Alapon

রাসূল সা.-এর প্রতি কটুক্তির নববি প্রতিক্রিয়া...


কনটেক্সট বিবেচনার অযোগ্যতা আমাদের কিংকর্তব্যবিমুঢ় করে দিচ্ছে। আমরা বুঝতেই পারি না কখন কীভাবে রিয়েক্ট করতে হবে। কখন কোন স্ট্রাটেজি নিতে হবে। শরিয়া বাস্তবায়নের ক্রমধারা আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিখিয়েছেন। তেমনি কনটেক্সট বিবেচনা এবং স্ট্রাটেজির মধ্যে ক্রমধারা অবলম্বনও আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিখিয়েছেন।

রাসূল সা.-এর প্রতি কটুক্তির নববি প্রতিক্রিয়া

এক. মক্কার প্রতিক্রিয়া

যেমন- রাসূল সা.-কে নিয়ে কটুক্তি নতুন কিছু নয়। ইভেন তাঁকে হত্যা করতে চেষ্টা করা হয়েছে, তাঁর গর্দানের ওপর নাড়িভুড়ি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে মক্কায়। আমাদের এখন লক্ষ করতে হবে, তখন মুসলিমরা কী রিয়েক্ট করেছেন। রাসূল সা.-এর পিঠে যখন নাড়িভুড়ি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন রাসূল সা. সিজদা থেকে মাথা উত্তোলন করতে পারছিলেন না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ দূর থেকে এই দৃশ্য দেখছিলেন কিন্তু তিনি রাসূল সা.-কে এসে সহায়তা করতে পারছিলেন না। কারণ, তিনি কুরাইশি ছিলেন না, তিনি প্রভাবশালী ছিলেন না, তিনি ছিলেন শ্রমিক দিনমজুর শ্রেণির, তিনি মানুষের ছোটো খাটো কাজ করতেন। এই খবর পেয়ে অলমোস্ট শিশু বয়েসি ফাতিমা রা. কান্না করতে করতে এসে নাড়িভুড়ি অপসারণ করেন। রাসূল সা. অতঃপর সেই সাতজনের দিকে তাকালেন--- যারা এই অপকর্মের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহযোগী ছিল--- তিনি আরশের দিকে হাত উত্তোলন করলেন, এবং সেই সাতজনের নাম ধরে করে আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন। রাসূল সা.-এর মর্মস্পর্শী দোয়া শুনে তারা ভয়ার্ত হয়ে স্থান ত্যাগ করে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন তাদের সেই সাতজনকে আমি বিভিন্ন জায়গায় মরে পড়ে থাকতে দেখেছি। এই ছিল মক্কায় রাসূল সা.-এর সাথে বেয়াদবির বিরুদ্ধে নববি প্রতিক্রিয়া। আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা.-এর মাধ্যমে আমাদের এটাই শিখিয়েছেন।

দুই. মদিনার প্রতিক্রিয়া

কুরাইশরা মুসলমানদের খবর পাঠালো--- তোমরা মনে করো না, মক্কা থেকে গিয়ে নিরাপদে থাকবে; আমরা ইয়াসিরে পৌঁছে তোমাদের সর্বনাশ করে ছাড়ব।

এটা শুধু হুমকি ছিল না; বরং রাসূল সা. নির্ভরযোগ্য সূত্রে কুরাইশের ষড়যন্ত্র এবং অসদুদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হন। ফলে তিনি সারারাত জেগে কাটাতেন এবং কখনও সাহাবায়ে কেরামের প্রহরাধীনে রাত যাপন করতেন।

এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের যুদ্ধের অনুমতি দেন। তবে এ যুদ্ধ ফরজ বলে তখনও আখ্যায়িত করা হয়নি। কিন্তু যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

কাব ইবনে আশরাফ রাসূল সা. সম্পর্কে এবং মুসলিম নারীদের সম্পর্কে অশ্লীল কটুক্তি করে, মদিনায় রাসূল সা. তাকে গুপ্তহত্যার অনুমতি দেন।

