Alapon

নিশুতি রাতের তারকারাজী.....

জীবনে আমূল বদলে যাবার প্রচেষ্টা ঠিক কতবার করেছি তার সুনির্দিষ্ট হিসেব মেলানো কঠিন। নিজের সঙ্গে অবিরাম কথা চালিয়ে যাবার এক অদ্ভুত অভ্যাস আছে আমার। যাকে বলে স্বগতোক্তি। এ কারণেই কিনা জানি না, জীবনে নিজেকে একা মনে হয় নি খুব একটা। আমিই আমাকে সঙ্গ দিয়েছি সব চাইতে বেশি। বুকের ভিতরে অজানা দুটো চরিত্র ঘন্টার পর ঘন্টা চালিয়ে গেছে কথপোকথন।


আমার চরিত্রের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো, নিখুঁত হতে চাইতাম সবসময়। হয় একদম খুব ভালো হয়ে যাবো, নয়তো একদম নষ্ট হয়ে যাবো; এর মাঝামাঝি কোনো অপশন আমার জন্য নয়। সেই নিখুঁত হবার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে জীবন থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছি অজস্রবার। পথে পথে হেঁটেছি আর আনমনে গেয়েছি, "কিন্তু তিলে তিলে, অসহ জ্বালা সয়ে/ খোদারও রঙে, জীবন রাঙ্গানো/ নয় তো সহজ তুমি মানো কি?"


মন হাতড়ে ফিরেছে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগের মক্কা-মদিনার অলি-গলি-পথ-প্রান্তর। আজ যখন চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজমান এবং দূর দূরান্তে কোথাও একটা স্ফূলিঙ্গ পর্যন্ত জ্বলতে দেখা যাচ্ছে না, তখন পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, রাসূল (সা.) এর হাতে একটি মশাল জ্বলছে এবং তা সাড়ে চৌদ্দ'শ বছর ধরে হাজারো ঝড় ঝঞ্ঝায় একইভাবে জ্বলে আসছে। প্রবল উচ্ছ্বাসে হত-বিহবল হয়ে রাসূল (সা.) নামক বিশাল গ্রন্থটির এক একটি অধ্যায়ে চোখ বুলিয়েছি আর বিস্ময়াভিভূত হয়েছি।


এই মহামানবের হাতে নির্মিত বাগানের পুষ্পগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। একটি মাত্র সত্য কালেমার উচ্চারণ কী করে তাঁদের ভিতর বাহির একই রকম নৈপুণ্যে বদলে দিলো! কী বিস্ময়করভাবে তাঁদের জীবনে সংঘটিত করলো আমূল পরিবর্তন। প্রবৃত্তির দাসানুদাস বর্বর মানুষগুলো যেন অকস্মাৎ কোথায় মিলিয়ে গেলো এবং সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে আবির্ভূত হলো একদল আল্লাহভক্ত সৎ মানুষ।


এই সৎ মানুষগুলোর চরিত্রের ঔজ্জ্বল্যে চোখ যেন ঝলসে যায়। হযরত উমর ছিলেন মক্কার এক উচ্ছৃঙ্খল মদখোর যুবক- তাঁর জীবনে যখন পরিবর্তন এলো, তখন কেমন পরিবর্তন এলো তা ভেবে দেখুন তো! আব্দুল্লাহ যুলবাজাদাইনের পরিবর্তন নিয়ে ভেবেছেন কি কখনও? নিজের আয়েশী জীবনের মূলে পদাঘাত করে বেছে নিলেন এক দরবেশী জীবন। কিংবা মুসয়াব ইবনে উমায়েরের কথাই ভাবুন না! বাবা- মায়ের আদরের এ দুলাল কোন সে আকর্ষণে বেছে নিলেন ছিন্ন বস্ত্রের জীবন, রক্ত, হাত কর্তন, শাহাদাত!


পথে হাঁটতে হাঁটতে আমি ভেবে চলেছি এসবই। যে কালেমার বিপ্লবী মন্ত্রে বদলে গিয়েছিলেন তাঁরা, সেই কালিমা তো এখনও আমাদের সামনে জ্বলজ্বলমান। অথচ কী যেন হয়েছে! আমরা বদলাতে পারছি না। যে ঈমানের জ্যোতিতে তাদের মুখমণ্ডল ঝকমক করতো, সেই ঈমানের দৈন্যতায় আমাদের মাথা নিচু করে রাখতে হচ্ছে। যে ঐন্দ্রজালিক আকর্ষণে তাঁরা বাসরশয্যাকে তুচ্ছ করে ছুটে যেতেন যুদ্ধের ময়দানে, সেই দৈব আকর্ষণ হারিয়ে আমাদের প্রজন্মকে দাঁড়াতে হচ্ছে ধর্ষণের কলঙ্ক নিয়ে! কেন বলুন তো?

পঠিত : ৩৫৯ বার

মন্তব্য: ০