Alapon

তাওহীদের জ্ঞান ছাড়া মুসলিম -কোনকালেই সম্ভবপর নহে।

লেখাঃ আরিফুল ইসলাম

মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের (রাহিমাহুল্লাহ) এক ছাত্র তাঁর উপর মারাত্মক বিরক্ত ছিলো। ছাত্রের অভিযোগ ছিলো- ‘শায়খ কেনো সারাক্ষণ তাওহীদ (আকীদা) নিয়ে আলোচনা করেন, এটা কী এমন গুরুত্বপূর্ণ!’

ছাত্রের অভিযোগ শায়খের কানে পৌঁছলো। তিনি ছাত্রকে ডাকলেন। সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে না গিয়ে তিনি ছাত্রকে একটা উদাহরণ দিলেন। “গতোকাল পাশের মহল্লার এক মুসলিম যুবক মুরগী জবাই করলো। মুরগী জবাইর সময় আল্লাহর নাম না নিয়ে সে এক দরবেশের নাম নিলো!”

কথাটি বলে শায়খ থামলেন। তিনি দেখতে চাইলেন ছাত্রের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়। ছাত্র কপাল ভাঁজ করলো। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো ঘটনা সম্পর্কে তার মন্তব্য- এ আর এমন কী!

মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব এবার বললেন, “গতোকাল পাশের মহল্লায় আরেকটা ঘটনা ঘটেছে। এক ছেলে তার মাকে বিয়ে করেছো!”

কথাটি শুনামাত্র ছাত্রটি চমকে উঠলো- “কী! মাকে বিয়ে করছে মানে? এটা কিভাবে সম্ভব?”

ছাত্রের সহজাত প্রতিক্রিয়া দেখে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব বললেন, “দেখো, মাকে বিয়ে করা হারাম, গর্হিত কাজ, অন্যায় কাজ, নিন্দনীয় কাজ। কিন্তু, আল্লাহ ছাড়া কারো নামে জবাই করা তো শিরক। হারাম কাজের কথা শুনে তোমার যতোটা আফসোস হচ্ছে, শিরকের কথা শুনে তো ততোটা আফসোস হচ্ছে না। অথচ শিরক হলো এমন গুনাহ, যেই গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।”

ছাত্রটি এবার বুঝতে পারলো শায়খ কেনো তাওহীদের কথা সবসময় বলেন। কারণ, তাওহীদের জ্ঞান না থাকলে ঈমান থেকে শিরক-কুফর আলাদা করা যাবে না। দেখা যাবে মানুষ নামাজও পড়ছে, আবার শিরকও করছে। হজ্বও করছে, পূজামণ্ডপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে!

মোবাইলে কাউকে কল করতে চাইলে শুধু মোবাইল কিনে, টাকা রিচার্জ করাটাই যথেষ্ট না। যাকে কল করতে চাচ্ছেন তার নাম্বারটিও জানতে হবে। ভুল নাম্বারে কল দিলে যতোবারই চেষ্টা করা হোক না কেনো, যাকে খোঁজা হচ্ছে তাকে পাওয়া যাবে না। কারো বাড়িতে যেতে চাইলে তার নাম, বাড়ির ঠিকানা থাকতে হবে। নাম-ঠিকানা ছাড়া গন্তব্যে যাওয়া যাবে না। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে চাইলে যে প্রশ্ন এসেছে, সেই প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিতে হবে; খাতাভর্তি উল্টোপাল্টা লিখলে চলবে না। প্রশ্নকারী ঠিক যেভাবে উত্তর চেয়েছেন, সেভাবেই তো লিখতে হবে। যা লিখলে তিনি অসন্তুষ্ট হোন তা লিখা যাবে না।

উপরের উদাহরণগুলো আমরা সবাই মানি। ঠিক তেমনি, আল্লাহর ইবাদাত করতে চাইলে আল্লাহ ঠিক যেভাবে ইবাদাত করতে বলেছেন, সেভাবেই করতে হবে। আল্লাহ ঠিক যেভাবে তাঁকে ডাকতে বলেছেন, সেভাবেই ডাকতে হবে। ‘রং-নাম্বারে’ ডায়াল করলে যেমন সঠিক মানুষের কাছে কল যাবে না, আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে ইবাদাত করলে আল্লাহ কিভাবে তা কবুল করবেন? একবার মসজিদে গিয়ে সিজদাহ দিবেন, আরেকবার মন্দিরে যাবেন?

তাওহীদের শিক্ষা এজন্য জরুরি। তাওহীদের শিক্ষা বান্দাকে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে; যেভাবে সঠিক নাম্বার সঠিক মানুষকে কল দিতে সাহায্য করে।
ঐতিহাসিকভাবে এদেশের মানুষের তাওহীদের শিক্ষা এতোটা নেই, যতোটা থাকা দরকার। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ আর সেলিব্রেটিদের তাওহীদের জ্ঞান দেখলেই সেটা আরো ভালোভাবে বুঝা যায়। এদেশের বড়ো একটা অংশ মসজিদে সিজদাহ দেবার পাশাপাশি মাজারে সিজদাহ দিতে অভ্যস্ত। ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ বা ‘অসাম্প্রদায়িকতা’র নামে এখন যোগ হচ্ছে মন্দির উদ্বোধন!

এসবের কারণ একটাই। তাওহীদের জ্ঞানের অভাব। আল্লাহকে মানার জন্য আল্লাহ সম্পর্কে যতোটুকু জানা দরকার ততোটুকুর জ্ঞান নেই। অজ্ঞতা মানুষকে শিরক-কুফরের দিকে নিয়ে যায়।

ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত হয়ে মূসার (আলাইহিস সালাম) কওম আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যক্ষ করেছিলো। এতদসত্ত্বেও তারা কিছুদূর এগিয়ে মূর্তিপূজারীদের দেখে বলেছিলো, “ও মূসা! আমাদের উপাসনার জন্য তাদের মূর্তির মতোই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন।”

উত্তরে মূসা (আsmile শুধু বলেছিলেন, “তোমরা আসলেই একটি মূর্খ সম্প্রদায়।” [সূরা আরাফ ৭:১৩৮]

যারা মসজিদেও যায়, হজ্ব করতেও যায় আবার মন্দির উদ্বোধন করতেও যায়, তারাও মূসার (আsmile কওমের মতো। তাদের আচরণ দেখে এতোটা অবাক হই না। কারণ, তাদের তাওহীদের জ্ঞান নেই।

এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত ইসলামের বেসিক আকীদা নিয়ে পড়াশোনা করা। এতে অন্তত কোনটা শিরক-কুফর আর কোনটা ঈমান সেটা নির্ণয় করা সহজ হবে।

পঠিত : ৫১২ বার

মন্তব্য: ০