এবার লক্ষ করুন, রাসূল সা.-কে মক্কায় হেনস্থা করা হয়েছে বারবার, শারিরীকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে এবং হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কেন মক্কায় যুদ্ধের অনুমতি না দিয়ে মদিনায় যুদ্ধের অনুমতি দিলেন। এখানে গাল্প অভ ডিফারেন্স রয়েছে। মুসলমানেরা ইমোশন যথাসময়ে দেখাতে আল্লাহ তায়ালা শিক্ষা দিয়েছেন। কেন মক্কায় যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়নি?

কারণ, তখন মুসলিম উম্মাহ মাত্র, গঠিত হচ্ছে, তখনও মুসলিমরা দুর্বল, সংখ্যায়ও নগন্য। তখন যুদ্ধ-সংঘাত সংঘটিত হলে মুসলিমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তাই আল্লাহ তায়ালা অনুমতি দেননি।

লক্ষ করুন, রাসূল সা.-কে মক্কায় বারবার হেনস্থা করা হচ্ছে। কখনও ভারভালি, কখনও ফিজিক্যালি। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের সশস্ত্র সংগ্রামের অনুমতি দেননি। এখন বলুন, আপনার অযৌক্তিক ইমোশনের জাস্টিফিকেশান কোথায় থেকে আসে। ইসলামে কর্মের ফলাফল বিবেচনা করে, কিন্তু অজ্ঞ মানুষজন শয়তানের ধোঁকায় তা বারবার ভুলে যেতে চায়। তাই আমাদের বারবার রাসূল সা.-এর সিরাহ অধ্যয়ন ও উপলব্ধিতে ফিরে যেতে হবে।

আমরা যদি কনটেক্সট বিবেচনা না করতে পারি তাহলে বিশাল সমস্যা। কারণ, সাপোজ ফ্রান্স চাইল মুসলিমদের নির্যাতন করার স্বপক্ষে বৈশ্বিক জনমত আদায় করবে। তো সে সহজ একটা কর্মপন্থা গ্রহণ করতে পারে যে, তারা রাসূল সা.-এর প্রতি কটুক্তি করবে এবং মুসলিমরা উত্তেজিত হয়ে ভায়োলেন্স করবে, খ্রিস্টান হত্যা করবে। আর তখন সে দেখাতে পারবে যে, দেখ মুসলিমরা কেমন। অতএব, তাদের নির্যাতন করা, হত্যা করা যৌক্তিক। অর্থাৎ, আপনার কোনো অবিবেচনাপ্রসূত কাজ লাখ লাখ মুসলিমকে নির্যাতনের লাইসেন্সও দিয়ে দিতে পারে।

কিংবা মনে করুন, মুসলিমরা খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং প্রস্তুতি মাঝপথে আছে। এখন কোনো খ্রিস্টান চাইল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার আগেই যুদ্ধ লেগে যাক। তাই তারা রাসূল সা.-কে কটুক্তি করল আর আপনি প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার আগেই জড়িত হয়ে গেলেন। তখন দেখা যাবে, এই ইমোশন ছিল শয়তানী ইমোশন, কারণ তা উম্মাহর স্বার্থের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হয়েছে।

(দেখুন, আবার আমি বয়কট বিরোধী বলে ট্যাগ দিয়ে দিয়েন না। আমি বয়কট বিরোধী নই। আমি যথাসম্ভব প্রতিবাদের পক্ষে। এবং একটা মাত্রা পর্যন্ত এর প্রয়োজনও রয়েছে। যথার্থ কনটেক্সটে সশস্ত্র যুদ্ধেরও প্রয়োজন আছে। তবে সবজায়গায়, ইমপ্রপার কনটেক্সটে আমি সশস্ত্র সংগ্রাম বিরোধী।)

- Saifullah

পঠিত : ৪৯২ বার

মন্তব্য: ০