০